সৌদি আরব ইসলামিক স্টেটসহ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এর ভূখ-ে মোতায়েন পাকিস্তানী সৈন্যদের সংখ্যা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ওপর চাপ দেবে। তবে ইসলামাবাদ রিয়াদের সঙ্গে এর নিরাপত্তা সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। নওয়াজ শরীফ তিন দিনের সফরে বুধবার সৌদি আরব পৌঁছান। খবর গালফ নিউজ ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইনের।
এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, সৌদিরা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে খুবই আগ্রহী। আর এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে খুবই আগ্রহের চোখে দেখা হয়, কারণ পাকিস্তান বন্ধু হিসেবে সৌদি আরবকে দীর্ঘদিন ধরে সৈন্য দিয়ে সহায়তা করে এসেছে। পাকিস্তানের মতো সৌদি আরবও জঙ্গী হামলার হুমকির মুখে রয়েছে। রিয়াদ ইসলামিক স্টেট নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এ জঙ্গী সংগঠনটি ইরাক ও সিরিয়াতে বিরাট ভূখ- দখল করে রয়েছে এবং সৌদি আরবের ভূখ-ে হামলা চালাতে চাচ্ছে। তবে নওয়াজ শরীফের নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদ দুররানি বলেন, সৌদি আরবকে ইসলামিক স্টেটের হামলার ব্যাপকতর বিপদ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে মধ্যপ্রাচ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে সৌদিদের সঙ্গ সম্পর্কে জড়ানো এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এটি আমাদের নতুন নতুন বিতর্কের মুখে ঠেলে দেবে। তা ছাড়া, দু’টি দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য হাতে নেয়া জাতীয় জরুরী পরিকল্পনার আলোচ্য সূচীর শীর্ষে রয়েছে মাদ্রাসাগুলোকে বিদেশীদের অর্থ সাহায্যের ইস্যুটি।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে যে, প্রায় ১৭টি মুসলিম ও অমুসলিম দেশ ঐ প্রদেশের প্রায় ১ হাজার মাদ্রাসাকে শত শত কোটি রুপী সাহায্য দেয়। কর্তৃপক্ষ প্রায় এক বছর ধরে একথা অস্বীকার করে এসেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক লিখিত জবাবে পার্লামেন্ট সদস্যদের দাতাদেশগুলোর নাম এবং পাকিস্তানের মাদ্রাসাগুলোকে তাদের দেয়া সাহায্যের পরিমাণ জানায়। কাতার ১৯ কোটি ৮০ লাখ রুপী, কুয়েত ৫ কোটি ৬০ লাখ রুপী, সৌদি আবার ৪ কোটি ২০ লাখ রুপী, দুবাই ১ কোটি ১০ লাখ, নেদারল্যান্ডস ২৫ লাখ রুপী, যুক্তরাষ্ট্র ৭ লাখ রুপী, হংকং ১ লাখ রুপী এবং বাহরাইন ১৮ লাখ রুপী। শরীফ সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হওয়ায় আগে এক উর্ধতন পাকিস্তানী কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরব এক বন্ধু ও এক অব্যাহত সমস্যারও উৎস। এ সম্পর্ক সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই ডেকে আনছে।
সৌদি আরবে বর্তমানে কত সংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে তাদের সংখ্যা অল্প বলে জানা যায়। ইসলামাবাদ রিয়াদের সঙ্গে এর নিরাপত্তা সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে সতর্ক বলে বিশ্লেষকরা জানান। ১৯৭০-এর দশক থেকেই অভিন্ন নিরাপত্তা স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে দুটি দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন সৌদি আরবে তেলের উৎপাদন বিরাট পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বহু পাকিস্তানীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। সৌদি আরবে কাজ করেছিলেন এমন এক পাকিস্তানী জেনারেল বলেন, ১৯৮০’র দশকে সৌদিরা ইরানী হুমকি মোকাবেলায় পাকিস্তানী সৈন্যদের রাখতে আগ্রহী ছিল। তিনি বলেন, সৌদিদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও বাইরের হুমকি উভয়ের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দেন যে, বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়া প্রতিবেশীর কাজ থেকে ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য প্রত্যাশা করা সৌদি আরবের জন্য মাত্রাতিরিক্ত আশা করাই হবে। পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় পেশোয়ার শহরে তালেবানের হাতে ১৫০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা থেকে ঐ ঝুঁকি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: