ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারীর হাতের ছোঁয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৮ মার্চ ২০১৫

নারীর হাতের ছোঁয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা

তাহমিন হক ববি, নীলফামারী থেকে জানান, হাতের ছোঁয়ায় উত্তরের গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার দরিদ্র নারীর সুচের ফোঁড়, ফসলের মাঠে, মাটি কাটা এমনকি শক্ত হাতে খড়ির ফার্মে খড়ি ফারাইয়ের শ্রমের মতো কাজ করছে নারী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তথ্যপ্রযুক্তির অনলাইনেও আয়ের পথে নিযুক্ত করেছে নারীরা। বেড়েছে তাদের আয় বর্ধন। গত কয়েক বছরের মধ্যে অভাব-অনটন আর দারিদ্র্য জয় করে তারা বয়ে এনেছেন সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাও কুড়িগ্রাম এলাকার বিভিন্ন জেলায় এখন নারীর জয় জয়কার। উত্তর জনপদের সকল সেক্টরে নারী শ্রমিকের কদর ও সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মঙ্গা জয়ে এ অঞ্চলের নারীদের ভূমিকা অতুলনীয়। চাতালের ধান সেদ্ধ করা, শুকানো, ঝাড়া-চালাসহ বস্তাবন্দির কাজে তাদের জুড়ি নেই। চাতালশিল্প ছাড়াও এ উপজেলায় তাঁতশিল্প, মাদুরশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, কাচের বোতল তৈরি, গার্মেন্টস কারখানা, নির্মাণ কাজ এবং কৃষি কাজে জড়িত রয়েছেন নারীরা। তাঁতশিল্পে নারীরা নিপুণ হাতে তৈরি করছেন বিভিন্ন নকশা আঁকা চাদর, কম্বল, তোয়ালে, পাপোশ, ওয়ালমেটসহ সুতার তৈরি রকমারি পোশাক। কৃষি উৎপাদনেও নারী পিছিয়ে নেই। তারা জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, নিড়ানি, এমনকি ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজেও পুরুষ শ্রমিকের সমান অবদান রাখছেন। উত্তরের নারীরা গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে স্বল্প আয়ের নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী গ্রামীণ ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে শ্রম দিয়ে অভাবের সংসারে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। গৃহবধূরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনসহ সেলাই কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন। অনলাইন আয়ে নারীরা এগিয়ে আসছে ॥ প্রযুক্তি শ্রম বাজারে নারীরা এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে অনলাইন কাজে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের শতকরা ৯ ভাগ নারী যোগ হয়েছে। এটি ৫০ ভাগ হলে বাংলাদেশই নেতৃত্ব দেবে অনলাইন কাজের ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেড যৌথভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে মেয়েরা তাদের পরিবারের কাজের মাঝে সময় করেই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ভালো উপার্জন করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, অনেক মেয়েই তার স্বামীর উৎসাহে ফ্রিল্যান্সিং করছে। কারণ এ জায়গাটি শুধুই মেধাভিত্তিক, নিরাপদ ও সহজ। একজন মেয়ে খুব সহজেই অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে। আমরা দেখছি, অনলাইন কাজের ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকে মেয়েরা এগিয়ে। কারণটা হলো মেধাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা। দিনে ৯০ টাকায় ১১ ঘণ্টা শ্রম দেয় ১১ নারী নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া থেকে জানান, মহিমা বেগমের সকাল-সন্ধ্যা ১১ ঘণ্টা শ্রমের মজুরি আড়াই কেজি ফেলন ডাল। দাম প্রায় ৯০ টাকা। নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ নেই তাই স্বামী আনোয়ার হেসেনের সঙ্গে ফেলন ডাল তুলছিলেন। সাগর ও নদীতে মাছ নেই। নিষেধাজ্ঞায় ওই পেশায় বেকারত্ব। রাস্তায় মাটি কাটার কাজও নেই। কী আর করার আছে। যা কাজ পায় তাই করছেন এ দম্পতি। একই দশা হেলেনা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, জয়নব, জাহানারা, কোহিনুরদের। বাদ নেই কিশোরী জয়নবও। সবাই দিনভর ডাল তুলছেন। প্রত্যেকে সংগৃহীত ডালের সাত ভাগের এক ভাগ পায় মজুরি। এসব নারীদের মুখে হাসি নেই। জীবিকার প্রয়োজনে এসব করছেন। এভাবে ১২টি ইউনিয়নের সর্বত্র কয়েকশ’ নারী শ্রমিক ডাল তোলার কাজে এখন ব্যস্ত। আর হয়ত সর্বোচ্চ ১০ দিন এ কাজ করতে পারবেন তারা। এরপর আবার বেকার। এভাবে কলাপাড়ায় নারী শ্রমিকরা পানির দরে বিক্রি করছেন তাদের শ্রম। অথচ এই উপজেলায় এখনও একজন পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি কমপক্ষে তিনশ’ টাকা। দেশ স্বাধীনের সাড়ে তিন যুগ পরও কমেনি বৈষম্য নারী-পুরুষ। জমির মালিকরা জানান, তাদের নারী শ্রমিকদের একাজে লাগালে পুরুষদের চেয়ে অন্তত অর্ধেক টাকা কম লাগে। ঝামেলাও নেই। পাকা ডাল সংগ্রহ করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এসব নারী শ্রমিকরা কেউ জানে না নারী দিবস কী। কেন এটি পালন করা হয়। নেই এসব নারী শ্রমিকদের দাবি আদায়ের কোন সংগঠন। বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কখনও কখনও হাতে হাত ধরে শহর কিংবা উপশহরের রাস্তায় প্লাকার্ড হাতে ধরিয়ে দাঁড় করায়। ভাড়া বাবদ কয়টি টাকা সঙ্গে নাস্তা দিয়ে বিদায় করে দেয়। এর বাইরে কিছুই জানেন না। অথচ ঘটা করে পালিত হয় নারী দিবস। যাদের জন্য দিবসটি তাদের শতকরা ৯৫ ভাগ জানেন না কেন এ দিবস। কেনই বা পালিত হয়।
×