ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে লাখ লাখ টন আলু পড়ে আছে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৮ মার্চ ২০১৫

মুন্সীগঞ্জে লাখ লাখ টন আলু পড়ে আছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ আলু উৎপাদনের সর্ববৃহৎ জেলা মুন্সীগঞ্জে লাখ লাখ টন আলু খোলা আকাশের নিচে পরে আছে। হরতাল অবরোধের কারণে এই আলু বাজারজাত কিংবা হিমাগারে সংরক্ষণ ব্যহত হচ্ছে। আলুর দর পতনে বিপাকে পরেছে কৃষককূল। গত মৌসুমে নদীতে ও রাস্তায় আলু ফেলে দেয়ার ঘটনার পরও এবার এই জেলার আলু চাষ লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে ৩৭ হাজার ৬শ’ হেক্টরে বেশী জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ এই জেলায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৩৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি। আবাহওয়া আকস্মিক খারাপ সত্ত্বেও এখানে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান, এ পর্যন্ত হেক্টর প্রতি আলুর গড় উৎপাদন সাড়ে ৪৩ টন। সেই অনুযায়ী জেলায় ১৩ লাখ টনেরও বেশী আলু উৎপাদিত হবে। কিন্তু জেলার ৬৭টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে চার লাখ টন। বাকি আলু চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এবার তা সম্ভব না হওয়ায় মৌসুমে শুরুতেই বিপদে পড়েছে কৃষক। জমিতেই আলুর বড় বড় স্থূপ করে রাখা হয়েছে খোলা। গত দু-দিন মুন্সীগঞ্জে বৃষ্টিতে এই আলুর ক্ষতিসাধিত হয়েছে। তিনি জানান, শনিবার পর্যন্তÍ ৩০ শতাংশ জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। আগামী আলু ২০ মার্চের মধ্যে উত্তোলন করতেই হবে। জেলার ৯০ শতাংশ কৃষক আলু চাষের উপর নির্ভরশীল। এখানকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি আলুর এই বিপর্যস্ত অবস্থায় নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া হিমাগারে আলু ভাড়া সহনীয় এবং বিদেশে আলু রফতানি ও আলুর বহুমুখী ব্যবহারের দাবি তুলেছে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট মহল। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, আলুর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে সব প্রচেষ্টা চলছে। সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর, সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে- জমিগুলোতে সারি সারি বস্তাভর্তি আলু। কোথাও আবার আলুর বড় স্থূপ। সবই এখন খোলা আকাশের নিচে। হাসাইল, পাঁচগাঁও, কামারখাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন কৃষি জমিতে ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা তাদের আলু জমির কেইল (আলুর সাড়ি) লাঙল দিয়ে চিরে রোদে আলু শুকাতে দিয়েছেন। রোদে শুকানোর পর এ সমস্ত আলু দুপুর দিকে মাটি হতে আলাদা করে চাঙ্গারি ভরে কেউ বাড়িতে কেউ জমির মধ্যে সংরক্ষণ করছেন। এ বছর কিছু জমিতে আলুর চামড়ায় ঘায়ের মতো স্পট হয়ে বেশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে। উৎপাদনও হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তবে বেশির ভাগ জমিতেই ফলন ভালো। সাতানিখিলের কৃষ মনির মিয়া বলেন,‘আলুর ফলন ভালো হলেও দর কম থাকায় দুশ্চিন্তার শেষ নাই।’ চরকেওয়ারের আমজাত হোসেন বলেন, ‘আলু নেয়ার জন্য ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। হরতাল অবরোধে আমাগো কিসমত নষ্ট হইতাছে।’ বজ্রযোগিনীর কৃষক শহিদুল মিয়া বলেন, ‘বেশি খরচ দিয়া কাছের হিমাগারে কিছু আলু নেয়ার চেষ্টা করতাছি। কিন্তু বাকি আলু কি করুম?’ মুন্সীগঞ্জের চাষীদের কাছ থেকে আলু কিনছেন না পাইকাররা। আলু উত্তোলনের এই মৌসুমে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের কবলে পরিবহনের অভাবে এখন লাখ লাখ টন আলু বিক্রি বা বাজারজাত করতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৪ লাখ টন আলু জেলায় সচল থাকা ৬৭টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি ৯ লাখ টন আলু বাজারজাতকরণ ও বাড়ির আঙ্গিনায় গোলাঘরে, আলু জমিতে সংরক্ষণ করে কৃষক। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হরতালের কারণে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাঠে-ময়দানে খোলা আকাশের নিচে লাখ লাখ বস্তাভর্তি আলু স্তূপ আকারে রয়েছে। হিমাগারের অভাবে সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষীরা। উপরন্তু সীমিত সংখ্যক হিমাগারগুলোতে অগ্রিম কোটা বিক্রি হয়ে যাওয়ায় উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন চাষীরা।
×