ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চেই নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১২ মার্চ ২০১৫

মার্চেই নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারত-দু’দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় আসছে প্রথম কোন আসামি। আর এ আসামি সম্ভবত নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার অন্যতম আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন। চলতি মার্চ মাসের মধ্যেই তাকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। চার্জশীট চূড়ান্ত। নূর হোসেন ফিরে এলেই চার্জশীট দেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, চলতি মার্চ মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নূর হোসেনকে হস্তান্তরের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে নয়াদিল্লীতে। চিঠিতে তাকে হস্তান্তরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার বিষয়টি অবহিত করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসারের কাছে নূর হোসেনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে হস্তান্তর করা যেতে পারে তাকে। গত বছরের জুনে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে নূর হোসেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাকে। পশ্চিমবঙ্গের দমদম কারাগারে আটক আছেন নূর হোসেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ভারত এর আগে নূর হোসেনকে কোথায় কোন প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা যায় সে বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের চিঠির জবাবে সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বেনাপোল সীমান্ত এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম জানানো হয়েছে। এখন আবার ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের চিঠির জবাব এলেই আসামির হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। নূর হোসেনকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারী করা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, ভারতর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সে দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চিঠি চালাচালিসহ আলাপ-আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ কর্মকর্তারা। নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রথম থেকেই সদিচ্ছা দেখিয়ে আসছে ভারত সরকার। নূর হোসেনের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলাই আছে কলকাতায়। এ মামলার শাস্তির মেয়াদ শেষে তিনি স্বেচ্ছায় ফিরে না এলে তাকে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনা হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নূর হোসেনের মামলা যে আদালতে চলছে, সে আদালতের আদেশের ওপরও নির্ভর করছে তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি। গত বছর ১৪ জুন কলকাতায় দুই সঙ্গীসহ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হন নূর হোসেন। গত ১৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ চার্জশীট দেয়। এ পর্যন্ত কোন আইনজীবী নিয়োগ না দিয়ে দেশে ফিরে না আসার কৌশল নিয়েছে নূর হোসেন। তার সঙ্গে আটক হওয়া একসঙ্গী ইতোমধ্যেই আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু নূর হোসেনের আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২৭ এপ্রিল সাত খুনের ঘটনার পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। কলকাতায় তার গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর গত জুন মাসে ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুসারে ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানানো হয় দিল্লীকে। দিল্লী গত ডিসেম্বরে ফিরতি চিঠি দিয়েছে।। চলতি মার্চে চিঠির উত্তর দিয়েছে ঢাকা। এখন ঢাকা আবার দিল্লীর চিঠির উত্তরের অপেক্ষায়। দিল্লী থেকে চিঠির উত্তর এলেই ঢাকার পক্ষ থেকে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হওয়ার পর নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো কোন আসামিকে ফিরিয়ে আনার রেকর্ড হবে। চার্জশীটের অপেক্ষা ॥ সাত খুনে দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ র‌্যাব সদস্যসহ ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছে। ১৬৪ ধারায় আদালতে ১৭ র‌্যাব সদস্যসহ ১৯ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে র‌্যাবের শীর্ষ র্পযায়ের ৩ র্কমর্কতাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া ১৪ র‌্যাব সদস্যসহ ১৯ জন আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছে। বুধবার নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট এইচ এম শফিকুল ইসলামের আদালতে মামলার নির্ধারিত হাজিরার দিনে আদালতে হাজির করা হয় মামলার আসামি র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফুর রহমান, এম এম রানাসহ ৩০ আসামিকে।
×