ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাজারো জেলের জীবিকার কেন্দ্র ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না ॥ মহিউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৮ মার্চ ২০১৫

হাজারো জেলের জীবিকার কেন্দ্র ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না ॥ মহিউদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের সর্ববৃহত সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার ফিশারিঘাট। প্রায় দুশ’ বছর ধরে এ বাজার থেকে দেশের সর্বত্র ছোট বড় সব ধরনের মাছ বাজারজাতকরণ, সরবরাহকরণ, এমনকি প্রক্রিয়াজাতকরণও হয়ে থাকে। এই বাজারকে কেন্দ্র করে ৬ হাজার জেলে সম্প্রদায়ের সদস্য, কয়েক হাজার ফিশিং বোট বাণিজ্যিক কাজে জড়িত। এ বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বরফ কল ও কোল্ড স্টোরেজ। এই বাজারের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অর্ধকোটি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে বর্তমান সময়ে যেসব মাছ আমদানি হয়ে আসছে তাও এই বাজারকেন্দ্রিক বাজারজাত হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি এই কেন্দ্র থেকে বিদেশে মূল্যবান মৎস্য সম্পদ রফতানিও হয়ে থাকে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্পন্ন হয়ে থাকে। জেলে সম্প্রদায়ের বিশাল গোষ্ঠী বংশানুক্রমে এই এলাকায় বসবাস যেমন করছে, তেমনি দেশের মৎস্য সম্পদের আহরণ, বিপণন, বাজারজাতকরণ, রফতানিকরণসহ সামগ্রিক কর্মকা-ে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। এই বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রেণীর সমবায় কার্যক্রমও পরিচালিত হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে সরকারিভাবে কয়েকটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হলেও ফিশারিঘাটের মূল এই বাজারের ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্বকে হার মানাতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে দেশের বৃহত্তম এই বাজারের সামগ্রিক কর্মকা- সারাদেশের জন্য মৎস্য অবতরণ ও সরবরাহও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রাণপ্রবাহিনী শিরা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাশ ঘেঁষে তৃতীয় কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করার পর এই বাজারটি ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে ষড়যন্ত্রকারী একটি মহল। অথচ এই মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে ফিশারিঘাটের প্রতিষ্ঠিত এই মৎস্য বাজারের কোন ধরনের সাংঘর্ষিক ঘটনা নেই। ষড়যন্ত্রকারীরা অবৈধ পথে এই বাজারটি এখন তাদের অপস্বার্থে সরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। যে কারণে হাজার হাজার জেলে, বোট মালিক, বরফকল মালিক, কোল্ড স্টোরেজ মালিক এমনকি পরিবহন সেক্টরের মালিকরাও এ ঘটনায় উৎকণ্ঠিত। এই পরিস্থিতিতে গত ৩ মার্চ ফিশারিঘাটে সব শ্রেণীর মৎস্য ব্যবসায়ীদের পক্ষে এবং সাধারণ জেলে সম্প্রদায় বিশাল মিছিল করে সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং সামগ্রিক বিষয়ে অবহিত করেন। বিষয়টি অনুধাবনে এনে তিনি তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের এই অপতৎপরতা রোধে সবাইকে এক কাতারে আশার আহ্বান জানিয়ে ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার ফিশারিঘাট এলাকায় সমাবেশে হাজির হন। শনিবার মহিউদ্দিন চৌধুরী সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুশ’ বছরের প্রাচীন এই ফিশারিঘাট ও মাছ বাজার কোন অবস্থাতে অন্যত্র সরানো যাবে না। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশ্যই এই মাছ বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের স্বার্থ অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র অবহেলা করা যাবে না। বিবৃতিতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল মৎস্যজীবীদের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকা-ে লিপ্ত। জনগণকে যারা আমিষের পুষ্টি যোগায় সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে মহল বিশেষ পেছনের দিকে ঠেলে দিতে গভীর চক্রান্ত করছে। এটা কখনও বরদাস্ত করা হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মৎস্য ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে যারা খেলছেন তারা সাবধান হয়ে যান। গরিব মানুষের পেটে লাথি মারবেন না। আমি গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে ছিলাম যতদিন বেঁচে আছি তাদের পাশেই থাকব। তিনি আরও বলেন, এই ফিশারিঘাটে মৎস্য বাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ হাজার লোক সংশ্লিষ্ট। এই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বিপর্যয় ঘটানো যাবে না। এক শ্রেণীর অসৎ মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য বিপণন কেন্দ্রটি ধ্বংস করতে চায়। তিনি মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সাহস হারাবেন না, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রত্যেককে ট্রেড লাইসেন্স করে এবং সরকারী নিয়মকানুন অনুসরণ করে নিজেদের অস্তিত্বের ভিতকে পাকাপোক্ত করার আহ্বান জানান।
×