ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত ও সহিংসতা ছেড়ে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করুন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ মার্চ ২০১৫

জামায়াত ও সহিংসতা ছেড়ে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জাইদ রাদ আল হুসেন। বুধবার জেনেভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে হাইকমিশনার এ বিষয়ে আলোচনা করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। একই সঙ্গে বিএনপিকে বলেছেন, রাজনৈতিক জঙ্গী জামায়াতকে ছাড়তে হবে। সহিংসতা ছেড়ে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করতে হবে, না হলে সরকার আরও কঠোর হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত ১৬ দেশের রাষ্ট্রদূতরা মঙ্গলবার সাক্ষাত করে সরকারের এ কড়া বার্তা দিয়েছেন বেগম জিয়াকে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানবাধিকার নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করতে গিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথাও আসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যে ‘নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-’ চালাচ্ছে তার কিছু কিছু আইএসসহ জঙ্গী দলগুলোর সন্ত্রাসী কৌশলের সঙ্গে ‘প্রায় মিলে যায়’। গত দুই মাস ধরে বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগই মারা গেছেন যানবাহনে দেয়া আগুন ও পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে। বৈঠকে মন্ত্রী সহিংসতা দমন করে দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের ওপর জোর দেন জাইদ রাদ আল হুসেন। মাহমুদ আলী হাইকমিশনারকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা গ্রহণ করেন বলেও মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানোনো হয়। মন্ত্রী তাকে বলেন, মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের বাণী বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ আগের মতোই কাজ করে যাবে। চারদিনের সফরে গত মঙ্গলবার জেনেভায় পৌঁছান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বুধবার তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাত করে জরুরী তহবিলের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ ডলার অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতকে ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে সহিংসতা ছেড়ে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করতে হবে, না হলে সরকার আরও কঠোর হবে। সরকারের এ দুই কড়া বার্তা নিয়েই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন বাংলাদেশে অবস্থিত ১৬ দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। কূটনীতিকেরা সরকারকে অবহিত করেই মঙ্গলবার সেখানে গিয়েছিলেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের কাছে এমন বার্তা দেয়া হয়। মূলত সে বার্তাই খালেদাকে পৌঁছে দিলেন কূটনীতিকরা। সেদিন গুলশানে খালেদার কার্যালয়ে যেতে কূটনীতিকরা গাড়িতে নিজ নিজ দেশের পতাকা ব্যবহার করেননি। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল ব্যবহার করেই একসঙ্গে বিএনপি কার্যালয়ে হাজির হন তারা। নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থার কথাও সরকারকে আগাম জানানো হয়েছিল। কিছুদিন আগে ঢাকায় কয়েকজন রাষ্ট্রদূত দেশের পরিস্থিতি জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক বার্তা পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। ওই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা, সন্ত্রাস ও সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন কূটনীতিকরা। বিএনপিকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ না দেয়া উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে সত্বর সহিংসতা বন্ধ হবে এবং শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ ও রাজনীতির সুযোগ থাকবে বলে কূটনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের জানানো হয়, বিএনপি-জামায়াত মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের আদলে দেশে সহিংসতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে ২০১৪ সালের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিএনপির কাছেও চলমান সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কূটনীতিকেরা। সহিংসতা বন্ধ করে জনসম্পৃক্ত ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির করার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে এ দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এহেন সহিংস অবস্থা আর দেখতে চান না। দেশের এহেন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল বারবার সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখেন। উভয়পক্ষ বান কি মুনের চিঠির জবাব দিয়েছে।
×