ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড লড়াই  আজ

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ এক ওভারে ছয়টি চার মারার যে রেকর্ড গড়েছিলেন ২০০৭ সালে (পাকিস্তানের নাভিদ উল হাসানের ওভারে), শ্রীলঙ্কার তিলকারতেœ দিলশান সেই একই কাজ করে দেখালেন। তবে একটি দিক দিয়ে দিলশান এগিয়েই থাকলেন। রবিবার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিচেল জনসনের এক ওভারে টানা ছয় বলে ছয় চার হাঁকিয়েছেন! স্মিথ যা করতে পারেননি। দিলশানের এমন রেকর্ডের দিনেও শ্রীলঙ্কা জিততে পারেনি। একদিকে যখন সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হচ্ছে, সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে; আরেকদিকে এ্যাডিলেডে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নক আউট পর্বে ওঠার আশার কথা জানাচ্ছেন। সেই আশা পূরণও হয়ে যাবে, যদি আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে জিতে যায় বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপের হিসাব-নিকাশ আজ শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ধরা হচ্ছে। যদি ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতে যায় এই গ্রুপের সেরা চার দল মিলে যাবে। এ্যাডিলেডে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া ম্যাচে ইংল্যান্ড হারলেই বিদায় নেবে। তখন আফগানিস্তানকে রবিবার ড্যানিয়েল ভেট্টরির (৪/১৮) দুর্দান্ত বোলিংয়ে (আফগানিস্তান ১৮৬/১০, নিউজিল্যান্ড ১৮৮/৪) ৬ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ড (১০ পয়েন্ট), অস্ট্রেলিয়া (৭ পয়েন্ট), শ্রীলঙ্কার (৬ পয়েন্ট) সঙ্গে বাংলাদেশই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা অবশ্য অন্য দলকে নিয়ে নয়, নিজেদের নিয়েই ভাবছেন। সবার আশা ইংলিশদের হারিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে টাইগাররা। এমন ভাবনার সঙ্গে আবার আরেকটি ভাবনার যুক্ত হচ্ছে, যদি বৃষ্টি নেমে যায়। এ্যাডিলেডে সেই শঙ্কা উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। বৃষ্টি হলে যদি ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় তাহলে ১ পয়েন্ট পাবে বাংলাদেশ। সেই এক পয়েন্ট পেয়েও বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেবে। রবিবার সারাদিন বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়েই সবাই আলোচনায় ব্যস্ত ছিল। সেই আলোচনায় দুপুর গড়াতেই কিছুটা ঢুকে গেছেন দিলশান। ম্যাক্সওয়েলের ১০২ রানে অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ৩৭৬ রান করে। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে খেলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ষষ্ঠ ওভারে জনসনের ওভারে টানা ছয় বলে ছয় চার হাঁকান দিলশান। মনে করা হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার গড়া বিশাল রান টপকে যেতে পারে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দিলশান ৬২ রানেই আউট হয়ে গেলেন। এরপর কুমার সাঙ্গাকারা ১০৪ রান করলেন। টানা তিন ম্যাচে তিন শতক হাঁকিয়ে রেকর্ডও গড়লেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা জয় আর তুলে নিতে পারল না। দলীয় ২০১ রানে সাঙ্গাকারা আউট হওয়ার পর থেকেই যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন। শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা এতটাই খারাপ ব্যাটিং করেছেন যে, ১১১ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ৪৬.২ ওভারে ৩১২ রান করতেই গুটিয়েও যায়। ম্যাচ শেষেও অবশ্য দিলশানেই যেন সবাই মোহিত হয়ে থাকেন। এক ওভারের ‘তা-ব’ যে দেখান দিলশান। তখন আর কে কে এক ওভারে ৬ বলে ৬ চার হাঁকিয়েছেন, এ রেকর্ড জানার দিকেই সব দৃষ্টি চলে যায়। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, নিউজিল্যান্ডের ক্রেইগ ম্যাকমিলান, ক্রিস গেইলদের এমন রেকর্ড থাকলেও ওয়ানডেতে কারোরই নেই। একটি রেকর্ড আছে। তবে সেটি এক ওভারে ৬ চার হাঁকানোর। সেটি ২০০৭ সালে সেঞ্চুরিয়ানে পাকিস্তানের বোলার নাভিদ উল হাসানের ওভারে হাঁকান দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। তবে ৬ বলে ৬ চার হাঁকাতে পারেননি স্মিথ। নাভিদ উল হাসানের সেই ওভারটি ‘ওয়াইড-নো’ মিলিয়ে ১০ বল হয়েছে। টানা পাঁচ বলে পাঁচ চার মারার পর একটি ওয়াইডের পর আরেকটি চার হাঁকাতে পেরেছিলেন স্মিথ। তাই জনসনের বলে যে দিলশান টানা ৬ বলে ৬ চার হাঁকিয়েছেন, সেটিই উজ্জ্বল হয়ে থাকল। অবশ্য দিলশানের এমন নৈপুণ্য, সাঙ্গাকারার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পরও যে শ্রীলঙ্কা জিততে পারল না, সেই আফসোস লঙ্কান ক্রিকেটপ্রেমীদের থেকেই গেল। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা এমন কোন রেকর্ড নন, চানÑ যে করেই হোক আজ জয়। ভাল ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ড যে চাপে আছে, সেই চাপের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ জিতুক, সেই প্রত্যাশাই সবার। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও তাই চাইছেন। এখন আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে জিতে গেলেই হয়। তাহলেই যে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা আজই নিশ্চিত হয়ে যায়।
×