ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নিন ॥ কেরিকে ১১ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ মার্চ ২০১৫

সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নিন ॥ কেরিকে ১১ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নিতে মার্কিন কংগ্রেসের ১১ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে চিঠি দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের ১১ সদস্য সহিংসতায় বাংলাদেশে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে বুধবার কেরিকে চিঠিটি পাঠান। এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার চিত্র মার্কিন কংগ্রেস ও জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে দেয়া চিঠিতে সহিংসতা থেকে উত্তরণ ও বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশী নেতাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান জানান কংগ্রেসম্যানরা। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের অর্জনকে ধূলিসাত করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা করে চিঠিতে তাঁরা বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে চলমান সহিংসতা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাঁরা কেরিকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দলের দ্বিমত রয়েছে তার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান ঘটানো উচিত। ভবিষ্যতের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মকা- চালাতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তাঁরা। চিঠির শেষে ১১ মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে সঙ্কট উত্তরণে মার্কিন সহায়তার বার্তা দেয়ায় কেরিকে ধন্যবান জানান। একই সঙ্গে চলমান সহিংসতা ও নাশকতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে এ অচলাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যুক্ত থাকতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কংগ্রেস সদস্যরা হলেন জোসেফ ক্রাউলি, পিটার কিং, মাইক হোন্ডা, জেরাল্ড ই কনোলি, আর্ল ব্লামেনুর, এলিয়ট এঞ্জেল, গ্রেস মেং, স্টিভ স্যাবট, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, হোশে সেরানো ও উইলিয়াম আর কিটিং। এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি ম্যাট স্যামনের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এক বৈঠকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। বুধবার ওয়াশিংটনে কংগ্রেসম্যান ম্যাট স্যামনের সঙ্গে এক বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন জানান , দশম জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনের বর্ষ পূর্তিতে বিএনপি- জামায়াত জোট অবিরত অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় এবং সন্ত্রাসী কর্মকা-, বোমা বিস্ফোরণ, যানবাহনে অগ্নিকা-ের মাধ্যমে নির্বিচারে নিরাপরাধ মানুষ হত্যা করে চলেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের সংগ্রাম মূলত উগ্রবাদী, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে। মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন কংগ্রেসম্যান স্যামনকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম হয় চল্লিশ দশকের শেষের দিকে। এই দলের ভিত্তিগত মূলনীতি হলো গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও ন্যায্য দাবির প্রতিফলন ঘটিয়েছিল। পরবর্তীতে সম্ভাবনাময় তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী ও সুসংহত হয় এবং তাঁরই নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাষ্ট্রদূত জানান, তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকা-ের পর সামরিক শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর জন্ম হয়। তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকরা সুচিন্তিতভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সুরক্ষা প্রদান করেছে এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে। রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন বলেন, সরকার বর্তমানে স্বাধীনতাবিরোধী এবং উগ্রবাদীদের নির্মূলে বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। রাষ্ট্রদূত আরও জানান, সাধারণ জনগণ বিএনপি ও তার মিত্রদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ও রাজনৈতিক কর্মসূচীতে সাড়া দেয়নি। প্রাত্যহিক নাগরিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শুরু থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ। ঐতিহ্যগতভাবে সকল ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রকে নিয়ে সন্ত্রাস দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত কংগ্রেসম্যানকে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নারীবান্ধব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে নারীদের দেশের মূল ধারায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান তিনি। কংগ্রেসম্যান ম্যাট স্যামন সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করার জন্য রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ^াস দেন। কংগ্রেসম্যান স্যামন রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিনকে কার্যকালীন সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের আশ^াস প্রদান করেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) নাঈম উদ্দিন আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইনের সঙ্গে সাক্ষাত করে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস কর্মকা-ের বিষয়টি হাইকমিশনারকে অবহিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি যেসব কাপুরুষোচিত কর্মকা- ঘটানো হয়েছে তার সঙ্গে জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটসহ (আইএস) বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠীর কর্মকা-ের তফাত নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের কাজের সঙ্গে বাংলাদেশ সব সময়ই সহযোগিতা করে আসছে। বৈঠকে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতির একটা সমাধান খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি তাঁর দফতরের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও তথ্য বিনিময় করার পরামর্শ দেন।
×