ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী জিহাদীরা সিরিয়ায় ঢুকছে অলক্ষ্যে

আইএস রুখতে অনিচ্ছুক তুরস্ক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১২ মার্চ ২০১৫

আইএস রুখতে অনিচ্ছুক তুরস্ক

পশ্চিমা মিত্রদের চাপের মুখে তুরস্ক তার দেশের সম্ভাব্য জিহাদীদের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্তর সিরিয়ার ঘাঁটিতে দলটির যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়া কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু তুরস্ক জিহাদীদের দলে দলে সিরিয়ায় গমন বন্ধ করতে অসমর্থ বা অনিচ্ছুকই রয়ে গেছে। আর আইএস লড়াইয়ে হারানো যোদ্ধাদের শূন্যস্থান নতুন যোদ্ধাদের দিয়ে পূরণ করে চলেছে। সীমান্ত গ্রামগুলোর কারবারিরা জানায়, আইএস মৃত্যুর বা রুজি রোজগার বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের জিহাদীদের পার করিয়ে দিতে বাধ্য করে। তারা পেস্তা বাদাম, চিনি, সিগারেট ও জ্বালানি সীমান্তের মধ্য দিয়ে চালান করে দীর্ঘদিন ধরে জীবিকা উপার্জন করে এসেছে। কখনও কখনও তারা গভীর রাতেও সিরিয়ার ভেতরকার কোন আইএস কমান্ডারের কাছ থেকে ফোন পেয়ে থাকে। এতে তাদের তুরস্কের গার্ডিয়ান শহরের কোন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থানরত কোন রিক্রুটকে সেখান থেকে পাহারা দিয়ে নিয়ে এসে সীমান্ত পার করিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। এক চোরাকারবারি জানায়, তুরস্ক সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করার কাজকর্ম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মোস্তফা নামে পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি সীমান্তবর্তী এক শহর কিসিমের এক কাফেতে এক সাক্ষাতকার দিচ্ছিল। সে বলে, এর মধ্যেও সে কোন না কোন পথ খুঁজে পায়। কখনও কখনও তার পরিচিত তুর্কি সীমান্তরক্ষীরা দেখেও না দেখার ভান করে। তুরস্কের ক্রমবর্ধমান চাপের অর্থ ২০১২ সালের কর্মব্যস্ত দিনগুলো আর নেই। লম্বা দাঁড়িওয়ালা বিদেশী জিহাদীরা এক সময়ে সীমান্ত শহরগুলোর কাফে ও রাস্তাঘাটে চষে বেড়াত। কিন্তু এখন তারা লোকচক্ষুর আড়াল থেকে নীরবে তুরস্কের ভেতর দিয়ে সিরিয়ায় ঢুকে পড়ছে। সামরিক জিনিসপত্রের দোকানগুলোতে এক সময়ে সিরিয়াগামী বিদেশীদের কাছে প্রকাশ্যেই ইসলামপন্থী সেøাগান ছাপা কালো হেডব্যান্ড, বডি আরমার ও অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা হতো। কিন্তু এখন তাদের ব্যবসা কালোবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার বিদেশী আইএসে যোগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার ৪শ’ পশ্চিমা। ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের ডিরেক্টর নিকোলাস রাসমুসেন এ তথ্য জানান। তাদের বেশিরভাগই তুরস্কের ভেতর দিয়ে সিরিয়ায় যায়। এতে পথবহুল এক সীমান্তে টহল দেয়ার সমস্যা এবং কর্মকর্তাদের দ্বিধা উভয়ই প্রকাশ পেয়েছে। কারণ তারা আইএসকে বড় শত্রু হিসেবে দেখে না। তুরস্ক জিহাদীদের সিরিয়ায় অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে সম্প্রতি কিছু ব্যবস্থা নিলেও এগুলোর কোনটিই তুরস্কের পশ্চিমা বিশেষ ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে যথেষ্ট কার্যকর বলে গণ্য হয়নি। তারা প্যারিসের ব্যঙ্গ পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে জানুয়ারির হামলার পর জঙ্গীরা ফিরে এসে হামলা চালাতে পারে বলে ক্রমশই উদ্বিগ্ন। এ ইস্যুটি তুরস্ক ও এর পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে মতপার্থক্য বেড়ে যাওয়া স্পষ্ট করে তোলে। তুরস্ক কেন জিহাদীদের হুমকি দূর করতে আরও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তারা প্রায়ই এ প্রশ্ন তুলেছে। কারণ তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং এর এক বিশাল সেনাবাহিনী ও সুদক্ষ গোয়েন্দা সার্ভিস রয়েছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে কংগ্রেসে সাক্ষ্যদানকালে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জেমস আর ক্ল্যাপার জুনিয়রকে তুরস্ক আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশাবাদী কিনা- এ প্রশ্ন করা হয়। ক্ল্যাপার বলেন, না; আমি আশাবাদী নই। আমি মনে করি তুরস্কের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও স্বার্থ রয়েছে। এটি স্পস্ট ভাষায় তুরস্কের সমালোচনা। ক্ল্যাপার তুরস্কের পরিচালিত জনমত সমীক্ষার ফলাফল উদ্বৃত করে বলেন, তুর্কীরা আইএসকে কোন বড় হুমকি বলে দেখে না বলে এতে দেখা যায়। দৃষ্টান্ত দিতে গেলে, তুর্কীরা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়ে সিরিয়াতে কুর্দীদের স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করতেই বেশি উদগ্রীব। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×