ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইরিশদেরও উড়িয়ে দিল ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ মার্চ ২০১৫

আইরিশদেরও উড়িয়ে দিল ভারত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে ছুটছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের জয়রথ। কাল আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টানা পঞ্চম জয় তুলে নিয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। আসরের অন্যতম চমক-আইরিশদের সঙ্গে অনেকটা প্র্যাকটিসের মুডে খেলেই সাফল্য অব্যাহত রাখল তারা! হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ৪৯ ওভারে ২৫৯ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। জবাবে শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরি ও রোহিত শর্মার হাফ সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৩৬.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১০ পয়েন্ট নিয়ে পুল ‘বি’এর শীর্ষে তারা। শনিবার নিজেদের শেষ ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে। সমান খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শুরু করেছিল আইরিশরা। সেদিন ক্রিকেট বিশ্বকেই ভড়কে দিয়েছিল তারা। আরব আমিরাত ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও সাফল্য। তিন জয়ে কোয়ার্টারের রেসে থেকেই কাল চ্যাম্পিয়নদের মোকাবেলায় নামে আয়ারল্যান্ড। ২৫৯ রানের পুঁজি গড়ার পর তাই অনেকেই নড়েচড়ে বসেছিলেন। ভেবেছিলেন হারার আগে হারবেন না উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডরা অথচ নিজেদের ব্যাটিং শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখে সেটিকে মামুলি বানিয়ে ফেললেন ভারতীয়রা! ১৩ ওভার ১ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে আরামসে জয় তুলে নেয় চ্যাম্পিয়নরা। শুরু থেকেই আইরিশ বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই ওপেনার। রোহিত শর্মা-শিখর ধাওয়ান মিলে যোগ করেন ১৭৪ রান। বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ওপেনিং জুটিতে সর্বাধিক রানের নতুন রেকর্ড এটি। আগের যেটি ছিল দুই সাবেক তারকা শচীন টেন্ডুলকর ও অজয় জাদেজার ১৬৪Ñ ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে এই রান করেছিলেন তাঁরা। ১৪০ বল স্থায়ী জুটিতে রোহিতের অবদান ৬৪। ৬৬ বলের ইনিংস ৩ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো। এর মধ্য দিয়ে ১৪তম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন রোহিত। ৫ ও ১০ রানে দুই-দুইবার জীবন পাওয়া ধাওয়ান ফেরেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই। ৮৫ বলে খেলা মারকাটারি ওপেনারের ১০০ রানের ইনিংসটি ১১টি চার ও ৫টি ছক্কা দিয়ে সাজানো। এটা বিশ্বকাপে তাঁর দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা-বধের সেই ম্যাচে ১৩৭ রান করেছিলেন ধাওয়ান। দলীয় ১৯০ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর জয়ের পথে বাকি কাজটুকু সারতে এতটুকু বেগ পেতে হয়নি অজিঙ্কা রাহানে ও বিরাট কোহলিকে। কোহলি ৪২ বলে ৪৪ ও রাহানে ২৮ বল ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। আয়ারল্যান্ডের হয়ে দুটি উইকেটই নেন স্টুয়ার্ট থম্পসন। তার আগে টস জিতে ব্যাট হাতে নামা আইরিশদের ব্যাটিংটা একেবারে মন্দ ছিল না। যদিও সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও শেষ পর্যন্ত খুব বড় স্কোর গড়তে পারেনি তারা। শুরুর দাপট ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতাতেই ৩০০ পেরোতা পারেনি আয়ারল্যান্ড। ঘুরিয়ে বললে, ভারতীয় বোলাররা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে দেননি। পোর্টারফিল্ড-পল স্টারলিংয়ের দারুণ ওপেনিং জুটিই ভাল সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। দু’জনে মিলে যোগ করেন ৮৯ রান, বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে শীর্ষ আট দেশের বিপক্ষে যা আইরিশের সর্বোচ্চ। এর পর নেইল ও’ব্রায়েন-পোর্টারফিল্ড ৫৩, নেইল ও’ব্রায়েন-এ্যান্ডি বালবির্নির মধ্যে চতুর্থ উইকেটে ৬১ রানের চমৎকার জুটির পরও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর ফলে প্রত্যাশিত বড় সংগ্রহ পায়নি তারা। অধিনায়ক ও বড় তারকা পোর্টারফিল্ড ৬৭, নেইল ও’ব্রায়েনের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৭৫ রান। অভিজ্ঞ স্টারলিংয়ের ব্যাট থেকে আসা ৪১ বলে ৪২ রানের ইনিংসটিও ছিল চিত্তাকর্ষক। বালবির্নি ফেরেন ২৪ রান করে। ২০৫/৩- থেকে ২৫৯/১০ শেষ ৫৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে সম্ভাবনা শেষ করে আইরিশরা! দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে সাফল্য তুলে নেন প্রধান স্ট্রাইক বোলার মোহাম্মদ শামি। ও’ব্রায়েন ভ্রাতৃদ্বয়কে সাজঘরে পাঠান এই পেসার। তিনি নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। পাশাপাশি উইমেশ যাদব, মোহিত শর্মা, রবিন্দ্র জাদেজা ও সুরেশ রায়ান প্রত্যেকের শিকার ১টি করে উইকেট। ম্যাচ শেষে বোলারদের ভূমিকাকেই বড় করে দেখেন ধোনি। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘টুর্নামেন্টে আমাদের বোলিং ভাল হচ্ছে। পাঁচ ম্যাচে ৫০ উইকেট তুলে নিয়েছি আমরা। এটা দারুণ ব্যাপার। পেসাররা যেমন ভাল করছে, তেমনি প্রয়োজনে স্পিনাররাও সাহায্য করছে। সব মিলিয়ে দলের খেলায় সন্তুষ্ট আমি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বকাপের আসল লড়াইটা শুরু কোয়ার্টার থেকে।’ সেঞ্চুরিয়ান শিখর ধাওয়ানের প্রশংসা করেন তিনি। অন্যদিকে হারের জন্য নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতাকে দায়ী করেন আইরিশ অধিনায়ক পোর্টারফিল্ড। অন্তত ৩০০ রান হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। এ নিয়ে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে ১২টি জয় নিয়ে কপিল দেবকে (১১) টপকে গেলেন ধোনি। বিশ্বকাপে ভারতের এটি টানা ৯ম জয়, ১৯৯৯-২০১১ পর্যন্ত টানা ২৫ জয়ে এ তালিকায় সবার ওপরে অস্ট্রেলিয়া!
×