ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী

সমাজে একটি শ্রেণী ধর্ম ব্যবহার করে নারীকে বন্দী করতে চায়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ মার্চ ২০১৫

সমাজে একটি শ্রেণী ধর্ম ব্যবহার করে নারীকে বন্দী করতে চায়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থে লক্ষ্যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছেন। এ ধরনের হীন মানসিকতা নিয়ে তিনি কীভাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন! নারী-শিশু এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও তাঁর নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পেট্রোলবোমা ও ককটেল মেরে দেশের মানুষকে হত্যার অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে? এটা কোনভাবেই সহ্য করা যায় না। খালেদা জিয়াকে তাঁর নির্মম ও নৃশংস কর্মকা-ের শাস্তি পেতেই হবে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য তাঁর বিচার হবে। আন্দোলনের নামে বিএনপি জোটের নৃশংস কর্মকা-ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সোচ্চার হতে তিনি নারী সমাজসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর উন্নয়ন’। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দাবি করেন যে, তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন? তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য ও তাদের কল্যাণের জন্য। রাজনীতি মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য নয়। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, খুব দুঃখ লাগে, যখন আমরা দেখি প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত-সমৃদ্ধশালী হচ্ছে, সারা বিশ্বাব্যাপী বাংলাদেশ যখন সুনাম অর্জন করেছেÑ ঠিক তখনই এক সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমানে না সংসদে না সরকারে তিনি নিজের অফিসে বসে নির্দেশ দিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করাচ্ছেন। এই ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটতে দেয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে একটি শ্রেণী রয়েছে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে নারীদের বন্দী করে রাখতে চায়। তবে এ ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও নারীদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। এটা অনেকেই ভুলে যায়। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম কখনও কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু যারা আজকে ইসলাম ধর্মের নাম করে নারীদের বাধা দিতে চায়, তারা আসলে সত্যিকারের ইসলাম ধর্ম ও ধর্মের অনুশাসন হয়ত দেখেও না দেখার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ যিনি করেছিলেন, তিনিও একজন নারী ছিলেন। তিনি ছিলেন বিবি খাদিজা (রা)। তিনি নিজে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। ইসলামের জন্য প্রথম শহীদও হয়েছিলেন একজন নারী। তিনি বলেন, নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষকে সমানভাবে উন্নত করতে হবে। এক অংশকে পেছনে ফেলে একটি সমাজ-একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। বাংলাদেশের নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং এদেশের নারীদের কর্মস্পৃহা, দক্ষতা ও ত্যাগের ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন পেশার উচ্চপদে নারীদের পদায়নের চিত্রও এ সময় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নারী উন্নয়ন ও নারী শিক্ষার প্রসারে সরকারের বিভিন্ন কর্মকা-ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। নারী নির্যাতন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য সারাদেশে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ৬০টি ওয়ান-স্টপ-ক্রাইসিস সেল স্থাপন করেছি। বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারীর উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৪ অনুযায়ী ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৮তম। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক উল ইসলাম, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিককিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দেশের নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন ইউএনএফপিএ’র প্রতিনিধি মাতাভেল পিকনিক।
×