ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে ইরাক

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৭ মার্চ ২০১৫

হুমকির মুখে ইরাক

ইরাককে দখল করে নিচ্ছে ইরান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অবশ্যই সেখানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে রণক্ষেত্রে স্থলসৈন্য পাঠাতে হবে। সৌদি আরব এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। ইরান যাতে ইরাক দখল না করতে পারে, সেজন্য আইএস বিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনী পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আইএস অধিকৃত ইরাকী শহর তিকরিতের ওপর সরকারী বাহিনীর অভিযানের প্রাক্কালে সেখান থেকে হাজার হাজার লোক পালিয়ে যাচ্ছে। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইনের। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সউদ আল ফয়সল তার মার্কিন প্রতিপক্ষ জন কেরিকে বলেছেন, তিনি (কেরি) ইরানকে ইরাক ‘দখল করে’ নিতে দেয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে। এই বক্তব্য তেহরানের প্রতি হোয়াইট হাউসের গৃহীত নীতির প্রশ্নে ইসরাইল সম্প্রতি যে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তারই প্রতিধ্বনি। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার জোটের মিত্র রাষ্ট্রগুলো সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের অবস্থানের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে, তবে তারা সেখানে স্থলসৈন্য পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর ফলে উভয় দেশে কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলের বাইরে পরিচালিত আইএসবিরোধী লড়াইয়ে ইরান এবং হিজবুল্লাহর মতো মিত্র শিয়া মিলিশিয়াদের প্রবল উপস্থিতি রয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইরানের সুন্নি প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ইরাক সরকার বর্তমানে বাগদাদের উত্তরে সাদ্দাম হোসেনের জন্মস্থান তিকরিতে আইএসের অবস্থানগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। তবে, এই বাহিনীর অধিকাংশই সরকারের মিত্র শিয়া মিলিশিয়াদের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে, যাদের নেতারা ইরানী শাসকদের ঘনিষ্ঠ, যদিও তিকরিতের জনগোষ্ঠী প্রধানত সুন্নী। জাতিসংঘের মতে সামরিক অভিযানের মুখে তিকরিতের প্রায় ২৮ হাজার লোক তাদের বাড়িঘর ফেলে পালিয়েছে। প্রিন্স সউদ বলেন, ‘আমরা কেন উদ্বিগ্ন তিকরিত হলো প্রধান দৃষ্টান্ত। ইরান দেশটি (ইরাক) দখল করে নিচ্ছে।’ ইরানের পরমাণু প্রশ্নে একটি চুক্তির সম্ভাবনা এবং ক্রমবর্ধমানভাবে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া সত্ত্বেও আরব বিশ্বে পুনরায় সেনা পাঠাতে প্রেসিডেন্ট ওবামার অস্বীকৃতি আমেরিকার মিত্রদের মধ্যে আতঙ্কের ছায়াপাত করেছে। সৌদি আরবের ভয় আরব বিশ্বের বহুবিধ সঙ্কট ইরানকে তার শক্তি বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। সিরিয়ায় আসাদ সরকার ইরানী অর্থ, ইরানী উপদেষ্টাদের সমর্থন এবং হিজবুল্লাহর ওপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বুহ মনসুর হাদিকে রাজধানী থেকে বিতাড়িত করেছে। গত গ্রীষ্মে ইরাকে আইএস জঙ্গীদের অগ্রাভিযানের মুখে সেনাবাহিনী ভেঙ্গে পড়ায় শিয়া মিলিশিয়ারা নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। তিকরিতে বর্তমান অভিযানের পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছেন দুই ব্যক্তি। একজন হলেন ইরানের ঘনিষ্ঠ শিয়া মিলিশিয়া দল শক্তিশালী বদর অর্গানাইজেশন নেতা হাদি আল আমেরি। অপরজন বিপ্লবী রক্ষীদের বৈদেশিক সামরিক তৎপরতা শাখা ইরানী আল কুদস বাহিনীর নেতা কাসেম সুলায়মানি। সুলায়মানি তিকরিতের পূর্বে একটি গ্রাম থেকে তিকরিত হামলার সমন্বয় করছেন। গত মাসে তিনি ইরানের এক সমাবেশ থেকে যে ভাষণ দেন তা উপসাগরীয় দেশগুলোতে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ইসলামী বিপ্লবের রফতানি প্রত্যক্ষ করছি। বাহরাইন এবং ইরাক থেকে সিরিয়া, ইয়েমেন ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত।’ সৌদি আরবের ইরাক ও ইয়েমেনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং নিজের ভূখ-েও অশান্ত শিয়া সংখ্যালঘুরা রয়েছে। প্রিন্স সউদ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি ইরান, সিরিয়া ও লেবানন এবং ইয়েমেনও ইরাকে জড়িয়ে পড়েছে। ইরানকে যদি একদাঞ্চলের সঙ্কটের পক্ষ না হয়ে সমাধানের পক্ষ হতে হয় তবে এসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কেরি জোর দিয়েছেন যে, পরমাণু চুক্তি এতদাঞ্চলে ইরানী সম্প্রসারণের ব্যাপকতর প্রশ্নের চেয়ে পৃথক এবং তিনি তেহরানের সঙ্গে কোন ব্যাপক বড় ধরনের দর কষাকষিতে যেতে চাচ্ছেন না।
×