ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়েডসনের হ্যাটট্রিকে শেখ জামালের শিরোপা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ মার্চ ২০১৫

ওয়েডসনের হ্যাটট্রিকে শেখ জামালের শিরোপা

রুমেল খান ॥ শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব ৬, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ৪। পাঠকমাত্রই ধরে নিতে পারেন, এটা বুঝি ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালের টাইব্রেকারের ফল। না, এটা ১২০ মিনিটের খেলার ফল। এমনই বিস্ময়কর গোলবন্যার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোলের নহর বয়ে যাওয়া দেখতে অবশ্য স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খুব বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তাতে খেলার উত্তেজনার কোন কমতি হয়নি। হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়েডসন এ্যানলেসমের নয়নাভিরাম হ্যাটট্রিকে দুর্দান্ত-স্মরণীয় জয় কুড়িয়ে নেয় কোচ মারুফুল হক ও ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদেরের দল শেখ জামাল। ঢাকা আবাহনীর মতো রেকর্ড ও টানা পাঁচবার ফাইনাল খেলে এ আসরে এটা তাদের তৃতীয় শিরোপা এবং টানা দ্বিতীয় শিরোপা। মজার ব্যাপারÑ গত আসরের ফাইনালেও শেখ জামাল হারিয়েছিল এই মুক্তিযোদ্ধাকেই! তবে এবারের মতো সেবার এত গোলের বন্যা বয়নি (১-০)। পক্ষান্তরে আটবার ফাইনাল খেলে এ নিয়ে পাঁচবারই ফাইনালে হারের তেতো স্বাদ পেল মুক্তিযোদ্ধা। বৃহস্পতিবার তারা জিতলে নিতে পারত মধুর প্রতিশোধ। তা আর পারেনি তারা। সর্বশেষ তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই এক যুগ আগে! এক যুগের শিরোপা-খরার অবসান ঘটানোর সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপ অনেকদিন পোড়াবে নব্বই দশকের ‘ড্রিমটিম’ এবং বর্তমানে ‘অলরেডস্’ খ্যাত মুক্তি শিবিরকে অথচ ম্যাচের প্রথমার্ধে তারাই এগিয়ে ছিল ৪-২ গোলে! কিন্তু জামাল দ্বিতীয়ার্ধে টানা ৪ গোল করে আবারও প্রমাণ করল তারাই অন্যদের চেয়ে ম্যাচ টেম্পারমেন্টে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে। ৬ মিনিটে জামালের মামুনুলের কাছ থেকে লম্বা পাস পান সোহেল রানা। রানার উড়ন্ত ক্রস থেকে হেড করে দলকে এগিয়ে নেন জামালের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ডর্লিংটন (১-০)। ১ মিনিট পরেই সমতা আনে মুক্তি। ১ মিনিটে মুক্তির ফয়সালের ক্রস ডি-বক্সের মধ্যে জামালের ডিফেন্ডার ইয়ামিন মুন্না ক্লিয়ার করতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন (১-১)! ১৩ মিনিটে রায়হানের লম্বা থ্রো ডি-বক্সের মধ্যে এমেকার কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেন ওয়েডসন এ্যানসেলমে (২-১)। ৩০ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে মুক্তির এনামুলের লম্বা থ্রো বক্সের মধ্যে ঘানার আব্বাস ইনুসার হেড গিয়ে পড়ে গিনির ফরোয়ার্ড কামারা সারবার পায়ে। কামারা প্লেসিং শটে জামালের জালে বল পাঠান (২-২)। ৩৯ মিনিটে কর্নার পায় মুক্তিযোদ্ধা। আকরামুজ্জামান লিটনের কর্নার থেকে উড়ন্ত বলে হেড করে গোল করেন মুক্তির অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড এনামুল হক (৩-২)। ৪১ মিনিটে ফয়সালের ক্রস থেকে কামারার সহায়তায় বা পায়ের গড়ানো শটে আবারও গোল করেন এনামুল (৪-২)। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবারও জমে ওঠে দুই দলের লড়াই। ৬২ মিনিটে বল নিয়ে মুক্তির বক্সে ঢুকে পড়েন ওয়েডসন। মুক্তির গোলরক্ষক টিটু এগিয়ে বল ধরতে গিয়ে পড়ে গেলে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে খুব সহজেই মুক্তির জালে পাঠান ওয়েডসন (৩-৪)। ৭০ মিনিটে আবারও গোল করে ম্যাচে নিজের হ্যাটট্রিক (টুর্নামেন্টে এটা তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক) পূর্ণ করেন ওয়েডসন (৪-৪)। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোন গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচটি। অতিরিক্ত সময়ে ল্যান্ডিং ডার্বোয়ের কাট ব্যাক থেকে গোল করেন জামালের এমেকা ডার্লিংটন (৫-৪)। ১১৮ মিনিট শেষে মুক্তির কফিনে শেষ পেরেকে ঠোকেন রুবেল মিয়া। ওয়েডসনের পাস থেকে গোল করেন শেখ জামালের বদলি মিডফিল্ডার রুবেল মিয়া (৬-৪)। ম্যাচ শেষে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি বাদল রায় ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন জামাল পায় ৫ লাখ টাকা ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। রানার্সআপ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র পায় ৩ লাখ টাকা ও রানার্সআপ ট্রফি। ঢাকা মোহামেডান পায় ফেয়ার প্লে ট্রফি। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন জামালের ওয়েডসন। এ আসরে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ আটে নাম লেখায় জামাল। গ্রুপে তারা হারায় ফেনী সকার ক্লাবকে ৪-১ এবং টিম বিজেএমসিকে ৭-০ গোলে। কোয়ার্টারে ব্রাদার্সকে টাইব্রেকারে হারায় ৫-৪ (২-২) গোলে। সেমিতে শেখ রাসেলকে ২-১ গোলে হারায়। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ২১ গোল জামালের। বিপরীতে হজম করেছে ৮ গোল। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। গ্রুপে তারা ৪-০ গোলে উত্তর বারিধারাকে হারালেও পরের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে। কোয়ার্টারে ১-০ গোলে হারায় ঢাকা আবাহনী ও সেমিতে ঢাকা মোহামেডানকে টাইব্রেকারে ৪-৩ (১-১) গোলে হারের স্বাদ উপহার দেয় মুক্তিরা।
×