ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ধর্ষ প্রোটিয়াদের সামনে পুঁচকে আমিরাত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ মার্চ ২০১৫

দুর্ধর্ষ প্রোটিয়াদের সামনে পুঁচকে আমিরাত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্ধর্ষ, বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট, কারও সন্দেহ নেই। আসর শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় প্রোটিয়ারা। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আসরের জন্য তাদের মানসিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৫ খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘বি’ থেকে ইতোমধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে দ. আফ্রিকা। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের কাছে যে দুটি ম্যাচ হেরেছে, প্রশ্ন সেটি নিয়েই। বিশেষ করে অকল্যান্ডে পাকিদের ২৩২ রানের জবাব দিতে গিয়ে ২৯ রানের হার! আমিরাতের সঙ্গে আজকের ম্যাচে এবি ডি ভিলিয়ার্সের লক্ষ্য, নিজেদের প্রমাণ করা। পুঁচকে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ‘হট-ফেবারিটের’ তকমাটা পুনরুদ্ধার করতে চান প্রোটিয়া সেনাপতি। অন্যদিকে ৪ খেলার সবটিতে হারা আমিরাতের হারানোর কিছু নেই, ভাল ক্রিকেট খেলার প্রত্যয় অধিনায়ক মোহাম্মদ তৌকিরের কণ্ঠে। নিজেদের দুর্ধর্ষ চেহারা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং প্রতিটি বিভাগ বাজিয়ে দেখার সুযোগ প্রোটিয়াদের সামনে। দুর্বল সংযুক্ত আরব আরিমাতের বিপক্ষে আজ তাই অপেক্ষমাণ খেলোয়াড়দের একাদশে রাখতে পারেন নির্বাচকরা। ইনজুরি থেকে প্রায় সেরে ওঠা ভারনন ফিল্যান্ডার, ইমরান তাহিরের পরিবর্তে এ্যারন ফাঙ্গিসো। ডুপ্লেসিকের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর পরিবর্তে ফারহান বিহারদিয়ানকে দেখা যেতে পারে। মূল পেসার ডেল স্টেইনকে বিশ্রামে রাখলে স্ট্রাইকিংয়ের ভূমিকায় দেখা যাবে কাইল এ্যাবটকে। ডি’কক পুরোপুরি ফিট থাকলে বিশ্রাম পেতে পারেন নতুন মারকাটারি ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো! প্রোটিয়া ম্যানেজমেন্টের বরাত দিয়ে এমন খবরই প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকান মিডিয়া। সব মিলিয়ে শক্তির মহড়া দেয়ার পাশাপাশি আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচটি প্রোটিয়াদের জন্য দলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্র। আসরে টিম সাউদি, ট্রেন্ড বোল্ট, মোহাম্মদ সামিরা যেখানে বল হাতে আলো ছড়াচ্ছেন, সেখানে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর পেস আক্রমণ নিয়েও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় দ. আফ্রিকা। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ দিকে লাইন-লেন্থ ঠিক রাখতে পারছেন না তারা। সুতরাং আজ টস জিতলে ফিল্ডিং নিয়ে শুরুতেই বোলারদের বাজিয়ে দেখতে চাইবেন ডি ভিলিয়ার্স। ‘বোলিংয়ের ক্ষেত্রে দু-একজন পার্ট-টাইমারকে দিয়ে বাকি ওভার করাতে পারলে সেটা দারুণ হবে। কারণ কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের এটা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। বিশ্বকাপে ডেথ-ওভারে এখনও পর্যন্ত আমরা নিজেদের মতো বোলিং করতে পারিনি।’ বলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। টসে হেরে ব্যাটিং পেলেও হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সেই ইঙ্গিত দিয়ে ডি ভিলিয়ার্স আরও যোগ করেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ লাড়াইয়ের আগে আমরা কয়েক ব্যাটসম্যানকে রানের মধ্যে দেখতে চাই।’ বলেন তিনি। বিশেষ করে ওপেনার কুইন্টন ডি’কক এখনও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। আর রাইলি রুশে ও ফারহান বিহারদিয়ানের মধ্যে কোয়ার্টারে ঠিক কাকে খেলানো হবে সেটিও ঠিক করে নিতে চায় তারা। রান তাড়া করে, বিশেষ করে চাপের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাকিস্তান ম্যাচে হেরে যাওয়ায় সেটি আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় হয়ত একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতে পারে তারা। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ব্যাটিং সামর্থ্যরে স্বাক্ষর রাখে প্রোটিয়ারা। ৪০৮ রানের পাহাড় গড়ার পর ক্যারিবীয়দের ১৫১ রানে গুটিয়ে দিয়ে তুলে নেয় রেকর্ড ২৫৭ রানের জয়! ফর্মের তুঙ্গে আছেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স, ওপেনার হাশিম আমলা, ডেভিড মিলাররা। অন্যদিকে ভারতের কাছে ৯ উইকেট ও পাকিস্তানের কাছে ১২৯ রানের বড় ব্যবধানে হারলেও বিশ্বকাপে আমিরাত শুরুতে ভাল ক্রিকেট খেলেছে জিম্বাবুইয়ে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। লড়াই করে হারে ৪ ও ২ উইকেটে। বিশেষ করে তাদের ব্যাটিং লাইন আসলেই ভারসাম্যপূর্ণ। যেখানে বড় নাম শাইমান আনোয়ার। প্রতিটি দলের চারটি করে ম্যাচ শেষে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহক ছিলেন তিনি! ১ সেঞ্চুরি ও ২ সেঞ্চুরিতে তার মোট রান ২৭০, গড় ৬৮। বড় ম্যাচেও আজ তার দিকে তাকিয়ে আমিরাত। অধিনায়ক তৌকির যেমন বলেন, ‘আনোয়ারকে আবার শীর্ষে দেখার জন্য মুখিয়ে আছি!’ রেকর্ড ৪ সেঞ্চুরিতে ৪৯৬ রান নিয়ে সবার ওপরে এখন লঙ্কান তারকা কুমরা সাঙ্গাকারা। ৩৯৫ রান নিয়ে তিলকারতেœ দিলশান দ্বিতীয় ও ৩৩৩ রান করে ভারতের শিখর ধাওয়ান আছেন তৃতীয় স্থানে। ‘বাকি দুই ম্যাচে আমরা ভাল কিছু করতে চাই। আমাদের সেই সামর্থ্য রয়েছে। প্রয়োজন কেবল সবাইকে একসঙ্গে জ্বলে ওঠা।’ যোগ করেন তৌকির। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে দু’দল এ পর্যন্ত একবারই মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৯৯-এ গ্যারি কার্স্টেনের অতিমানবীয় সেই ১৮৮ রানে ভর করে আমিরাতকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল প্রোটিয়ারা। এবার ক্রিস গেইল ২১৫ রান করার আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপের রেকর্ড ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস হিসেবে টিকে ছিল সেটি!
×