ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু বলেশ্বরই নয়!

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৭ মার্চ ২০১৫

শুধু বলেশ্বরই নয়!

শুধু কি বলেশ্বর! বল হারিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে বাংলার কত শত নদী! আমরাও বাঁধ দিয়ে গলা টিপে ধরেছি কত নদীর। বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠে আরও একটি একদা-প্রমত্তা নদী বলেশ্বরের করুণ দুর্দশার ছবি উঠে এসেছে। এক সময়ের প্রমত্তা বলেশ্বর এখন কালের সাক্ষী মাত্র। নাব্য হারিয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে বলেশ্বর। ফলে নৌযোগাযোগ ও কৃষিকাজে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দখলদার আর লাঠিয়াল বাহিনী গ্রাস করে নিয়েছে নদীর দু’পারের শত শত বিঘা খাস জমি। দখলবাজদের কবলে নদীর অস্তিত্বই বিলীন হতে বসেছে। একই কাহিনী নদীমাতৃক বাংলাদেশের বহু নদীরই। নদী বহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এদেশের মতো এমন নদী হত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়। গত মাসেই জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে এককালের খরস্রোতা নদ ব্রহ্মপুত্রের মরণদশার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। শুধু ব্রহ্মপুত্র তো নয়, দেশের অসংখ্য নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। ফসলী মাঠ আর ইটের ভাঁটিসহ নানা বাণিজ্যিক-তৎপরতায় যেন রূপান্তরিত হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর দেহবাঁক। পানি হ্রাস পাওয়ায় একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল, অন্যদিকে তেমনি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছে চাষাবাদ। ক্রমাগত পলি জমে শত নদীর নাব্য ক্রমশই কমে যাচ্ছে। শুকনো মৌসুমে এখন দেশের অধিকাংশ নদীতেই সামান্য পরিমাণে পানি থাকে। ফলে সেচ কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হয়। বেশিরভাগ নদীর শাখা খালে গ্রীষ্মকাল আসার আগেই পানি শুকিয়ে যায়। সেচ কাজে পানির অভাব নিত্যনৈমিত্তিক। ফলস্বরূপ এলাকার চাষীরাই দুর্বিপাকে পড়ে। ক্রমশ এ ভোগান্তি বাড়ছে বলে বলেশ্বর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর চাষীরা উল্লেখ করেছেন। ধান, গম, সূর্যমুখী, বাদাম, কলাই, পান, কুল, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে নদীর আশপাশের এসব জমিতে। কিন্তু সেচ মৌসুমের শুরুতেই পানি সঙ্কটে হতাশ চাষীরা। বলা দরকার এখানকার ৯০ ভাগ পরিবারই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। নদীর ওপর নির্ভরশীল তাঁদের জীবনধারা। নদীকে বইতে দিতে হবে তার নিজস্ব ছন্দে। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার চালানো হলে এক পর্যায়ে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হয়Ñ এমন উদাহরণ যথেষ্ট। তারপরও মানুষের স্বেচ্ছাচারী কর্মকা- থেমে নেই। দেশের মৃতপ্রায় নদ-নদীকে বাঁচানোর জন্য আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি-দুটি নদী নয়, দেশের মরণাপন্ন সব নদীর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কালবিলম্ব না করে নদী খনন করা দরকার। নদী নষ্ট করে যারা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছেন, সেইসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে, নদী বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। বাঁচবে দেশের মানুষ।
×