ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কার কথা কে শোনে

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৬ মার্চ ২০১৫

কার কথা কে শোনে

দেশে এমন অবস্থায় আজ, যার যোগ্যতা বা এখতিয়ার নেই সেও জ্ঞানদান করে যখন তখন, যে কোন বিষয়ে। নিখরচায় হিতোপদেশদানের অবশ্য নানান মাজেজা থাকে। নিজে ‘কি হনুরে’ ভাবের মধ্যে আত্মগরিমাও থাকে। কখনও বন্ধু বেশে, কখনও হিতাকাক্সক্ষী, শুভাকাক্সক্ষী, কখনও বা সাহায্যকারী, যখন যেমন সুবিধে, তেমন বেশে এসে বেশ পরামর্শ-টরামর্শ দেয়ার চল অনেকদিনের। বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে। নিজের দেশে যা সম্ভব নয়, পরের দেশে এসে সেই অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে উদগ্রীব হয়ে পড়েন বিদেশীদের কেউ কেউ। কত কি আকুলতা ঝরে পড়ে। এদের কারও কারও নীতি আবার ‘চোরকে বলা চুরি কর, গৃহস্থকে বলা ধর ধর’ ধাঁচের। কখনও কখনও সহিংসতাকারীকে তারা শুধু মানব রূপে সামনে হাজির করে। আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি না মানা জনকেও সমীহ করে এসব ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লরা।’ মোড়লীপনায় এক ধরনের সুখ আছে বৈকি! বেশ হিতোপদেশ, জ্ঞানদান সবই করা যায়। আর এদেশে কতিপয় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি আর ক্ষমতার লোভে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আড়ালে রেখে ‘বিদেশী প্রভুদের’ কাছে ধর্না শুধু নয়, কেঁদে কেটে এক সা। ছিঁচকাদুনী নয়, বেশ আহাজারির স্বরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নাম আর গিবত গাওয়ার মধ্য দিয়ে অপার সুখ লাভ করে। এতসব কথা বলার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী ৯ দেশের কূটনীতিকদের রাতের খোশগল্পে মত্ত হওয়া তারই সঙ্গে, যার নির্দেশে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা চলছে, জঙ্গীবাদীরা দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়ে আসছে, যিনি দেশের সংবিধান, আইন-কানুন কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। কারও কথা শোনেনও না। কোন রাজনৈতিক আন্দোলনও করছেন না। ষড়যন্ত্র আর জটিলতা দিয়ে সবকিছুকে গ্রাস করার প্রক্রিয়ায় সর্বক্ষণ ব্যস্ত তিনি। বাড়িঘর ছেড়ে দু’মাসের বেশি সময় ধরে অফিসে অবস্থান করে নাশকতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সাধারণ কেউ নন। আবার মাফিয়া ডন হিসেবে পারিচিত গডমাদারও নন। কিন্তু তিনি ধারণ করেন অসাধারণ জঙ্গী মানবীর রূপ। তাই গত দু’মাসে শতাধিক লোককে প্রাণ দিতে হয়েছে। বহু সহায় সম্পদের হানি হয়েছে। অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। নিজের অফিসে ডেকে এনে নালিশ জানান। দলিলদস্তাবেজ অর্পণ করে সুরাহা চান। যে সুরাহা হচ্ছে, ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার আয়োজন। যার বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মামলায় আদালতে হাজিরা দেন না। অথচ তিনিই আইনের শাসন ও সুশাসনের জন্য মায়া কান্না করেন। আইনের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা নেই যার, সেই তার কাছে ৯ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতের গমন ও বৈঠক করা কোন স্বাভাবিক বিষয় হতে পারে কি? আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়িয়ে থাকা একজন ‘ব্যক্তি’র সঙ্গে দেখা সাক্ষাত বৈঠক করতে পারেন কী তারা? অথচ এই কূটনীতিকরা এ দেশবাসীকে সুশাসনের সবক দেন, সেখানে এই বৈঠক কি স্ববিরোধী নয়? কূটনীতির রীতিনীতির একটা সীমা রয়েছে। নির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে। কিন্তু এদেশে কূটনীতিকরা সেই সীমা লঙ্ঘন করবেন না, এটাই প্রত্যাশা।
×