ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেলসনে রেকর্ডময় জয়ে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ॥ স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ

আহা কী আনন্দ-

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ মার্চ ২০১৫

আহা কী আনন্দ-

মিথুন আশরাফ ॥ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে ১২ বলে ১ রান দরকার। এমন মুহূর্তে থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়োৎসবে মাতে পুরো জাতি। বাংলাদেশ যে ৬ উইকেটে জিতে গেছে। সেই জয় আবার এসেছে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে। এমন জয়ে কী আর বাঁধভাঙ্গা উৎসব না হয়, হলোও। বাংলাদেশ দল নেলসনে ম্যাচ জিতল, পুরো দেশ উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে গেল, প্রবাসী বাঙালীরাও তাতে একাত্ম হয়ে গেলেন। বিশ্বকাপে প্রতিটি জয়ই বিশেষ কিছু। সেই জয়টি যদি আসে আবার এমনভাবে। তাহলে কথাই নেই। শুধু উৎসবই তো হবে। যেখানে কাইল কোয়েটজারের ১৫৬ রানে স্কটল্যান্ড ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান করল। সেই রান এত সহজে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অতিক্রম করে ফেলল, যেন এত বড় টার্গেট কোন ব্যাপারই না! তামিম ইকবাল ৯৫, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬২, মুশফিকুর রহীম ৬০, সাকিব আল হাসান অপরাজিত ৫২ ও সাব্বির রহমান রুম্মন অপরাজিত ৪২ রান করলেন। ব্যাটসম্যানদের ঐক্যবদ্ধ ব্যাটিং তা-বে এমন নৈপুণ্যই ধরা পড়ল, যা আগে কোনদিন বিশ্বকাপে দেখা যায়নি। ৪ উইকেটে ১১ বল বাকি থাকতে ৩২২ রান করেই ম্যাচ জিতে গেল বাংলাদেশ। কী সহজেই না জয় এলো। এ জয়ের মাঝেও অবশ্য দুঃখ রয়েই গেল। ফিল্ডিং করতে গিয়ে এনামুল হক বিজয় যে কাঁধে ব্যথা পেলেন, সেই ব্যথা বিশ্বকাপ থেকেই তাঁকে সরিয়ে দিল। ক্রিকেটাররা তাই মন খুলে উজাড় করে আনন্দ করতে পারলেন না। তবে ক্রিকেটপ্রেমীরা কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেননি। নেলসনের সেক্সটন ওভালের জয়টি পুরো জাতিকে আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছে। হরতাল, অবরোধে চারদিকে যখন শুধু খারাপ খবরই বয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এ জয়ে ক্রিকেট উৎসব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছে। টিএসসিতে উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠেন সবাই। প্রিয় দলের জয়ের পর সবাই ‘ভি’ চিহ্ন দেখাতে ভোলেননি। জাতীয় পতাকা হাতে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতেও ভোলেননি। নেলসনের বিজয় পুরো দেশেই আনন্দ করার উপলক্ষ এনে দিয়েছে। জেলায় জেলায় র‌্যালি হয়েছে। বিজয় মিছিল বের হয়েছে। হরতাল, অবরোধ যখন চলছে; বাংলাদেশ দলের এ জয়ে সব উপেক্ষা করে আনন্দ করতে রাস্তায় নেমে গেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এমনটি হওয়ারই কথা। জয়টি যে অনেক প্রাপ্তিই বাংলাদেশের ঝুলিতে ভরে দিয়েছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে এখন বাংলাদেশের সামনে বাকি থাকা ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্যে যে কোন একটিতে জিততেই হবে। সামনে দুই কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এমন জয় টনিক হিসেবেই কাজ করবে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়ে রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এখন ৩২২/৪। এর আগে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৮৩ রান করেছিল। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন। এর আগে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের (৮৭)। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে ৪০০০ রান পূর্ণ করলেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে তামিমের রান এখন ৪০৮৫। এর আগে ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান (৪১৩৮) প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে চার হাজারী ক্লাবে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড গড়েছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দ্বিতীয় উইকেটে এই জুটি যোগ করেন ১৩৯ রান। আগের রেকর্ডটি ছিল সাকিব ও মুশফিকের (১১৪)। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এক ম্যাচেই চারজন হাফ সেঞ্চুরি করেন। তামিম, রিয়াদ, মুশফিক, সাকিব হাফ সেঞ্চুরি করেন। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তিনজন-তামিম, সাকিব ও মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছিল আয়ারল্যান্ড, ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের ৩২৭ রান টপকে গিয়েছিল। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে অর্ধ হাজার রান পূর্ণ করলেন সাকিব আল হাসান। অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলার পর এখন সাকিবের বিশ্বকাপে মোট রান ৫০৫। এতসব রেকর্ড গড়ে জয়ের পর কী আর আনন্দ না করে উপায় আছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা তাই যেন বাঁধভাঙ্গা উৎসবেই মাতলেন। এ উৎসবের মাঝে স্কটল্যান্ডের রেকর্ডগুলো (সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন স্কটল্যান্ডের কাইল কোয়েটজার ১৩৪ বলে করেন ১৫৬ রান, ওয়ানডেতে স্কটল্যান্ডের হয়ে এটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে স্কটল্যান্ড, যে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আর বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এটি, বিশ্বকাপে যে কোন উইকেটে স্কটল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন কাইল কোয়েটজার ও প্রেস্টন মোমসেন, চতুর্থ উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ১৪১ রান) কারও মনে রাখার সময় আছে? বাংলাদেশ জিতেছে। এটাই শেষ কথা এবং সেই জয়টি পাওয়ার পর এখন আনন্দ করার সময়। রেকর্ডময় জয়ের পর তাই বাঁধভাঙ্গা উৎসবই হয়েছে।
×