ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদুর রহমান মান্না

সরকার উৎখাতে তিন ফ্রন্টলাইন বিএনপি জামায়াত জোটের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৬ মার্চ ২০১৫

সরকার উৎখাতে তিন ফ্রন্টলাইন বিএনপি জামায়াত জোটের

শংকর কুমার দে ॥ সরকার উৎখাতের জন্য তিনটি ফ্রন্ট লাইন খোলার নীলনকশা তৈরি করে মাঠে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সরকার উৎখাতের জন্য তিনটি ফ্রন্ট খুলেছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। সরকার উৎখাতের জন্য যে তিনটি ফ্রন্ট খোলা হয়েছে তার মধ্যে প্রথমত দেশে জঙ্গী কায়দায় নাশকতা, দ্বিতীয়ত সেনা অভ্যুত্থান, তৃতীয়ত বিদেশী রাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টি করা। মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে এনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পাশাপাশি তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে রিমান্ডে আনার বৃহস্পতিবার ছিল ৮ম দিন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে রাজনীতি করার আড়ালে বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে তার সখ্য সৃষ্টি হয়। এই নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, উভয় পক্ষই চাচ্ছে যে কোন উপায়ে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বিএনপির বিভ্ন্নি নেতার সঙ্গে আলাপের ধারাবাহিকতায়ই নিউইয়র্কে অবস্থানরত সাবেক মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ফোনালাপ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মান্না বলেছেন, বিএনপির নেতারাই তাকে (মান্না) বলেছেন, লন্ডনে বসে সরকার উৎখাতের নীলনকশা তৈরি করেছে লন্ডনে অবস্থারত বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ আছে নিউইয়র্কে অবস্থানরত সাদেক হোসেন খোকার। লন্ডন থেকে তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশনা দেয়, সেভাবেই বিএনপির চেয়ারপার্সন তার মা বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিচ্ছেন ঢাকায়। এ কারণেই বিএনপির যত সিনিয়র নেতাই হোক না কেন দলে তাদের পরামর্শের কোন মূল্য নেই। গ্রেফতারের আগে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে আক্ষেপের সুরে এই ধরনের কথাবার্তা শুনেছেন মান্না। এ জন্য মান্নার সহযোগিতাও চেয়েছেন বিএনপির নেতারা। মান্না জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, সরকার উৎখাতের জন্য তিনটি ফ্রন্ট লাইন খোলা রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিন ফ্রন্ট লাইনের একটি হচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতাল যে সফল হবে না তারা এটা জানেন। এ জন্যই পেট্রোলবোমার সহিংসতায় দেশব্যাপী আতঙ্ক, অস্থিরতা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্বিতীয় ফ্রন্ট লাইন সম্পর্কে মান্নার কাছে বিএনপির নেতারা বলেছেন, পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতার মধ্যে সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়তে পারে। তখনই বিদেশী প্রভাবশালী দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করানো হবে। বাইরের প্রভাবশালী দেশসমূহের কূটনীতিক, রাজনীতিক, এনজিও, মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদ মাধ্যম দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলে পরিস্থিতি বিএনপি-জামায়াতের অনুকূলে চলে আসতে সহায়ক হবে বলে তারা জানিয়েছেন মান্নাকে। তৃতীয় ফ্রন্টলাইনটি সম্পর্কে মান্না বলেছেন, সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে সেনা বিদ্রোহের জন্য উস্কানি দিতে হবে। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। সেনা বিদ্রোহের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করাটা খুবই সহজ হবে। এ জন্যই খোকার সঙ্গে তার (মান্না) ফোনালাপে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে মান্নাকে। বেআইনীভাবে সরকার উৎখাতের জন্য তার ও অপরপ্রান্তে ফোনালাপকারী খোকার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। সেনা বিদ্রোহের মামলার ১০ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হলে তাকে আবারও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় রিমান্ডে আনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ‘সেনা হস্তক্ষেপ’ ও ‘লাশ ফেলার’ সেই মান্না-খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে নানা ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
×