ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগ সরব জাপার প্রস্তুতি বিএনপি নীরব

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ মার্চ ২০১৫

আওয়ামী লীগ সরব জাপার প্রস্তুতি বিএনপি নীরব

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা সিইসির পক্ষ থেকে আসার পর এ দুই নগরীর মানুষ এখন নির্বাচনী আলোচনায় মুখর। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন একই সময়ে নাকি পৃথক সময়ে হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে আগামী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণের ইঙ্গিত আসা শুরু হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে এসব দলের অবস্থান কী হবে এখনও তা পরিষ্কার নয়। ১৪ দলীয় জোটের পক্ষে আওয়ামী লীগ সরব। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে যিনি মেয়রপদে প্রার্থী হবেন সেই সোলায়মান আলম শেঠ বুধবার জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। পক্ষান্তরে, অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবস্থান চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কী হবে, তা এখনও সম্পূর্ণ রহস্যাবৃত। এ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম ছাড়া সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা মামলা ও হুলিয়ার কারণে গাঢাকা দিয়ে রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন অন্যতম। তিনি ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-কর্মসূচী শুরুর আগ পর্যন্ত বরাবরই বলে এসেছেন আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি দলের পক্ষে মেয়রপদে প্রার্থী হবেন এবং তাঁর পক্ষে রয়েছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পক্ষান্তরে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলমও আগেই ঘোষণা দিয়েছেন দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেলে তিনিও এ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। তবে এ পর্যন্ত কোন ধরনের সিগন্যাল না এলেও মাঠপর্যায়ে মনজুর আলম তাঁর প্রার্থিতার পক্ষে গ্রাউন্ডওয়ার্ক বহু আগে থেকেই শুরু করে তা অব্যাহত রেখেছেন। ডাঃ শাহাদাত হোসেনেরও প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু অবরোধ-হরতালে নেতৃত্বে দিতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের আসামি হয়ে তিনি এখন গাঢাকা দিয়ে আত্মরক্ষা করে চলেছেন। তবে দলের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির অংশগ্রহণ থাকলে চট্টগ্রামেও এর অন্যথা হবে না। সেক্ষেত্রে ডাঃ শাহাদাত হোসেন তাঁর প্রার্থিতার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এ নির্বাচন নিয়ে অনেকে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার কথাও আলোচনায় এনেছেন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেনÑ সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খন্দকার। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান যে, তাঁরা এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নন। কেননা এ নির্বাচন নিয়ে তাঁদের কোন গ্রাউন্ডওয়ার্ক ও সাংগঠনিক তৎপরতাও নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রধান আকর্ষণ মেয়রপদে ১৪ দলীয় জোটের পক্ষে সরব অবস্থানে চলে গেছে আওয়ামী লীগ। মেয়রপ্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে ঘুরেফিরে বার বার যাঁদের নাম আসছে তাঁরা হলেনÑ সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ এবং চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তবে এর পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসির নামও আলোচিত হয়ে থাকে। তাঁর নামে কিছু ব্যানার পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর গ্রাউন্ডওয়ার্ক তৎপরতা প্রমাণ করে না যে তিনি এ পদে প্রার্থী হবেন। এসব প্রার্থীর সকলের মুখে যুগপৎভাবে ঘোষিত হয়েছেÑ দলীয় সভানেত্রী যাঁকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেবেন তিনিই এ পদে লড়বেন এবং সকলে সভানেত্রী মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য মাঠে থাকবেন। গত ৮ মার্চ চট্টগ্রাম ১৪ দলীয় জোট সভা আহ্বান করে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আগামী মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাঁরা বিবৃতি দিয়ে এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছেন। এরপর গত মঙ্গলবার দলের আহূত বর্ধিত সভায় প্রার্থিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উঠে এলেও শেষপর্যন্ত এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তবে সভা শেষে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির যুগপৎভাবে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ এবং এককভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করবে। তাদের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা কোন্দল নেই। এ বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেলে লালদীঘি মাঠসংলগ্ন এলাকায় মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোডাউন প্রদর্শন করা হয়। এর আগে ওই দিন সকালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে আয়োজিত হয় বিরাট মেজবান। মেজবানের শুরুতে দুপুরের আগেই মহিউদ্দিন চৌধুরী দলীয় শীর্ষনেতাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁদের সকলকে জানিয়ে দেন যে, তিনি আগামী নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হবেন এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এরপরই বিকেলে বর্ধিত সভায় যোগ দেন। বর্ধিত সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির ছাড়া আর কাউকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি। বৈঠক শেষে দুই নেতা হাত উঁচিয়ে ভি চিহ্ন প্রদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান দিয়েছেন প্রার্থিতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে। তবে তাঁরা এক ও অভিন্ন হয়ে এ নির্বাচনে কাজ করবেন। দলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, যুগ্মসম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ডাঃ আফসারুল আমীন ও কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দলের কোন বৈঠকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছেন। তবে পত্রপত্রিকায় মহিউদ্দিন চৌধুরীবিরোধী বিবৃতি দিয়ে সরব অবস্থানে রয়েছেন, যা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার ডালপালা বিস্তার করে চলেছে। উল্লেখ্য, মহিউদ্দিন চৌধুরী বুধবার রাতে ওমরা হজ পালনের জন্য সস্ত্রীক সৌদি আরব গেছেন। আগামী ১৪ মার্চ বিকেলে তাঁর চট্টগ্রামে ফিরে আসার কর্মসূচী রয়েছে। জানা গেছে, ওই দিন তাঁর পক্ষে তাঁর অনুসারীরা বড় ধরনের একটি শোডাউনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দান পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে এ শোডাউন অনুষ্ঠিত হবে। এটা নির্বাচনপূর্ব মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেয়রপ্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তা হিসেবে নগরবাসীকে জানান দেয়ার পরিকল্পনা বলে দলীয় সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানানো হয়েছে। দলের পক্ষে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক আ জ ম নাছির উদ্দিন এ নির্বাচন নিয়ে তাঁর সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ কথাও বলেছেন, দলের পক্ষ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হলে তিনি মনেপ্রাণে কাজ করবেন। কারণ তাঁদের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই। সঙ্গত কারণে প্রার্থী যিনিই হোন না কেন আগামী চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামগ্রিক তৎপরতা ইতোমধ্যে বহুদূর এগিয়ে গেছে। কেন্দ্রীয়পর্যায়ে সমর্থন ঘোষণার পর্বটি শুধু অবশিষ্ট রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম সফরে এসে কয়েকজন নেতার প্রশ্নের উত্তরে জানান দিয়ে গেছেন, স্থানীয় পর্যায় থেকে যাঁর নাম চূড়ান্ত করা হবে তিনি তা বিবেচনা করবেন। আরও জানা গেছে, মহিউদ্দিন চৌধুরী গেল চারবারের মতো এবারও নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়রপ্রার্থী পদে নির্বাচন করার যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী নগর কমিটির ওয়ার্কিং ও বর্ধিত সভার সমর্থন নিয়েই তিনি দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তা পৌঁছাবেন। অপরদিকে, তৃতীয় প্রার্থী আবদুচ ছালামের ব্যাপক আশা তিনি এবার মেয়রপদে প্রার্থী হবেন। এ জন্য তিনি উঠোন বৈঠক থেকে শুরু করে যাবতীয় সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়মিতভাবে করে চলেছেন। তবে এ কথা সত্য যে, তাঁর বিরুদ্ধে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন এককাট্টা হয়ে কাজ করে চলেছেন। তার পক্ষে ডাঃ আফসারুল আমীনের নীরব সমর্থন প্রতীয়মান। আর নুরুল ইসলাম বিএসসি এ নিয়ে একাই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে তৎপর। তাঁর পক্ষে দূতিয়ালি করার জন্য তিনি কারও শরণাপন্ন নন।
×