ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনসংহতি সমিতির সভাপতি ফের সন্তু লারমা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৯ মার্চ ২০১৫

জনসংহতি সমিতির সভাপতি ফের  সন্তু লারমা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি, ৮ মার্চ ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১০ম জাতীয় সম্মেলনে সমিতির বর্তমান সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাকে আবারও দলের সভাপতি করা হয়েছে। ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করুন’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১০ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন শেষে রবিবার বিকেলে সন্তু লারমাকে নতুন করে দলের সভাপতি ও উষাতন তালুকদারকে সহসভাপতি ও প্রণতি বিকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং শক্তিপদ ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট জনসংহতি সমিতির নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা, থানা ও ইউনিয়ন শাখাসমূহ এবং এর সহযোগী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি ও গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠীর সাড়ে তিন শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক সামগ্রিক প্রতিবেদন পেশ করা হয় এবং উপস্থাপিত সামগ্রিক প্রতিবেদনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ, পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা, পার্টির ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনে প্রতিনিধিরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনরায় আসীন হওয়ার পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় চরম ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দেশের শাসকগোষ্ঠী একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সংস্কারপন্থীদের মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং অন্যদিকে সেটেলার বাঙালীসহ সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিকে লেলিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা, জুম্ম নারীর ওপর হত্যা ও ধর্ষণ, অবাধে অব্যাহত অনুপ্রবেশ ইত্যাদির মাধ্যমে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন অনিশ্চিত জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচী ভিত্তিক কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ১ মে থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও সরকার এখনও দৃশ্যমান ক্ষেত্রে এগিয়ে না আসায় প্রতিনিধিরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকার এগিয়ে না আসলে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার জন্য সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এছাড়া সম্মেলনে একদিকে লাগাতার অবরোধ-হরতালে পেট্রোলবোমার আঘাতে দগ্ধ হয়ে, অন্যদিক তথাকথিত ক্রসফায়ার, গুম ও গুপ্ত হত্যায় অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটায়; সর্বোপরি সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আদিবাসীসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
×