ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশীকে দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ মার্চ ২০১৫

লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশীকে দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশী নাগরিককে দ্রুত উদ্ধারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানকার সকল বাংলাদেশী নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতেও বলা হয়েছে। তবে লিবিয়ায় অপহৃত দুই বাংলাদেশী নাগরিককে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীরা অপহরণ করেছে বলে ধারণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন্ সশস্ত্র গ্রুপ অপহরণ করেছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার। এদিকে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, লিবিয়ার উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় সিরাত শহরে একটি তেল খনিতে হামলা চালিয়ে নয়জনকে অপহরণ করে সেখানকার কোনও একটি সশস্ত্র জঙ্গী গ্রুপ। এর মধ্যে দুইজন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন। লিবিয়া আইএসসহ বেশ কয়েকটি সরকারবিরোধী সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। তবে কোন গ্রুপ বাংলাদেশী নাগরিককে অপহরণ করেছে, এ সম্পর্কে নিশ্চিত নয় ত্রিপোলির দূতাবাস। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সিরাত শহরের তেল খনিতে হামলা চালিয়ে যে নয়জন নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশী রয়েছে। তাদেরকে আইএস জঙ্গীরা অপহরণ করেছে বলেও জানানো হয়। তবে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, অপহৃত নয় নাগরিকের মধ্যে আরও একজন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন। তাই অপহৃত বাংলাদেশী নাগরিকের সংখ্যা দুইজন। তবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশী নাগরিককে প্রকৃতপক্ষে কোন সশস্ত্র গ্রুপ অপহরণ করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আইএস ছাড়াও অন্য জঙ্গী গ্রুপও তাদেরকে অপহরণ করতে পারে। এদিকে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, অপহৃত বাংলাদেশী নাগরিককে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে উদ্ধার করতে পারেনি দূতাবাস। ত্রিপোলির দূতাবাস জানায়, অপহৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ফিলিপিন্সের নাগরিক রয়েছে। তাই লিবিয়ার বাংলাদেশ ও ফিলিপিন্স দূতাবাস নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের একযোগে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লিবিয়ায় এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ৩৩ হাজার নাগরিক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন। এখনই এ সব নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ভাবছে না সরকার। তবে সেখান থেকে সব নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ত্রিপোলির দূতাবাসকে দুই বাংলাদেশী নাগরিককে দ্রুত উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। লিবিয়ার সিরাত শহরে শুক্রবার একটি তেল খনিতে হামলা চালিয়ে নয়জনকে অপহরণ করে জঙ্গীরা। সিরাত শহরের দক্ষিণে আল গানি তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে বন্দুকধারীরা ওই নয়জনকে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হেলাল উদ্দিন। তার বাড়ি জামালপুরে। লিবিয়ায় অপহৃত অপর বাংলাদেশীর নাম মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তার বাড়ি নোয়াখালী। তবে আনোয়ারকে প্রথমে সুদানের নাগরিক বলে ভাবা হলেও পাশের আরেকটি তেলক্ষেত্রের এক নাগরিকের মাধ্যমে অপহৃত এ বাংলাদেশীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। লিবিয়ায় আল গানি তেলক্ষেত্রে আইএস বন্দুকধারীদের হামলা চালানোর পরে ২১ বাংলাদেশী নাগরিককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আরও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা ওই তেল খনির দায়িত্বে থাকা কোম্পানি ভিএওএস এবং লিবিয়ার ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গীগোষ্ঠীর হাতে কোন বাংলাদেশী জিম্মি হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় দুটি বিবাদমান পক্ষ বেশ কিছুদিন ধরে আল গানি তেলক্ষেত্র এলাকা দখলে নেয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে আসছে। এর সুযোগ নিয়ে শুক্রবার আইএস জঙ্গীরা ওই তেলক্ষেত্রে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। ইসলামী জঙ্গীরা ওই তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে ১১ জন নিরাপত্তারক্ষীকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের ধর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ওই তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর নয় জন কর্মীর অপহৃত হওয়ার বিষয়টি জানা যায়। অপহৃতদের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়া, বাংলাদেশ ও ফিলিপিন্সের কর্মী রয়েছেন। গত বছর ইরাক ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বড় একটি এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে খিলাফত কায়েমের ঘোষণা দেয় আইএস, যার মধ্য দিয়ে নতুন করে বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদের উত্থানের শঙ্কা তৈরি হয়। সিরিয়া ও ইরাকে এই জঙ্গী দলটির হাতে নিহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মিসর, জর্ডান ও তুরস্কের অর্ধশতাধিক নাগরিককে জিম্মি করার পর তাদের শিরোñেদ করে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশ করেছে এ সন্ত্রাসীরা। জর্ডানের এক পাইলটকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার পরও তারা একই কাজ করেছে। এ সব ঘটনায় জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে সাধারণত নিজেদের বন্দী সদস্যদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে আইএস। তবে জাপানী জিম্মিদের ক্ষেত্রে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। বাংলাদেশী দুই নাগরিককে আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী অপহরণ করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×