ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লগার রাজীব হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৯ মার্চ ২০১৫

ব্লগার রাজীব হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হচ্ছে। দ্রুত বিচার আদালতে ১৩৫ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। খুব সত্বরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়। এদিকে রাজিব হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য ১৮ মার্চ দিন রেখেছে আদালত। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ রুহুল আমিন রবিবার অভিযোগ গঠনের শুনানি নিয়ে আদেশের জন্য এ দিন ঠিক করে দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্লগার রাজিব হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিতের জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং শেষে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসআরও আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এটি জারি করা হবে। শাহবাগে প্রজন্মের গণজাগরণের অন্যতম ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে (৩৫) নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের পলাশনগরের তার বাড়ির সামনে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রাজীব একজন স্থপতি ও ব্লগার একটিভিস্ট আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী এবং ইমরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নিহতের স্বজন ও সহকর্মীরা জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে। তারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার পিতা ডাঃ নাজিম উদ্দিন এবং মা নার্গিস গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটে এসে ছেলের হত্যাকা-ের জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাওয়ায় তাদের ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। রাজীব হায়দার শোভন ‘থাবা বাবা’ নামে ‘আমার ব্লগ’ ও ‘নাগরিক ব্লগে’ লিখতেন। এদিকে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী ৫৫ জন। আসামিদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোঃ জসীমউদ্দিন রাহমানী ছাড়া বাকিরা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের মধ্যে রেদোয়ানুল আজাদ রানা ছাড়া সবাই গ্রেফতার হয়ে আছে। তারা হলো- সাদমান ইয়াছির মাহমুদ, ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, এহসান রেজা রুম্মান, মাকসুদুল হাসান অনিক, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজ। তাদের সবাইকে এদিন শুনানিতে হাজির করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে সাদমান ছাড়া বাকিরা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুফতি মোঃ জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিত। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনত। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে ‘নাস্তিক ব্লগার’দের খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানীকে এই হত্যায় উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মুফতি জসীমের উস্কানিমূলক খুতবার বিষয়টি ছাত্রদের জবানবন্দীতেও উঠে এসেছে। ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর জসীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতার করা হয় তার আগে মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে।
×