ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিআইপি বন্দীর সম্ভাব্য আগমনে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজ সাজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১০ মার্চ ২০১৫

ভিআইপি বন্দীর সম্ভাব্য আগমনে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজ সাজ

মশিউর রহমান খান ॥ একজন ভিআইপি বন্দীর সম্ভাব্য আগমনে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। সোমবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে কারাগারের সাজসজ্জা। ভিআইপির থাকা, খাওয়া এবং চিকিৎসার যাতে কোন ত্রুটি না থাকে সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। আশপাশের এলাকা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সংস্কার করা হচ্ছে পাানি ও বিদ্যুতের লাইন। নতুন করে বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ভিআইপি বন্দীকে যে কক্ষে রাখা হবে তার পাশের কক্ষ খালি করা হয়েছে। সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হবে। সম্ভাব্য ভিআইপি বন্দীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, সম্ভাব্য এই বন্দী দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় অতি গুরুত্বের সঙ্গে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের সকল কারাগারকে দৈনিক ২৪ ঘণ্টাই অতি নিরাপত্তাসমৃদ্ধ করে রাখা হয়। এর মধ্যেও সোমবার সকাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। উর্ধতন কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারাভ্যন্তরে সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে তুলনামূলক একটি বড় কক্ষ সাজানো শুরু হয়েছে। কক্ষটির পানির লাইনে কোনো প্রকার ত্রুটি আছে কি না তা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে ডেকে এনে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই সংস্কার করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত শৌচাগারের দরজা কিছুটা নষ্ট ছিল তা ঠিক করতে বলা হয়েছে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তব্যরত ৮ জন ডেপুটি জেলারকে ডেকে এনে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারাগারের আশপাশের এলাকার নিরাপত্তাও আগের তুলনায় বৃদ্ধি করতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ১১টায় কারা মহাপরিদর্শক উক্ত ভিআইপি বন্দীকে ঢাকা কারাগারে রাখার বিষয়ে নিরাপত্তা যাচাই করতে নিজেই আকস্মিক পরিদর্শনে যান। তিনি কারা ফটকের আশপাশের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাইরের দেয়াল, নিরাপত্তার দিক দিয়ে উক্ত কক্ষটির অবস্থান কেমন তা পরীক্ষা করেন। তিনি সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারকে এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের তোড়জোড় থাকলেও আকস্মিক কারা কর্তৃপক্ষ উক্ত বন্দীর বিষয়ে মনোযোগ প্রদান করেছে। সূত্র জানায়, নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্ধারিত ওই কক্ষটিতে বর্তমানে আটককৃত বন্দীসহ আশপাশের কক্ষে আটককৃত আরও বন্দী মিলিয়ে মোট একশ বন্দীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ স্কোয়াড দিয়ে মঙ্গলবার সকালে একশ বন্দীকে কাশিমপুরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কর্তৃপক্ষ উক্ত বন্দীর চিকিৎসার জন্য কারাগারের দায়িত্বে নিয়োগকৃত ২ জন ডাক্তারকে ডেকে এনে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। উক্ত ভিআইপি বন্দীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা রক্ষায় অতি সতর্কতার সঙ্গে কারাগারের ভেতরে ও বাইরে মোট ৪ স্তরের নিরাপত্তা প্রদান করবে। কারাগারের বিশেষ দাঙ্গা বাহিনীর পাশপাশি দায়িত্বরত কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তা কর্মচারী, কারা গোয়েন্দা সেল, র‌্যাবের বিশেষ টহল টিম, বিজিবির টহল টিম, পুলিশের বিশেষ টহল ও দাঙ্গা বাহিনী সর্বদা কাজ করবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। এর বাইরেও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিত তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে।
×