ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইরিশদের অবিস্মরণীয় জয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ মার্চ ২০১৫

আইরিশদের অবিস্মরণীয় জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আরেকটি দারুণ জয় ছিনিয়ে আনল আয়ারল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপের ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে ওঠা আইসিসির সহযোগী সদস্য এ দেশটি প্রথম ম্যাচেই ক্রিকেট পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এবার তাঁরা আরেকটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুইয়েকে শনিবার হোবার্টে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৫ রানে হারিয়েছে। এ জয়ের ফলে ৪ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন উজ্জ্বল করেছে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানেরও সমান ৬ পয়েন্ট। আর জিম্বাবুইয়ে ৫ ম্যাচে চতুর্থ পরাজয় নিয়ে ছিটকে গেল গ্রুপ পর্ব থেকেই। প্রথম ব্যাট করে এড জয়েসের ১১২ ও এন্ডি বালবিরনির ৯৭ রানে ভর করে ৮ উইকেটে ৩৩১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে আইরিশরা। এটি ছিল ওয়ানডেতেই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাবে শুরুতে চাপে পড়লেও ব্রেন্ডন টেইলর ও শন উইলিয়ামসের বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা ১৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। টেইলর ১২১ ও উইলিয়ামস ৯৬ রানে ফিরে যাওয়ার পরও শেষ ওভারে দুই উইকেট হাতে থাকা জিম্বাবুইয়ের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৭ রানের। কিন্তু এ্যালেক্স কুসাক দুটি উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুইয়ের ইনিংস গুটিয়ে দেন ৪৯.৩ ওভারে ৩২৬ রানে। ‘বি’ গ্রুপে ছোট দুই দলের খেলা হলেও বিশেষ মনোযোগ ছিল সবার হোবার্টের বেলেরিভ ওভাল মাঠের দিকে। কারণ আইরিশরা জিতে গেলেই ভারত ছাড়া বাকি তিন দলের জন্য কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সমীকরণটা জটিল হয়ে যাবে। টস জিতে আয়ারল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় জিম্বাবুইয়ে। নিয়মিত অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা ইনজুরিতে, তাই নেতৃত্ব ছিল অভিজ্ঞ টেইলরের কাঁধে। শুরুটা তেমন ভাল হয়নি আইরিশদের। রানের গতিটা ধীর থাকার পাশাপাশি মাত্র ৭৯ রানেই দুই উইকেট হারায় তারা। তবে তৃতীয় উইকেটে ১৩৮ রানের জুটি গড়ে দারুণভাবে বিপদ সামাল দেন জয়েস ও বালবিরনি। তৃতীয় উইকেটে এটিই আইরিশদের সেরা জুটি। এর আগে ২০১৩ সালে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও নিয়াল ও’ব্রায়েন ১২৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ের পেছনে ৮৪ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ভূমিকা রেখেছিলেন জয়েস। এদিন তিনি হাঁকালেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অবশ্য ব্যক্তিগত ৩৪ রানের সময় তাওয়ান্দা মুপারিওয়ার বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন, সেটা ধরতে পারেননি বোলার নিজেই। জীবন ফিরে পেয়েই ব্যাটে ঝড় তোলেন জয়েস। শেষ পর্যন্ত ১০৩ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি সংগ্রহ করেন ১১২ রান। তবে ৩ রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম শতক বঞ্চিত হন বালবিরনি। তিনি মাত্র ৭৯ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা ৯৭ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলেন। তাঁর এমন ব্যাটিংয়ের কারণেই শেষ ১০ ওভারে ১০৮ রান যোগ করে তিন শ’ পেরিয়ে যায় আইরিশরা। আর কোন ব্যাটসম্যান যোগ্য সমর্থন দিতে পারেননি তাঁকে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে আয়ারল্যান্ড। এটি ছিল ওয়ানডেতে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে ৩২৯ রান তুলেছিল তারা। আর ওয়ানডেতে এটি তাদের সপ্তম তিন শতাধিক রান। জবাবটা দিতে নেমেই চরম বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুইয়ে। আইরিশ পেসারদের গতির তোপে মাত্র ৭৪ রানেই ৪ টপঅর্ডারকে হারায় তারা। বিশাল সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই এমন বিপর্যয়ের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, এ ম্যাচে জয়ের সুযোগ শেষ হয়ে গেছে জিম্বাবুইয়ের। তবে নাটকীয়তা তখনও ঢের বাকি। হারলেই গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যেতে হবে। সেই কারণেই দীর্ঘদিন পর নেতৃত্ব ফিরে পেয়ে নিজেকে যেন ফিরে পেলেন টেইলর। পঞ্চম উইকেটে তিনি উইলিয়ামসের সঙ্গে গড়ে তুললেন ১৪৯ রানের জুটি। বিশ্বকাপে জিম্বাবুইয়ের পক্ষে সেরা জুটির রেকর্ড মাত্র ১২৫ বলে। এর আগে গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ও এন্ডি ওয়ালার পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৪৫ রানের জুটি গড়েছিলেন ১৯৯২ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। জয়ের স্বপ্নটা ফিরে এলো। টেইলর সাড়ে তিন বছর পর আরেকটি শতক হাঁকিয়ে ফর্মে ফিরলেন। সপ্তম ক্যারিয়ার সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মাত্র ৯১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি ১২১ রান করে ফিরে যান। তবে হাল ছাড়েননি উইলিয়ামস। ৪ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হয়ে তিনি ৮৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৯৬ রান করে ফিরে যান। তখনও ১৯ বলে ৩২ রান প্রয়োজন দলের। মুপারিওয়া ৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান করে শেষ ওভার পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু শেষ ওভারে ৭ রান প্রয়োজন থাকলেও প্রথম ও তৃতীয় বলে রেগিস চাকাবভা ও মুপারিওয়ার উইকেট শিকার করে দলের জয় নিশ্চিত করেন কুসাক। ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। ৩ বল বাকি থাকতেই জিম্বাবুইয়ে গুটিয়ে যায় ৩২৬ রানে।
×