ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের নিবন্ধন চলছে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৭ মার্চ ২০১৫

বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের নিবন্ধন  চলছে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক নারী কর্মীর নিবন্ধন চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে নারী কর্মীর নাম নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন বিভাগে যে ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। এর পর আর কোন সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে বিএমইটি। সৌদিতে কর্মী নিয়োগের চুক্তি হওয়ার পর নিবন্ধন নিয়ে সারা দেশে হট্টগোল হওয়ার কারণে এই সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। সূত্র জানিযেছে, ৫ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন হবে ঢাকা বিভাগে। পরে পর্যায়ক্রমে হবে প্রতিটি বিভাগে। ঢাকায় নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে খোলা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। সেন্টারে গিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন। যে নারী বিদেশে চাকরি করতে ইচ্ছুক তার বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। নিবন্ধনের জন্য খরচ ৩০০ টাকা ধরা হযেছে। এর মধ্যে সরকারী ফি ২০০ টাকা এবং নিবন্ধন ফর্ম পূরণ বাবদ ১০০ টাকা। নিবন্ধন করতে লাগবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র। পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। জন্মনিবন্ধনে যে নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে পাসপোর্টেও থাকতে হবে হুবহু সেই নাম-ঠিকানা। শিক্ষাগত যোগ্যতার একসেট ফটোকপি সনদপত্র (যদি থাকে), প্রশিক্ষণের সনদ (যদি থাকে), অভিজ্ঞতার সনদ (যদি থাকে) লাগবে। এ ছাড়া লাগবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র অথবা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দেয়া কর্মীর চারিত্রিক সনদপত্র। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই নিবন্ধন চলবে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নিবন্ধন হবে আগামী ১২ থেকে ১৬ মার্চ। ১৭ থেকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং ২৪ থেকে ২৮ মার্চ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে নিবন্ধন হবে। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের নগর ডিজিটাল সেন্টার এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে নিবন্ধন করা যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব গমনেচ্ছুক কর্মীর নাম নিবন্ধনে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ছিল। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি কর্মীর নাম নিবন্ধনে এক থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি নিয়েছে নিবন্ধন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালাল চক্র। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, তাদের বাড়তি টাকা না দিলে নাম নিবন্ধন করতে পারতেন না কোন কর্মী। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। সৌদিতে নিবন্ধন শুরু হয়েছিল গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ নারী-পুরুষ নাম নিবন্ধন করেছেন। প্রতি কর্মীকেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনলাইনে নাম নিবন্ধন করতে হয়েছে। এবার নারী কর্মী নিবন্ধনের বিষয়ে জানার জন্য বিএমইটির ডিজির সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মোঃ ইফতেখার হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে নিবন্ধন নিয়ে অভিযোগ ওঠায় এবার ৩ শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ যদি এই টাকার চেয়ে এক টাকা বেশি নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই সময় সারা দেশে ১৫ লাখের বেশি কর্মী সৌদি যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি প্রতিনিধিদল ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। তার আগের দিন থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন শুরু করে বিএমইটি। প্রথমে চার দিনের জন্য নাম নিবন্ধনের সময় ঠিক করা হয়। পরে কর্মীসংখ্যা ব্যাপক হওয়ায় রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিবন্ধনের শেষদিনে ভিড় সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। পরে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ব্যবসার সুযোগ নেয়। নাম নিবন্ধনের জন্য প্রতিকর্মীর কাছে থেকে এক-দেড় শ’ টাকা বেশি নিয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ শুরু করেন। যারা বাড়তি টাকা দেন তাদের আর কোন বেগ পেতে হয়নি। পরে এক পর্যায়ে নিবন্ধন ফর্ম শেষ হয়ে গেলে ওই ফর্ম ফটোকপি বিক্রি করা শুরু হয়। প্রতিটি ফর্ম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি শুরু করে। এই টাকাও কর্মীদের বাড়তি দিতে হচ্ছে। বিনামূল্যের নিবন্ধন ফর্ম ফটোকপি করে বিক্রি করেছে। অতিরিক্ত মূল্যে নিবন্ধন ফর্মের ফটোকপি বিক্রির টাকা বিএমইটি উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে পিয়ন-দারোয়ানের হাতে গিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও এই সুযোগে ভালই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। পরে মন্ত্রণালয় নাম নিবন্ধনের শেষদিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো থেকেও বিদেশ গমনেচ্ছুরা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ঢাকা ও জেলা শহরে আসতে হবে না। এই ঘোষণার পর ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে নিবন্ধনকৃতদের ভিড় কমে যায়। এর আগে নাম নিবন্ধনের জন্য দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটে। ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ভবনেও হট্টগোল হয়েছে। পরে নিরাপত্তা রক্ষীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ কারণে বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নাম নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে দেয়।
×