ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সোলেমান হালদারের জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা ২০ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ মার্চ ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা ২০ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৬ ও ২৭তম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। ২৬তম সাক্ষী সোলেমান হালদার জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা গ্রামের ১৮ থেকে ২০ জন লোককে আটক করে। পরে তাদের হত্যা করা হয়। ২৭তম সাক্ষী মীর আব্দুর রাজ্জাকও একই ধরনের জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৭ম সাক্ষী মোঃ খুদি জবানবন্দীতে বলেছেন, মাহিদুর ও চুটু রাজাকার আমাদের গাঁয়ের প্রায় ৪০টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য রবিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছে। অন্যদিকে জামালপুরের গ্রেফতারকৃত রাজাকার এস.এম ইউসুফ আলী ও এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হককে রবিবার মামলার তদন্তের স্বার্থে রবিবার ধানমন্ডির সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত সংস্থা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এ সময় আসামি পক্ষের দুই জন আইনজীবী ও একজন ডাক্তার সেখানে উপস্থিত থাকবেন। বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৬ ও ২৭তম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সাক্ষী তাঁর জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে আমি কান্দাপাড়া বাজারে চাল বিক্রির জন্য আসি। সকাল আনুমানিক দশটার দিকে শুনতে পাই যে,পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা কান্দাপাড়া বাজারের দিকে আসছে। ঐ সংবাদে বাজারের লোকজন আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি শুরু করে। আমিও আমার চালের দোকান গুটিয়ে পার্শ¦বর্তী নদীতে থাক আমার নৌকায় উঠিয়ে পার্শ্ববর্তী খালের দিকে চলে যাই। এর কিছুক্ষণ পর গোলাগুলির শব্দ পাই। আমি আমার নৌকাটিকে নিয়ে আরও কিছুদূর উত্তরে দিয়ে একটি খালের ঝোপের আড়ালে আত্মগোপন করি। সেখান থেকে দেখতে পাইয়ে যে, নদীর উপরে থাকা বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা বেশরগাতি গ্রামের দিকে যাচ্ছে। আনুমানিক দেড় দুই ঘণ্টা পর দেখতে পাই যে, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আনুমানিক ১৮/২০ জনলোককে আটক করে কান্দাপাড়া বাজারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আটককৃত লোকদের মধ্যে আমি কাঞ্চন আলী, আব্দুল আলী ও মকবুল আলীকে চিনতে পারি। রাজাকারদের নেতৃত্বে ছিল আসামি সিরাজ মাস্টার। এ ছাড়াও আমি রাজাকার বাশারত হালদার, নবীর হালদার, খেলাবাত হালদারকে চিনতে পারি। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা রাইফেল, ছোরাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। আটককৃতদের নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরে আমি বাজারের পুর্ব দিক এবং আমি যেখানে ছিলাম সেখান হতে দক্ষিণ দিক হতে হল্লা চিল্লা ও গুলির শব্দ শুনতে পাই। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা চলে গেছে জানতে পেরে আমি আমার নৌকাসহ বাড়ির দিকে রওনা হই। যাওয়ার পথে দেখত পাই যে, বেশরগাতি গ্রামে বিভিন্ন বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে। বাড়িতে গিয়ে আমি লোকমুখে জানতে পারি, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা কান্দাপাড়া বাজারের পাশে ১৮/২০ জন লোককে মেরে ফেলে রেখেছে। এর মধ্যে ১ থেকে ২ জন লোক বেঁচে যায়। অন্যদিকে প্রসিকিউশনের ২৭তম সাক্ষী মীর আব্দুর রাজ্জাকও একই ধরনের জবানবন্দী প্রদান করেছেন। মাহিদুর-চুটু ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৭ম সাক্ষী মোঃ খুদি জবানবন্দীতে বলেছেন, মাহিদুর ও চুটু রাজাকার আমাদের গাঁয়ের প্রায় ৪০টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য রবিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছে।
×