ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বান্দরবানে নিঃস্ব পরিবারকে জিম্মি করে অর্থ আদায়

৫৩ জন মালয়েশিয়া পাচার

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৭ মার্চ ২০১৫

৫৩ জন মালয়েশিয়া পাচার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ৬ মার্চ ॥ লামা উপজেলা থেকে গত চার মাসে ৫৩জনকে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচার করে তাদের পরিবারকে জিন্মি করে অর্থ আদায় করছে পাচারকারীরা। মানবাধিকার কমিশন বান্দরবান জেলা শাখার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৩ জনকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াপাচার ও বিক্রি করা হয়। এদের মধ্যে থেকে মালয়েশিয়া নেবার পথে থাইল্যান্ডে এবং মালয়েশিয়া নিয়ে হত্যার হুমকি ও নির্যাতন করে তাদের পরিবার থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আরও জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে সাগরপথে ট্রলারযোগে তাদের মালয়েশিয়া পাচার ও বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর মুখে মানবেতর জীবন-যাপন, অনেকে কারাগারে বন্দী এবং অনেকের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পাচার হয়ে যাওয়া অনেকের পরিবারকে দেশের পাচারকারী চক্র ও তাদের বিদেশী সহযোগীরা পাচার হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা শুধু বেঁচে আছে এই খবর দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়ংছা এলাকার রওশন আরা বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার পর থেকে স্বামী বেঁচে আছে কিনা খবর পায়নি, এখন পাঠানোর টাকা ফেরত পেলে কোনভাবে বাঁচতে পারব। পাচার হয়ে যাওয়া অনেকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাদের রক্ষা করতে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে দফায় দফায় অর্থ দিয়েও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এদের মধ্যে অনেকের কোন হদিস নেই, পরিবারের সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি লামা উপজেলার ইয়ংছা এলাকার রুবি আক্তার তার স্বামী আক্কাস উদ্দিনকে নিজের জায়গা বিক্রি করে স্থানীয় দালাল বজল আহম্মেদকে প্রায় ২ লাখ টাকা পরিশোধ করে মালেশিয়ায় পাঠায়। আক্কাস ২৯ জানুয়ারি থাইল্যান্ড পৌঁছান এরপর থেকে তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। রুবি আক্তার জানান, অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামী আরও টাকা দালালকে পরিশোধের জন্য ফোনে কান্নাকাটি করছেন। পাচার হয়ে যাওয়া ৫৩জনের সবাই লামা উপজেলার হিমছড়ি, শামুকছড়া, বদুর ঝিড়ি, ইয়ংছা বাজার, ভিলিজার পাড়া, পোয়াংবাড়ি, বাজার পাড়া, মেম্বার পাড়া, কাঁঠালছড়া, ঠান্ডা ঝিড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাদের উপজেলার ইয়ংছা মৌজার হিমছড়ি এলাকার বজল আহম্মেদ, সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের পুত্র কাফি উদ্দিন, শামুকছড়ার জমির উদ্দিন, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মোজাফফর, জসিম উদ্দিন ও আব্দুর শুকুর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। বজল স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়ংছা এলাকার বাসিন্দা নবী হোসেন তার ভাই বেলাল উদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠান কিন্তু ভাইয়ের কোন হদিস না পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি লামা থানায় পাচারকারী বজল আহম্মেদ, নুরুল ইসলাম, রুবি আক্তার, আবু জাকেরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আরও জানা গেছে, উক্ত মামলায় বজল আহম্মেদ গ্রেফতার করে পুলিশ। পাচারকারী দলের অন্য তিন সদস্য নুরুল ইসলাম, রুবি আক্তার, আবু জাকের ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়ংছা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের আটক না করায় ভুক্তভোগীদের হুমকি দিচ্ছে। এই ব্যাপারে মামলার বাদী নবী হোসেন বলেন, গত দুই মাসে ইয়ংছা থেকে অন্তত ১৮জনকে পাচার করা হলেও তাদের কারও হদিস নেই। উল্টো আমরা হুমকি পাচ্ছি। গত বছরের শেষের দিকে মালয়েশিয়া পাচারের সময় লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাদেন বাগান থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার এবং ৪ পাচারকারীকে আটক করে পুলিশ। ‘পানি পথে বিদেশ যেতে কোন টাকা লাগেনা’ Ñএভাবে স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে অর্থ আদায় করছে। এই ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশন বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি ডনাই প্রু নেলী বলেন, দ্রুত এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরও অনেকে নিঃস্ব হবে। স্থানীয়রা মনে করছে, অবৈধ পথে পাচার রুখতে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে এই ধরনের ঘটনায় শিকার হয়ে অনেক নিঃস্ব পরিবার আরও নিঃস্ব হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বান্দরবানের লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×