ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার কৌশলে হেরফের ॥ পেট্রোল বোমা হামলা কমেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ মার্চ ২০১৫

নাশকতার কৌশলে হেরফের ॥ পেট্রোল বোমা হামলা কমেছে

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতাল নামের নাশকতার কৌশলে পরিবর্তন ঘটেছে। গত ২০ দিনের ‘নাশকতার পরিসংখ্যানে, পেট্রোলবোমার তা-ব কমেছে, বেড়েছে ককটেল বোমার নাশকতার দৌরাত্ম্য’। ককটেল বোমার দৌরাত্ম্য চলছে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। দেশের অন্যান্য স্থানে ঘটছে বিচ্ছিন্ন কিছু নাশকতার ঘটনা। এর মধ্যে রাজধানীর ৩৯ পয়েন্টে ককটেল বোমার ডেঞ্জার পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত। বেড়েছে জনরোষের কারণে নাশকতাকারীদের প্রতি গণপিটুনি। হতাহত কমেছে, বেড়েছে আতঙ্ক। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের নাশকতার পরিসংখ্যানে এই তথ্যচিত্র ফুটে উঠেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতার যে তথ্যচিত্রের রেকর্ড করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ২০ দিন আগে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছিল ১৯২টি। আর গত ২০ দিনের মধ্যে ঘটেছে ২১১টি। অর্থাৎ বিগত ২০ দিনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি, যা বিএনপি-জামায়াত জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতা কমেছে। কিন্তু আলোচ্য সময়ে বেড়ে গেছে ককটেল বোমা নিক্ষেপের নাশকতা। গত ২০ দিন আগে ককটেল বোমার নিক্ষেপের ঘটেছিল ২৭৬টি। আর গত ২০ দিনে ককটেল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, ৪২৩টি। অর্থাৎ ককটেল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বেড়েছে, যা বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতার কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে ৫টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে আহত হন ৬ জন। গত ২০ দিনে সবচেয়ে বেশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে টিএসসি এলাকায়। দুই মাসে এসব বিস্ফোরণে সাংবাদিক, নবদম্পতিসহ অর্ধশতাধিক খেটে খাওয়া মানুষ আহত হন। অভিজিত হত্যাকা-ের পর সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা কমেছে। এছাড়া চারুকলার উল্টো পাশে ছবিরহাটে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজনকে হাতেনাতে ধরার পর সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা কমে গেছে। তবে রাজধানীর অন্য পয়েন্টগুলোয় ককটেলের বিস্ফোরণ চলছেই। শনিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে রাজধানীর কাওরানবাজারে পর পর কয়েকটি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ককটেল বোমার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের এএসআই মাহবুব আহত হন। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রবিবার পল্টনে পুলিশের প্রতি লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল বোমা ছুড়ে মেরেছে দুর্বৃত্তরা। তবে কেউ হতাহত হননি। গত দুদিন ধরে রাজধানী ঢাকায় বেশকিছু স্থানে ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। আলোচ্য সময়ে চট্টগ্রামের বেশকিছু স্থানে এ ধরনের ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যাতে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা ও উপ-জেলায় পেট্রোলবোমা তো বটেই, এমনকি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর ঘটনা তেমন উল্লেখযোগ্যতার মধ্যে নেই। অবরোধ-হরতাল নামের নাশকতায় রাজধানীর ৩৯টি পয়েন্টে ঘুরেফিরে ককটেল বোমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি। এতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর ৭টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। রবিবারও ৩ জনকে গণধোলাই দেয়ার পর পুলিশে সোপর্দ করার খবর পাওয়া গেছে। গত ২০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ ও র‌্যাব কমপক্ষে ৪০০ ককটেল ও পেট্রোলবোমা উদ্ধার করেছে। ধরা পড়েছে হামলাকারীরও। এভাবেই বেড়েছে ককটেল বোমা হামলার ঘটনা। রাজধানী ঢাকার যেই ৩৯ পয়েন্টে বারবার ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, তা হচ্ছে, ফার্মগেট খামারবাড়ী, কাওরানবাজার আন্ডারপাস, ধানম-ি ২৭, মিরপুরের টেকনিক্যাল বাসস্ট্যান্ড, রামপুরা টেলিভিশন ভবন এলাকা, মগবাজার রেলক্রসিং, বিজয়নগর মোড়, পল্টন মোড়, নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, যাত্রাবাড়ী ফাইওভার, দৈনিকবাংলা মোড়, ফকিরাপুল মোড়, বকশীবাজার, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক, গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, নীলক্ষেত মোড়, সায়েন্সল্যাব বাসস্ট্যান্ড, জিগাতলা, টিএসসি, লক্ষ্মীবাজার, সিএমএম কোর্ট এলাকা, বংশালের রাজ্জাক হোটেলের সামনে, যাত্রাবাড়ীর ধোলাইখাল, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর গোল চত্বর ও কাওলা, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড, বঙ্গবাজার, মতিঝিল শাপলা চত্বর, কমলাপুর রেলস্টেশন, রামপুরা বাজার, মহাখালী মোড়, নাবিস্কো মোড়, শান্তিনগর মোড় ও মালিবাগ মোড়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ২ মাসের অবরোধ-হরতালে রাজধানীর ৩৯টি পয়েন্টে ঘুরেফিরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি স্থানে ককটেল কিংবা পেট্রোলবোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের কেউ কেউ আদালতে এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। পলাতক অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই পুলিশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
×