ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ১০৭ বিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১১ মার্চ ২০১৫

কুড়িগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ১০৭ বিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রাম জেলার অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তহবিল সঙ্কট, শিক্ষকের অভাব, অপর্যাপ্ত টেবিল-বেঞ্চ, টিউবওয়েল, টয়লেটের অভাব এবং আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণের অভাবসহ নানামুখী সমস্যায় চলছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। ভাল স্কুলগৃহ না থাকায় জেলার সরকারীভাবে চিহ্নিত ১০৭টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্ঘটনা ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এর কোন কোনটিতে ক্লাস চলে খোলা আকাশের নিচে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১৬৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী, ১৫০টি এনজিও, ৫টি হাইস্কুল পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৩টি ইবতেদায়ী মাদরাসা, ২১৯ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারী বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে তিনতলা ৩টি, দুইতলা ৯৭টি, একতলা ৫৯১টি, টিনশেড বিল্ডিং ২৫৬টি এবং ৩২৪টি শুধু টিনশেড বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩৯টি ৯ উপজেলার বিভিন্ন চরে অবস্থিত। জেলায় ৫৬৩টি প্রধান শিক্ষক ও ৩২৫৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে যেখানে ৬৬টি প্রধান শিক্ষক ও ৮০টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। সরকারী দফতরের হিসাব অনুযায়ী জেলায় মোট ১০৭টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিদ্যালয় ভবন রয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৫টি, রাজার হাটে ১২টি, ভুরুঙ্গামারীতে ৩টি, নাগেশ্বরীতে ২১টি, ফুলবাড়িতে ১১টি, উলিপুরে ৮টি, চিলমারীতে ৩০টি, রৌমারীতে ৫টি এবং রাজিবপুর উপজেলায় ১২টি বিদ্যালয় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব দফতরে চিঠির পর চিঠি চালাচালি হলেও কোন সুরাহা হয়নি। জেলার নাগেশ্বরী, উলিপুর ও সদর উপজেলায় বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। জীবন সংশয়ের মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। কেউবা ঝুঁকি এড়াতে পাঠদান করছেন ভবনের বাইরে-খোলা আকাশের নিচে। উলিপুর উপজেলার উমানন্দ মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ, বিম ও দেয়াল খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। ফলে শিক্ষকরা চেয়ার বেঞ্চ টেবিল বাইরে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে গত বছর থেকে ক্লাস নিচ্ছেন। এ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাফিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার এবং আতিকুর রহমান জানায়, শিক্ষার্থীরা ভাঙাচোরা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণীকক্ষে ক্লাস করতে চায় না দুর্ঘটনার ভয়ে। অনেকে বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা কয়েকজন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবু তাউছ মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, যে কোন উপায়ে তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করার চেষ্টা করছেন। তারা গত দু’বছরে কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দফতরে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। কাজেই দুর্ঘটনার ভয়ে ঘরের ভিতরে ক্লাস নিতে পারছেন না। তারা বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়টিতে মোট ১৫৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ক্লাস করার জন্য। কিন্তু ভবনের বেহাল দশার কারণে দুই শিফট মিলে বর্তমান উপস্থিতি ৬০-৭০ জনে নেমে এসেছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদী জেলার ৯ উপজেলার মধ্য দিয়েই জালের মতো প্রবাহিত রয়েছে। এসব নদীর বুকে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি চর বা দ্বীপচর। অনেক বিদ্যালয়ই নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে। চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরাঞ্চলে বসবাস করতে চান না, ফলে ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে চলে সেসব বিদ্যালয়।
×