ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার শর্ত !

উবাচ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৬ মার্চ ২০১৫

উবাচ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন কিছুতেই টলছেন না বেগম জিয়া। বলতে গেলে অনেকটাই একরোখা ধরনের রাজনীতিবিদ! কোন কোন ক্ষেত্রে বেপরোয়াও তিনি। ২০ দলের সহিংস কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হলেও এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। লক্ষ্য ক্ষমতা। তা যে কোন মূল্যেই হোক! এবার আদালতের নির্দেশনাও মানছেন না তিনি। দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও আদালতে হাজির হননি। কোন কিছুতেই যেন তোয়াক্কা নেই। হাজির হওয়ার বিষয়ে তার পক্ষে শর্ত দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী একাধিক আইনজীবী। তারা আবার দলের শীর্ষ নেতাও। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকেই রাজনীতির হিসেব কষতে শুরু করেছে বিএনপি। বুদ্ধিদাতা হলেন আইনজীবীরা। এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান, সানাউল্লাহ মিয়াদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে খালেদার আদালতে হাজির হওয়ার বিষয়ে শর্তের কথা। তারা বলেছেন, আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া আবারও গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফেরত আসতে পারবেন; সরকারের পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তা দেয়া হলেই তিনি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসবেন। অন্যথায় খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হবেন না। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কৌশলে রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের করার চেষ্টা করছে সরকার। দলীয় কার্যালয় থেকে বের করে সেখানে তার দেয়া হতে পারে। এটি বিএনপিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলেও মনে করেন দলবাজ আইনজীবীরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে আদালত। বুধবার ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানির পর খালেদার পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নথিভুক্ত রেখে আগের আদেশই বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন। এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এই দুই মামলার সাতজন সাক্ষী উপস্থিত থাকলেও তাদের জবানবন্দী নেয়া সম্ভব হয়নি। পরে এই দুই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ঠিক করেছে আদালত। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খালেদা জিয়া আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণ করেননি, সেহেতু তার কোন আবেদন শোনার সুযোগ আদালতের নেই। এ প্রশ্ন তো আমারও স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সহিংস অবরোধ ও হরতাল চলছে। রাজধানীকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা থেকেই ২০ দলের পক্ষে কঠোর কর্মসূচীর ডাক দেন খালেদা জিয়া। প্রত্যাশা ছিল কঠোর কর্মসূচীতে চাপ পড়বে সরকারের ওপর। আর এ থেকে উত্তরণে বিরোধী জোটের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার। এর মধ্য দিয়েই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায় হবে। ক্ষমতায় আসবে বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়ে-বালি। মানুষ সহিংস কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববাসীও এ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে। সঙ্গত কারণেই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে হতাশার সুর। কেন এই হরতাল? সহিংস কর্মসূচী এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিএনপির শীর্ষ একাধিক নেতা। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে না নিলেও এর গুরুত্ব নেই আর। অবরোধ অকার্যকর দেখে এ কর্মসূচীর পাশাপাশি ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে শুক্র এবং শনিবার ছাড়া টানা হরতাল চলছে। হরতাল বটে। এমন হরতাল যে... চলছে দূরপাল্লার বাস। রাজধানীতে তীব্র যানজট। স্বাভাবিক দিনের মতোই পরিস্থিতি। এভাবে টানা কর্মসূচী ডেকে তা সফল করতে না পারা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘হরতাল কর্মসূচী অকার্যকর হয়ে গেছে। এটায় জনজীবনে কোন প্রভাব পড়ছে না। জনগণও তেমন সাড়া দেয় না।’ তাহলে কেন এমন কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এই প্রশ্নতো আমারও। আমার তো বুঝে আসছে না হরতাল কেন দেয়া হয়।’ আপনি তো দলের নীতিনির্ধারণী সদস্য তাহলে কেন জানেন নাÑ জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে খুব কঠিন সময় যাচ্ছে। দলের কোন নীতিনির্ধারণী বৈঠক করা যাচ্ছে না। কর্মসূচী ঠিক করতে নেতারা এক জায়গায় বৈঠক করতে পারছে না। আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছি। ফলে কর্মসূচী সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। নাশকতার মধ্যে সংলাপ নয় স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিএনপির ধারণা ছিল কঠোর আন্দোলনের মুখে আন্তর্জাতিক মহল তাদের পক্ষ নেবে। দূতিয়ালি করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে। সে আশায় গুড়ে-বালি। বরং হয়েছে উল্টো। সবাই সহিংসতা ও জামায়াত বাদ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপিকে। থেমে নেই মানবাধিকার কমিশনও। মানবাধিকার রক্ষা যার দায়িত্ব; তিনি তো মানুষের কথাই বলবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই করছেন তিনি। সাহস নিয়ে ন্যায় ও মানবতার পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। সহিংতার শিকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বারবার ছুটে যাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অসহায় মানুষদের দেখতে। গেল সপ্তাহে ঢাকার বাইরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, নাশকতার মধ্যে সংলাপ করার অর্থ সন্ত্রাসীদের কাছে মাথা নত করা। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসবাদ। যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে, সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন সংলাপ করার অর্থ হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নত করা। মাগুরায় এক সেমিনারে মিজানুর রহমান নাশকতা প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাস, সহিংসতা ও জঙ্গীবাদ নির্মূল তথা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হলে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা সন্ত্রাস-সহিংসতা চালিয়ে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, নারী ও শিশু, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষের স্বাভাবিকভাবে চলার অধিকার কেড়ে নেয়ার অধিকার কারও নেই।’ ক্ষমতা বলে কথা! স্টাফ রিপোর্টার ॥ তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন এরশাদ। এরপর রাজনীতির বাতাস তার অনুকূলে ছিল না। জেল জুলুম আর বৈরী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাকে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে হয়েছে। জেল থেকে বসেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার রেকর্ড আছে তার। তাতে কী? ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। প্রায় নয় বছর শাসন করেছেন দেশ। ক্ষমতা বলে কথা। প্রায় ২৫ বছর পরও মাথা থেকে ক্ষমতার মসনদে বসার ভূত সরেনি। এখনও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বর্তমান বিরোধী দলের প্রধান। সেই প্রত্যাশার কথাই বারবার জানান দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তিনি। গেল সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে সাবেক এ সামরিক শাসক এরশাদ বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যাবে। বর্তমানে ৪০ সাংসদ নিয়ে সংসদে আছে জাপা। রাজনীতিতে এ সময়টাকে সবচেয়ে সুসময় বলা চলে জাতীয় পার্টির জন্যে। তাই আরও স্বপ্ন দেখছেন তিনি। যদিও উপজেলা নির্বাচনে তার দল একটিতেও জিততে পারেনি। তিনি নিজে সমর্থন দিয়ে জাপার ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত রংপুরে এক প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেনি। এ ছাড়া দলীয় কোন্দলে দলের অবস্থা খারাপ। এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে রাজনীতি করেছে। কোন দলই তার প্রতি সুবিচার করেনি। শেকলে বাঁধা রাজনীতি করেও টিকে আছেন তিনি। ২০০৮ সালে মহাজোট থেকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সাবেক এ সেনাপ্রধান। বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার এমন চুক্তিই ছিল। তার এ বক্তব্য হালে পানি পায়নি। পরবর্তীতে এরশাদ বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। দেশের সর্বোচ্চ পদে নয় বছর দায়িত্ব পালন করেছি। এখন বলছেন, ফের ক্ষমতায় যেতে চান তিনি। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার দলের ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত। যদিও এর আগে কয়েকবার তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নিরপেক্ষ নির্বাচন কখনও হয়নি।
×