ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসাদই ক্ষমতায় থাকবেন

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৮ মার্চ ২০১৫

আসাদই ক্ষমতায় থাকবেন

জাতিসংঘে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমী শক্তির এটি মেনে নেয়ার সময় এসেছে যে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদই সিরিয়ায় ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যকে গোষ্ঠীগতভাবে খণ্ড-বিখণ্ড অঞ্চলে বিভক্ত করার ব্যর্থ কৌশল পরিত্যাগের আহ্বান জানান। খবর ইয়াহু-নিউজের। সিরীয় যুদ্ধের চতুর্থ বার্ষিকীর প্রাক্কালে জাতিসংঘে আসাদের দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রদূত বাশার জাফারি বলেন, তাঁর প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে (সিরিয়া) কোন শূন্যতা সৃষ্টি হোক তা চাই না। তাহলে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যেমনটি ঘটেছে লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন, কারণ তিনি একজন শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট। একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন যেটি হলো সিরীয় সেনাবাহিনী। চার বছর ধরে তিনি চাপ প্রতিরোধ করে আসছেন। কেবল তিনিই যে কোন সমাধান দিতে পারেন।’ ব্রিটেন ও ফ্রান্স আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, আসাদের ব্যাপারে তাদের নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি, যদিও আল কায়েদা থেকে উদ্ভূত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করার দিকেই তাদের মনোযোগ- যারা দামেস্কেরও শত্রু। জাফারি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। তারা এটি চায় না।’ গত মাসে কূটনীতিকরা বলেছেন, ‘সিরিয়া থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করা কয়েকটি ইইউভুক্ত দেশ ঘরোয়াভাবে বলাবলি করছেন, দামেস্কের সঙ্গে আরও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে। কূটনীতিকরা বলেছেন, যেসব দেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগের ডাক এসেছে কিংবা যারা এর সমর্থক সেসব দেশের মধ্যে আছে সুইডেন, ডেনমার্ক, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও স্পেন। তাদের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রও আছে- যে দেশ দামেস্ক থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেনি। ইইউর বাইরে থাকা নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডও এ ধরনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। এই দেশগুলো বলেছে, আইএসের হুমকি আসাদকে মন্দের ভালতে পরিণত করেছে। ওই কূটনীতিকদের মতে, এই বাস্তবতায় ওই চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একজন সম্ভাবনাময় মিত্র হিসেবে দামেস্কের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন কর্মকর্তারা জাফারির সর্বশেষ বিবৃতি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেননি। তারা জাতিসংঘে ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ারের নিরাপত্তা পরিষদে করা সাম্প্রতিক মন্তব্যের উল্লেখ করেন যাতে তিনি এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে লড়াই চালাতে দামস্কেকে শরিক করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য শক্তি ২০১১তে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আসাদের নিন্দা করে আসছে। তবে জাফারি জোর দেন যে, গত বছর সাধারণ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত আসাদকে ক্ষমতায় রাখাই শান্তি ও ঐক্যের একমাত্র পথ। আসাদের শত্রুরা ওই নির্বাচনকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাফারি বলেন, বহু ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা জোরদার করতে চেয়ে দামেস্ক সফর করেছে। তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোন দেশের নাম বলেননি। ‘আমরা সকলকে বলছি... আপনারা যদি এই সহযোগিতাকে ফলপ্রসূ করতে চান তবে আপনাদের আবার দূতাবাস খুলতে দামেস্ক ফিরে যেতে হবে।’ ‘নিরাপত্তা সহযোগিতার বিনিময়ে আসাদকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বৈধতায় পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবেন দামেস্ক এমনটিই চায় বলে তিনি আভাস দেন। জাফারি বলেন, ‘এ ধরনের সহযোগিতার সুফল হতে হবে পারস্পরিক- শুধু একতরফা নয়।’ তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তথাকথিত ‘মধ্যপন্থী’ বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও সশস্ত্র করার কৌশলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এতে করে আইএসের হাতেই অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে। ‘এটি সিরিয়ার লড়াই নয়। তাঁর দেশে আইএস ও অন্যান্য জেহাদী গোষ্ঠীতে হাজার হাজার বিদেশী যোদ্ধার যোগদানের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সিরীয় সরকার ও সিরীয় জনগণের বিরুদ্ধে চালানো একটি আন্তর্জাতিক ত্রাস সৃষ্টিকারী যুদ্ধ।’
×