ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাডিলেডে টান টান উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ মার্চ ২০১৫

এ্যাডিলেডে টান টান উত্তেজনা

ফজলুল বারী, এ্যাডিলেড থেকে ॥ পঁয়ত্রিশ ফুট লম্বা ঢাউস সাইজের লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা আনা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। আনা হয়েছে বাংলাদেশ দলের জার্সি, কপালে বাঁধার ব্যান্ড, হাতে নাড়ানোর ছোট পতাকাসহ নানাকিছু। মেয়েদের অনেকে বলেছেন, তারা লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরবেন। ঢোল করতাল বাঁশিসহ সবকিছু তৈরি। কারণ সোমবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের খেলা এ্যাডিলেড ওভালে। এর অপেক্ষা, আনন্দ সাজ প্রস্তুতি গোটা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। দেশকে ঘিরে এমন আনন্দ সাজ প্রস্তুতি এর আগে কখনও আসেনি তাদের প্রবাস জীবনে। কারণ বাংলাদেশ এর আগে কখনও খেলেনি এ্যাডিলেডে। রেডিও বাংলা এ্যাডিলেড চালান নদী। পুরো নাম নাদিরা সুলতানা নদী। দেশে থাকতে ঢাকার মিডিয়াতেও কাজ করেছেন। আমাদের বললেন, এ্যাডিলেডে তাদের রেডিও চ্যানেলই এর আগে খোলা মাঠে কিছু অনুষ্ঠান করেছে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা প্রোগ্রাম সাধারণত ভাড়া করা হলের মধ্যে হয়। খুব কম বাংলাদেশী পাওয়া যাবে, যারা এর আগে কখনও এ্যাডিলেড ওভালে ঢুকেছেন। কারণ এখানে আগে কখনও বাংলাদেশের খেলা হয়নি। এটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দামী ও ব্যয়বহুল ভেন্যুগুলোর অন্যতম। এখানে খেলার আয়োজন করলে দর্শক হবে না, লোকসান হবে মনে করে তারা এখানে কখনও বাংলাদেশ দলের খেলার আয়োজন করেনি। সে কারণে জীবনে প্রথমবার এ্যাডিলেড ওভালে ঢুকবেন এ নিয়ে তাঁরা খুবই এক্সাইটেড। প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সোমবার সকালে সবাই গিয়ে জড়ো হবেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউসের সামনে। সেখান থেকে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সেøাগানে মিছিল করে যাবেন এ্যাডিলেড ওভালে। প্রবাসী বাংলাদেশী একজনও থাকবেন না বাংলাদেশ দলের জার্সি ছাড়া। জাতীয় পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ঢোল, করতাল সব থাকবে সেই মিছিলে। দেশের জন্য অনেকে বাঘ সেজে ওভালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। দেশের জন্য ভেন্যুতে ভেন্যুতে বাঘ সেজে দলকে উৎসাহিত করতে যে টাইগার মিলন উপস্থিত থাকেন স্টেডিয়ামে, সেই টাইগার মিলনও বাচ্চাদের নিয়ে থাকবেন মিছিলের সামনে। উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে আসা মিলনের সোমবার সকালে এ্যাডিলেড পৌঁছবার কথা। ৫৪ হাজার দর্শক জায়গা হয় এ্যাডিলেড ওভালে। সোমবারের ম্যাচে বাংলাদেশের কত সমর্থক থাকতে পারেন? এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত বলা কঠিন। কারণ এ্যাডিলেডে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি নয়। কাজ ফেলে বা ছুটিছাঁটা নিয়ে তাদের মধ্যে আড়াই-তিন হাজার সমর্থক মাঠে যেতে পারেন। অনেক সমর্থক গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছেন মেলবোর্ন, সিডনি, পার্থ থেকে! উল্লেখ্য, উত্তর-দক্ষিণ এ্যাডিলেডের প্রসফেক্ট, ইঙ্গেল ফার্ম, মওসেং লেক, গোল্ডেন গ্রোথ, সলেজবারি, প্যারাফিল্ড গার্ডেন, সাউথ এসকট পার্ক, সেন্ট মেরিস, মেরিয়েন হেনলি বিচ, মরফেটভেল, বার্ন সাইট এসব এলাকাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সোমবার এর কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তাদের অনেকে গাড়ি সাজাচ্ছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায়। খেলা উপলক্ষে দেশের নানা মিডিয়ার তিরিশ জনের বেশি সাংবাদিক এখন এ্যাডিলেডে আছেন। প্রবাসীরা এগিয়ে এসে এখানে সেখানে যাওয়া, দাওয়াতসহ তাদের নানা সার্ভিস দিচ্ছেন। এ এক অন্য জীবন ব্যস্ততা এ্যাডিলেড প্রবাসী বাংলাদেশীদের। রবিবার এ্যাডিলেড ওভালে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীতের মহড়া চলছে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ সুরের সঙ্গে এ্যাডিলেড ওভালজুড়ে পর্দায় ভেসে আসে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা! ক্রিকেট ছাড়া কি এমন সুযোগ বাংলাদেশের আর কেউ করতে পেরেছে? সর্বশেষ ম্যাচে নেলসনে বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায়, ইংল্যান্ড নাজুক অবস্থায় থাকায় সোমবারের ম্যাচ নিয়ে বিশেষ এক আশায় সবাই বুক বেঁধে আছেন। টরেন্স নদীর তীরের এ্যাডিলেড ওভালের সূর্যের কী সে সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে উদয় হবে সোমবার? সে উত্তর জানতে বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। নেই শুধু ‘বাংলা’ এ্যাডিলেড ওভালে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ। হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী খেলা দেখতে এই ওভালে আসবেন। কিন্তু একটা বিষয় দেখে কষ্টে তাঁরা পড়বেন! এ্যাডিলেড ওভালের প্রবেশ পথের বাম পাশের ফান জোনের সিঁড়িতে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশ-দলগুলোর যার যার ভাষায় ওয়েলকাম তথা স্বাগত জানানোর ভাষা লিখে রাখা হয়েছে। শুধু বাংলা ভাষার স্থান সেখানে হয়নি! এই ভুলটি কী ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত? এ বিষয়ে জানতে ওভালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রবিবার ছুটির দিন বলে কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমদকে বিষয়টি দেখানো হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। প্রবাসী বাংলাদেশী নেতাদের বলা হয়, আপনারা তো বিষয়টি নিয়ে ওভাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন। তাঁরা শুধু বললেন, নেক্সট টাইম। আমরা কমিউনিটি হিসাবে এখানে নতুন এবং অগ্রসরমান। এভাবে কেউ বিষয়টির দায়িত্ব নিয়ে ওভাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বোঝাপড়ায় আগ্রহী হলেন না। কিন্তু ওভালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কেউ একজন ওভাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা হয়ত ভুলটা সংশোধন করে নিতে পারত।
×