ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেডারেশন কাপ ফুটবল

শেখ জামাল-মুক্তিযোদ্ধা ফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৫ মার্চ ২০১৫

শেখ জামাল-মুক্তিযোদ্ধা ফাইনাল আজ

রুমেল খান ॥ একদিকে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে টানা রেকর্ড পাঁচবারের ফাইনালিস্ট, দুই বারের চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড। অপরদিকে সাতবারের ফাইনালিস্ট, তিনবারের শিরোপাধারী এবং বর্তমান রানার্সআপ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সোয়া ৫টায় ২৭তম ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে এ দুই দল। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ওয়ার্ল্ড। ফাইনাল ম্যাচের টিকেটের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে সাধারণ গ্যালারি ২০ এবং ভিআইপি ৫০ টাকা করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই দুলই ফেডারেশন কাপে গত আসরের ফাইনালিস্ট! ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই তারা মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার মুক্তিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল জামালই। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে জয়সূচক গোলটি যিনি করেছিলেন, সেই ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী এবার জামালের অধিনায়ক। ‘টার্গেট ছাড়া কোন কিছু অর্জন সম্ভব নয়। আমরা যখন নতুন মৌসুমে অনুশীলন শুরু করি, তখনই একটা টার্গেট ঠিক করেছিলাম। আমরা যেন সব টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলতে পারি। ইতোমধ্যেই আমরা ভুটানে গিয়ে কিংস কাপের শিরোপা জিতেছি। এখন ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতে মৌসুম শুরুটা করতে চাই।’ বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে এক প্রি-ফাইনাল ম্যাচ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন শেখ জামালের কোচ-অধিনায়ক, মুক্তিযোদ্ধার কোচ-ম্যানেজার-অধিনায়ক এবং বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। নাসির সেখানেই উপরোক্ত মন্তব্য করেন। জামালের কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘দলের সব খেলোয়াড় সুস্থ এবং ফিট আছে। আমরা চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী।’ প্রশ্ন-উত্তর পর্বে মারুফুল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা অবশ্যই ভাল দল। তারা আবাহনী-মোহামেডানের মতো দলকে হারিয়েছে। ফাইনাল ম্যাচে তারা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি তাহলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। আমাদের দেশের ফুটবলের মান যেমন, রেফারিংয়ের মান তো তেমনই হবে। এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’ নাসির বলেন, ‘জামালের গত মৌসুমের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই এবারও আছে। ফলে দলের সবার মধ্যে বোঝাপড়া ভাল। এটাই আমাদের মূল শক্তি।’ মুক্তিযোদ্ধার ম্যানেজার ফিরোজ মাহমুদ হোসেন টিটু বলেন, ‘ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে আমি ভীত। প্রতিপক্ষ শেখ জামাল বলে নয়, দুর্বল রেফারিং হবে- এই আশঙ্কাই করছি। খেলায় হারজিত থাকবেই। জামাল নিঃসন্দেহে ভাল দল। তবে শক্তিমত্তায় আমরাও পিছিয়ে নেই। এ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্যায় থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত আমরা যত ম্যাচ খেলেছি, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচেই রেফারিং ছিল যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। এটা দুঃখজনক। ২০১০ ও ২০১১ সালে আমরা প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য। এর জন্য দায়ী ছিল পক্ষপাতিত্বমূলক রেফারিং। তবে এই টুর্নামেন্টে এত বাজে রেফারিংয়ের পরেও আমরা ফাইনাল পর্যন্ত আসতে পেরেছি বলে সন্তুষ্ট। আশা করি ফাইনাল ম্যাচটি অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’ মুক্তিযোদ্ধার কোচ আবু ইউসুফ বলেন, ‘পরীক্ষিত দল হিসেবেই আমরা এ পর্যন্ত এসেছি। দলের খেলোয়াড়দের যেভাবে দিক-নির্দেশনা দিয়েছি, তারা সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছে। জামাল অবশ্যই ভাল দল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুক্তিযোদ্ধা-জামাল এই দুই দলের মধ্যে ফাইনাল ম্যাচে পার্থক্য রচিত হবে কোন্ দল কেমন কৌশল প্রয়োগ করে সফল হয়, তার ওপর। আমিও যে কৌশল প্রয়োগ করে সফল হতে চাই।’ মুক্তিযোদ্ধার অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড এনামুল হক বলেন, ‘আমরা সবসময়ই একতাবদ্ধ, লড়াকু দল এবং ভাল কিছু করার চেষ্টা করি। আমরা এবার আবাহনী-মোহামেডানের মতো দলকে হারিয়েছি। জামালকে আমরা ভয় পাই না, তবে সমীহ করি। রেফারিং যেন ফাইনালে নিরপেক্ষ হয়, সেই আশাই করি। আর সেটা হলে ইনশাআল্লাহ্ আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব।’ রেফারিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের উত্তর বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ দেন এভাবে, ‘রেফারিংয়ের ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে, তবে সেটা যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেটাই কাম্য। ফাইনালের আগে রেফারিদের নিয়ে আমরা এক জরুরী সভায় বসব। সেখানে ফাইনালে তাদের করণীয় সম্পর্কে বিশদ আলোচনা হবে। আশা করি ফাইনালে ভাল রেফারিংই হবে। প্রয়োজনে ফাইনাল ম্যাচের এক ঘণ্টা ম্যাচের রেফারির নাম ঘোষণা করা হবে।’ শেখ জামালের জন্য ম্যাচটি যেমন শিরোপা অক্ষুণœ রাখার চ্যালেঞ্জ, তেমনি মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রতিশোধের। এ প্রসঙ্গে মুক্তির অধিনায়ক এনামুল বলেন, ‘গতবারের ফাইনালে জামালের কাছে হারের বিষয়টি অবশ্যই মনে আছে। আশা করি গতবারের মতো এবারের রেজাল্ট একই রকম হবে না। আমরা এবার তাদের হারিয়েই বদলা নিতে চাই।’ ফেডারেশন কাপের ইতিহাসে এ নিয়ে টানা ৫ বার ফাইনাল খেলার রেকর্ড গড়ল শেখ জামাল। এর আগে ২০১০, ’১১, ’১২ ও ’১৩ সালে ফাইনাল খেলে তারা। চ্যাম্পিয়ন হয় ২০১১ ও ’১৩ সালে। এমন রেকর্ড একমাত্র ঢাকা আবাহনীরই আছে। তারাও খেলেছে টানা ৫ বার ফাইনাল (১৯৯৪, ’৯৫, ’৯৭, ’৯৯ ও ২০০০ সালে; চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯৭, ’৯৯ ও ২০০০ সালে। ১৯৯৬ ও ’৯৮ সালে টুর্নামেন্ট হয়নি) চলমান আসরে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ আটে নাম লেখায় জামাল। ২ খেলায় তাদের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। গ্রুপে তারা হারায় ফেনী সকার ক্লাবকে ৪-১ এবং টিম বিজেএমসিকে ৭-০ গোলে (এই স্কোর এ আসরের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড)। কোয়ার্টারে ব্রাদার্সকে টাইব্রেকারে হারায় ৫-৪ (২-২) গোলে। সেমিতে শেখ রাসেলকে ২-১ গোলে হারায়। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ১৫ গোল জামালের। বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ৪ গোল। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। তারা ২ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে শেষ আটে উন্নীত হয়। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে তারা ৪-০ গোলে উত্তর বারিধারাকে হারালেও পরের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে। শেখ রাসেলেরও তাদের সমান পয়েন্ট ছিল। কিন্তু এক গোল বেশি করায় রাসেলই হয়ে যায় গ্রুপসেরা। কোয়ার্টারে মুক্তিযোদ্ধা ১-০ গোলে হারায় অপর ফেবারিট ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে। সেমিতে অপর ফেবারিট ঢাকা মোহামেডানকেও টাইব্রেকারে ৪-৩ (১-১) গোলে হারের স্বাদ উপহার দেয় মুক্তিরা। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা করেছে ৬ গোল, খেয়েছে মাত্র ১ গোল। ফেডারেশন কাপের ২৭তম আসরে (১৯৮০ সালে এ আসর শুরু হয়। তবে চারবার এ আসরটি অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৮৪ সালে পরিত্যক্ত, ১৯৯০, ’৯২ ও ’৯৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়নি) মুক্তিযোদ্ধা ৭ বার ফাইনাল খেলেছে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৩ বার (১৯৯৪, ২০০১, ’০৩)। রানার্সআপ হয়েছে ৪ বার (১৯৯৯, ২০০২, ’০৪, ’১৩)। তারাই এ আসরের সর্বশেষ রানার্সআপ (২০১৩ আসরে শেখ জামাল ধানম-ির কাছে হেরে)। পক্ষান্তরে ১৪ বার ফাইনাল খেলেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব মোহামেডান। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১০ বার (১৯৮০, ’৮১, ’৮২, ’৮৩, ’৮৭, ’৮৯, ’৯৫, ২০০২, ’০৮, ’০৯)। আর রানার্সআপ হয়েছে ৪ বার (১৯৮৮, ’৯১, ২০০০, ’০৩)। এখন দেখার বিষয়, আজকের চূড়ান্ত মহারণের ফল ২০১৩-১৪ ফেডারেশন কাপের মতো হয় কি না।
×