ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রান, মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে সর্বোচ্চ রানের জুটি

সবার ওপরে তামিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ মার্চ ২০১৫

সবার ওপরে তামিম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বিশ্বকাপের শুরু করেছিলেন মাত্র ২৯ রান দূরে থেকে। সাকিব পারলেও তিনি পারেননি। বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের নেলসন মাঠটাকে স্মৃতির মণিকোঠায় তুলে রাখতে পারবেন এবার। এখানেই তিনি চার হাজার রানের গর্বিত দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হয়েছেন স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। এর চেয়েও বড় এক মুক্তি পেয়েছেন! সেটা হচ্ছে দায়মুক্তি! দীর্ঘদিন ব্যাটে রানখরা যাচ্ছিল তামিমের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এ ইনিংস খেলে। আর সেদিনই হয়ে গেলেন দেশের সেরা। বিশ্বকাপে এখন বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস তামিমেরই। এর আগে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ রান ছিল সেরা। তামিম দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন। দেশের পক্ষে বিশ্বকাপে যে কোন উইকেটে এটিই সেরা জুটি। টপঅর্ডারের দারুণ এ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ স্কটিশদের ৩১৮ রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয়। এটি ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। গত বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড সর্বাধিক ৩২৯ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। ওয়ানডেতে এ নিয়ে তৃতীয়বার তিন শতাধিক রান তাড়া করে জিতল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ এবং ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানও করে ফেলেছে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৩২২ রান তুলে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে গত নবেম্বর-ডিসেম্বরে পাঁচ ম্যাচের ঘরোয়া ওয়ানডে সিরিজেই সুযোগ ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের। বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সাকিব আর তামিম সর্বাধিক রানের মালিক। দু’জনেরই অনেক দিন ধরে সুযোগ ছিল সবার আগে ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে চার হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক গর্বের মালিক হয়ে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রান পূর্ণ করেন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে। বন্ধু তামিমকে ছাড়িয়ে নতুন ক্লাবে এককভাবে যোগ দেন। তবে তামিম অচিরেই আসছেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কারণ স্কটিশদের বিরুদ্ধে নামার আগে মাত্র ২৯ রান দূরে ছিলেন তিনি চার হাজার রানে পৌঁছুতে। জিম্বাবুইয়ে সিরিজে পাঁচ ম্যাচে আর চলতি বিশ্বকাপে হওয়া তিন ম্যাচে (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ পরিত্যক্ত) সেটা করতেই পারলেন না তামিম। বিশ্বকাপ শুরুর আগে মাত্র ৪৮ রান দূরে ছিলেন। এমনিতেও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সিরিজের শেষ তিন ম্যাচে রান পাননি। আর বিশ্বকাপে হাঁটুর অস্ত্রোপচার থেকে কাটিয়ে ওঠা তামিম খেলা হওয়া দুই ম্যাচে করলেন ১৯ ও ০। তবে স্কটিশদের বিরুদ্ধে যেন ফিরে পাওয়ার সুযোগটা পেলেন। স্যাক্সটন ওভাল মাঠে এই প্রথম খেলা বাংলাদেশের। সেখানে অবিস্মরণীয় অনেক কিছুই ঘটল। স্কটিশদের ৮ উইকেটে ৩১৮ রান তাড়া করাটা বেশ কঠিন। তিন শতাধিক রান এর আগে মাত্র দু’বার করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের ৩০৭ রান পেরিয়ে ৩০৯, ৬ উইকেটে এবং ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৩১২ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে ৩১৩ রান তুলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। স্কটিশদের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে আঘাত পাওয়ায় তামিমের সঙ্গী এনামুল হক বিজয় নামতে পারেননি, নতুন সঙ্গী হয়েছিলেন সৌম্য সরকারা। তিনিও ব্যর্থ হয়ে মাত্র ২ রানেই সাজঘরে ফেরেন। তবে বিচলিত হননি তামিম। দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে সাবলীলভাবে খেলে তিনি ক্যারিয়ারের ২৮তম অর্ধশতক হাঁকান তিনি। এগিয়ে যাচ্ছিলেন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে মাত্র ৫ রান দূরে থামিয়ে দেন জোশ ডেভি। ১০০ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৯৫ রান করে ফিরে যান তামিম। শতক হাতছাড়া হলেও দুটি বড় গর্বের মালিক হয়েছেন নিজেকে স্বরূপে ফিরে পাওয়া এ নির্ভরযোগ্য বাংলাদেশী ওপেনার। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেছেন। এর আগে আশরাফুলের ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রভিডেন্সে করা ৮৭ রান ছিল বাংলাদেশের পক্ষে সেরা ইনিংস। আর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে সাকিবের পর ওয়ানডেতে চার হাজার রান পূর্ণ করেছেন। এখন তাঁর রান ১৩৮ ওয়ানডেতে ৩০.০৩ গড়ে ৪০৮৫। তাঁর চেয়ে মাত্র ৫৩ রান এগিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ওয়ানডে রানের মালিক সাকিবের সংগ্রহ ১৪৪ ওয়ানডেতে ৪১৩৮। তামিম দারুণ এ অর্জনের সময় মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৯ রানের জুটি গড়েন। যা ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটের ক্ষেত্রে সেরা জুটি। চলতি বিশ্বকাপেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মুশফিকুর রহীম ও সাকিব পঞ্চম উইকেটে ১১৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। বিশ্বকাপে শতরানের জুটি মাত্র এ দুটিই বাংলাদেশের পক্ষে। এর আগে দ্বিতীয় উইকেট জুটির সেরা ছিল ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর ৯২। তাঁরা হল্যান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে গত বিশ্বকাপে এ জুটি গড়েছিলেন। এরপর মুশফিক ও সাকিবও অর্ধশতক হাঁকান। এক ওয়ানডেতে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চারজন অর্ধশতক হাঁকালেন বাংলাদেশের পক্ষে। আর টপঅর্ডারদের এমন ব্যাটিং সাফল্যে শেষ পর্যন্ত ৩১৮ রান বাংলাদেশ টপকে যায় ১১ বল বাকি রেখেই ৪ উইকেটে ৩২২ রান তুলে। এটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। এর আগে গত বছর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩ উইকেটে ৩২৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।
×