ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭ মার্চ পালন

সন্ত্রাস জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৮ মার্চ ২০১৫

সন্ত্রাস জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসায় শনিবার বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় গৌরবের অনন্য দিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের ৪৪তম বর্ষপূর্তি পালিত হলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর, সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, হাটে-ঘাটে-বাজারে, নগর-বন্দরে দিনভর বেজেছে জাতির জনকের সেই ঐতিহাসিক বজ্রকঠিন ভাষণটি। সেই ভাষণ শুনে দেশের মানুষ নতুন করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার নতুন শপথে দীক্ষিত হয়েছেন। শনিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধুর সেই জগৎখ্যাত ভাষণকে স্মরণ করে ধানমন্ডিতে অবস্থিত তাঁর প্রতিকৃতি মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে যায়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এবার ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে জাতীয়করণের দাবি উঠেছে সর্বত্র। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রথম প্রহর থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর সেই অবিনাশী ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রতিকৃতি জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা আপোস করেনি, বাংলাদেশেও হবে না। যারা মানুষ হত্যাকারী, সহিংস কর্মকা-ে লিপ্ত তাদের সঙ্গে সংলাপের কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যা কোন কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মসূচী হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী কর্মকা-। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গত দুই মাস ধরে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। খালেদা জিয়াকে নাশকতার পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগে দেশে কোন নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তিনি বলেন, যারা ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলে তারা জ্ঞানপাপী। বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজারও নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে অভিন্ন সেøাগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জামায়াত শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনীদের ঠাঁই নাই’ ‘অবৈধ হরতাল-অবরোধ মানি না মানব না, সহিংসতা রুখে দেব’। এমন স্লোগানে ধানমন্ডির পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা আর শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বাঙালী জাতি মূর্ত করে তোলে ইতিহাসের সেই অমর দিনটিকে। যুবলীগ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, হকার্স লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, যুব শ্রমিক লীগ, তাঁতি লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, বাকশাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক সমিতি, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সচেতন শিক্ষক সমাজ, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজš§, ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ঢাকা প্রবাসী সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোট, রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, ফাদার অব ন্যাশনস অর্গানাইজেশন, ফোর্স অব বঙ্গবন্ধু, স্বদেশ ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ডিপোমা কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, নাগরিক কমিটি, আইন সমিতি, শিশু-কিশোর যুব সাংস্কৃতিক জোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা উত্তরসূরি ফোরাম, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, যুব সাংস্কৃতিক জোটসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা মানেই গণতন্ত্রের মৃত্যুদ-ে দস্তখত করা। ৭ মার্চ ও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকারকারীরা ‘বাংলাদেশের রাজাকার, স্বাধীনতা ও ইতিহাসের শত্রু’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ৭ মার্চ ও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়াও অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চ অস্বীকারকারী ও আগুন সন্ত্রাসের নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা হলে, তা হবে মানুষ পোড়ানোর লাইসেন্স দেয়া। এ লড়াইয়ে পরাজিত হলে বিএনপি-জামায়াত ইতিহাসকে পুড়িয়ে দেবে ও গণতন্ত্রকে হত্যা করবে। জনগণ এখন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এ ঐক্যবদ্ধ জনগণকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, শিরীন আখতার এমপি, নাজমুল হক প্রধান এমপি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক হারুন হাবিব, ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।
×