ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৮ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হবে

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হতে পারে। এছাড়া মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতে চুক্তিটি নবায়ন হতে পারে সে বিষয়টিও ভেবে দেখছে সরকার। আগামী ৩১ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্যচুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে চুক্তি নবায়নের আর বিকল্প কিছু নেই। তাই চলতি মার্চ মাস শেষে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নবায়ন করা হবে। তবে এবার চুক্তি নবায়নে কিছু বিষয় সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছেÑচুক্তির মেয়াদ তিন বছরের স্থলে পাঁচ বছর এবং নৌপরিবহন চুক্তিটি বাণিজ্য চুক্তি থেকে আলাদা করে পৃথক চুক্তি করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারতে রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় ইতোমধ্যে ভারতের বাজারে পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটা ফ্রি বাজার সুবিধা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিভিন্ন শুল্ক-অশুল্কজনিত কারণ, অবকাঠামো সমস্যা এবং ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে রফতানি তেমন বাড়েনি। ফলে প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নৌপরিবহন চুক্তিকে বাণিজ্য চুক্তি থেকে পৃথক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কারণে ৩১ মার্চের আগেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তির মেয়াদ আগামী ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে। এ কারণে নতুন করে চুক্তিটি নবায়ন করতে হবে। এই চুক্তি নবায়নের আগে ভারত যেমন আমাদের কিছু প্রস্তাব দিয়েছে তেমনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা ভারতের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণে কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। আরও কয়েকটি বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে সরকার। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত পর্যালোচনা করে দেখতে চাই। আশা করা হচ্ছে, চুক্তি নবায়নের মধ্যদিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্য চুক্তিটি সই হয় ১৯৮০ সালে। এর পর যা প্রতি তিন বছর পর নবায়ন হয়ে আসছে। গত ২০০৯ সালে সর্বশেষ নবায়নপত্রে সই করেন বাংলাদেশের তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও ভারতের ওই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। এরপর ২০১২ সালের মার্চে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় না গিয়ে লেটার অব এক্সচেঞ্জ (চিঠি চালাচালি)-এর মাধ্যমে দুই পক্ষ চুক্তিটি নবায়ন করে। আগামী ৩১ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে ওই চুক্তির মেয়াদ। সূত্র মতে, দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্যচুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি জলপথে ট্রানজিটের প্রটোকল রয়েছে (বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এ্যান্ড ট্রেড)। এ চুক্তিটিও ২০১২ সালে নবায়ন হয়, যার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে। তবে এবার চুক্তি নবায়নকে সামনে রেখে ১০ বছর মেয়াদি নৌ-প্রটোকল চুক্তি করতে চায় ভারত। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত তাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, ২০১২ সালের আগে ভারত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নৌপথ রক্ষণাবেক্ষণে বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা দিত। তবে সর্বশেষ নবায়নের সময়ে ৫ কোটির স্থলে ১০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয় ভারত। এবার এ প্রটোকলের আওতায় বন্দর ব্যবহারে ফি নির্ধারণ করবে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ, অভিন্ন ফ্রেইট চার্জ, নৌপথের পাশাপাশি নাবিকদের রেল, সড়ক ও আকাশপথে চলাচল, তরঙ্গ ব্যবহার, নৌযানে নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করাসহ অন্যান্য বিষয় এ প্রটোকলে রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌপথ দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বা সেভেন সিস্টার্সে পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া নৌপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের নৌযানের সক্ষমতাও অনেক বেশি। এ কারণে বরাবরই ভারত পণ্য পরিবহনে নৌপরিবহন চুত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এদিকে গত কয়েক বছরে ভারত থেকে আমদানি বেড়েছে অনেক। ফলে বেড়ে গেছে বাণিজ্য ঘাটতিও। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের আখাউড়ার মধ্যে রেলযোগাযোগ স্থাপনে সম্মত হয়েছে ঢাকা ও দিল্লী। নতুন এই সংযোগ আন্তঃসীমান্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশী পণ্যের বাজার বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
×