ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এফবিআই আলামত সংগ্রহ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বন্যার সাক্ষাতকার নেবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১১ মার্চ ২০১৫

এফবিআই আলামত সংগ্রহ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বন্যার সাক্ষাতকার নেবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্লগার ও লেখক মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অভিজিত রায় হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার সাক্ষাতকার নেবে আমেরিকার ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই। অভিজিত রায়কে যখন চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তখন তার পাশে থাকা স্ত্রী ডা. রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। চাপাতির কোপে তার বাম হাতের একটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার দুদিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন খুন হওয়া অভিজিতের স্ত্রী ডা. বন্যা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বন্যার বাম বৃদ্ধাঙ্গুলের প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। সেখানেই তার সাক্ষ্যগ্রহণ করবে এফবিআই। ঢাকায় সফররত চার সদস্যের এফবিআই সদস্যরা এখানে যেসব আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তার সঙ্গে বন্যার সাক্ষ্য মিলিয়ে দেখা হবে। ছেলে অভিজিত হত্যাকা- তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দারা বাবা অজয় রায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে গত শনিবার তাদের কার্যালয়ে যান তিনি। তারা অভিজিতের বিষয়ে কিছু তথ্য মিলিয়ে নিয়েছেন। যেমন পুরো নাম, কতদিন ধরে দেশের বাইরে আছেন, যখন হামলা হয়েছিল ঠিক তখন অভিজিতের স্ত্রী তার সঙ্গে ছিলেন কিনা, ইত্যাদি। অভিজিতকে হত্যার পেছনেও ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন তার বাবা অজয় রায়। এসব তথ্যের সঙ্গে বন্যার সাক্ষাতকার নিয়ে যে তথ্য পাওয়া যাবে তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে এফবিআই। ডিবি কর্মকর্তারা এফবিআই সদস্যদের জানিয়েছেন, অভিজিত হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের নির্দেশে বিদেশ থেকে দায় স্বীকার করে টুইটারে টুইট করা হয় ‘আনসার বাংলা-৭’ জঙ্গী সংগঠনের নামে। অভিজিত খুন হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শফিউর রহমান ফারাবীর ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে আসা একটি কমেন্ট শেয়ারে অভিযুক্ত হন। ওই কমেন্টে বলা হয়, ‘অভিজিত রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।’ এর আগে ফারাবী বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে অভিজিত রায়ের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন। ফেসবুকের এসব কমেন্ট, টুইটারের টুইট, ব্লগারদের নাম ও সংগঠন ইত্যাদির বিষয়ে অবহিত করেন এফবিআই সদস্যদের। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা ঘুরে লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে এলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন অভিজিত রায়। আর গুরুতর আহত হন রাফিদা আহমেদ বন্যা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হিযবুত তাহরীর নেতা শফিউর রহমান ফারাবীকে ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, অভিজিত হত্যাকা-ে অনুতপ্ত নন তিনি এবং এ হত্যাকা-কে সমর্থন করেন। আনসার বাংলা-৭ নামে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে টুইট করেছিল হিযবুত তাহরীর। হিযবুত তাহরীর নেতা গ্রেফতারকৃত ফারাবীকে দিয়েই হত্যাকারী শনাক্ত করার চেষ্টার করা হচ্ছে। এজন্য ১০ জনের তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে সরাসরি হত্যাকা-ে অংশগ্রহণকারীসহ এখনও তালিকাভুক্তদের কেউই গ্রেফতার হয়নি। খুনীদের দেখলে চিনবে ॥ খুনীদের দেখলে চিনতে পারবেন বলে শ্বশুরকে জানিয়েছেন লেখক ব্লগার অভিজিত রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। তার সঙ্গে সর্বশেষ কথার ভিত্তিতে অধ্যাপক অজয় রায় জানিয়েছেন, খুনীদের দেখলে চিনতে পারবেন তার পুত্রবধূ। খুনীদের বন্যা শনাক্ত করতে পেরেছেন কিনা- জানতে চাইলে অজয় রায় বলেন, ‘ও (বন্যা) বলে যে, সে দেখলে বুঝতে পারবে। বন্যা তার শ্বশুরকে বলেছেন, হামলাকারীরা অন্তত পাঁচজন ছিল, তাদের বয়স ছিল ২৫-২৬ বছর। তাদের প্রত্যেকের পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি ছিল। তাদের মুখে কোন দাড়ি ছিল না। বাবা অজয় রায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন গত রাতে বন্যার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে, দেশের বাইরে চিকিৎসা নেয়ার আগে পুলিশের কাছে সে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, আবার যদি স্টেটমেন্ট দেয়ার দরকার হয়, তা ও দেবে। এদিকে হত্যাকা-ের আলামত তাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি নিয়েছে পুলিশ। অভিজিতের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ ॥ কোর্ট রিপোর্টার জানান, বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায়ের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। মঙ্গলবার ডিবি পুলিশের রমনা জোনের পরিদর্শক মোঃ ফজলুর রহমানের আবেদনক্রমে ঢাকার সিএমএম বিকাশ কুমার সাহা ওই নির্দেশ দেন। এছাড়া উদ্ধারকৃত আলামত এফবিআইর ল্যাবে পরীক্ষা করানোরও অনুমতি মিলেছে। ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে মৃত অভিজিতের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে নির্দেশ প্রদান প্রয়োজন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। একইদিন ওই তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলায় পুলিশের জব্দকৃত আলামতসমূহ যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইর ল্যাবে পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে একই আদালতে পৃথক আবেদন করলে তাও মঞ্জুর করা হয়। অনুমতি পাওয়া আলামতসমূহের মধ্যে রয়েছে ২টি রক্তমাখা লোহার চাপাতি, যার মধ্যে একটির দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি ও প্রস্থ আড়াই ইঞ্চি এবং অপরটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ আড়াই ইঞ্চি, একটি কালো রঙের স্কুল ব্যাগ, ২টি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট যার একটি কালো রঙের এবং অপরটি ঘিয়ে রঙের, একটি পুরনো ছেঁড়া পত্রিকার ২টি পাতা, জড়ঃবী সবফরপধ ঃৎরঃঃধঁ এবৎসধহু লেখা অস্পষ্ট লেবেলযুক্ত একটি ইনজেকশন ও দুটি সিরিঞ্জ, একটি স্যাভলন ক্রিম, চারটি রেনিটিডিন আর ট্যাবলেট, একটি ভায়োডিন এন্টিসেপটিক সল্যুউশন, ছ’টি ফিলমেট ট্যাবলেট, একটি গজতুলা, চারটি নাপা ট্যাবলেট, একটি কালো ফ্রেমযুক্ত সাদা গ্লাসের চশমা, একটি ম্যাটাডোর হাইস্কুল বলপেন যার বডি লাল বর্ণের এবং ক্যাপ সাদা, কটনবারে রাখা ভিকটিম অভিজিত রায়ের নখের নমুনা, একটি কালো রঙের লম্বা চুল এবং দুটি কালো রঙের ছোট চুল। খুনীদের দেখলে ‘চিনবেন’ অভিজিতের স্ত্রী ॥ বিডিনিউজ জানায়, খুনীদের দেখলে চিনতে পারবেন বলে শ্বশুরকে জানিয়েছেন লেখক-ব্লগার অভিজিত রায়ের স্ত্রী রাফিয়া আহমেদ বন্যা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বই মেলার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিতের সঙ্গে থাকা বন্যাও দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। চাপাতির আঘাতে একটি আঙুল হারানো বন্যা চিকিৎসার জন্য ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার সঙ্গে সর্বশেষ কথার ভিত্তিতে অধ্যাপক অজয় রায় জানিয়েছেন, খুনীদের দেখলে চিনতে পারবেন তার পুত্রবধূ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক মঙ্গলবার বলেন, “গত রাতে বন্যার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে। দেশের বাইরে চিকিৎসা নেয়ার আগে পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আবার যদি স্টেটমেন্ট দেয়ার দরকার হয়, ও দেবে।’ খুনীদের বন্যা শনাক্ত করতে পেরেছেন কিনা- জানতে চাইলে অজয় রায় বলেন, ‘ও (বন্যা) বলে যে, সে দেখলে বুঝতে পারবে।’ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিতের খুনীদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তাদের ধারণা, অভিজিতের লেখালেখিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে।
×