ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমিরাতকে উড়িয়ে দিল পাকিরা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৫ মার্চ ২০১৫

আমিরাতকে উড়িয়ে দিল পাকিরা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ১৯৯২ সালের স্মৃতিই কি ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে পাকিস্তান? সেবার প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই ছিল ব্যর্থ, অতঃপর জয়, জয় আর জয়- এই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকেই শিরোপা নিয়ে ফিরেছিল ইমরান খানের দল! প্রথম দুই ম্যাচে হেরে শুরুতেই কোণঠাসা পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবারও। জিম্বাবুইয়েকে হারানোর পর কাল আরব আমিরাতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে মিসবাহ-উল হকরা। তুলে নিয়েছেন ১২৯ রানের বিশাল জয়। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি না পেলেও ৯৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন ওপেনার আহমেদ শেহজাদ। একই সঙ্গে পুল ‘বি’এ জায়ান্ট কিলার আয়ারল্যান্ডকে পেছনে ফেলে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিরা। ’৯২-এর পুনরাবৃত্তি হবে কিনা- সেটি দূরের পথ, তবে দলটির ঘুরে দাঁড়ানোটা কিন্তু দর্শনীয়! নেপিয়ারে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে পাকিস্তান। জবাবে ৮ উইকেটে ২১০ রানে থেমে যায় আমিরাতের সংগ্রহ। কাল ফেবারিটের মতোই খেলেছে পাকিস্তান। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১০ রানে নাসির জামসেদকে হারিয়ে অবশ্য শুরুতে ধাক্কা খায় তারা। মাত্র ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন অফ-ফর্মে কুঁকড়ে যাওয়া ওপেনার, প্রস্তুতি ম্যাচ হয়ে বিশ্বকাপের তিন ইনিংসে ১, ০, ১ ও ৪ রানে আউট হলেন জামসেদ। আচমকা সুযোগ পেয়েছিলেন তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজের স্থলে, সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ বাঁ-হাতি ওপেনার উল্টো দলের বোঝায় পরিণত হচ্ছেন! জামসেদ ফেরার পরের গল্পটা কেবলই পাকিস্তানের। সেঞ্চুরি নেই একটিও, তবে এই প্রথম দলটির টপ ও মিডল-অর্ডার ক্লিক করেছে একসঙ্গে। হাফ সেঞ্চুরির ওপরে ও তার কাছাকাছি চমৎকার সব ইনিংস উপহার দিয়েছেন মিসবাহ, হারিস সোহেল, শোয়েব মাকসুদরা। সোহেল ৭০, মিসবাহ ৬৫, মাকুসদ ৪৫, আফ্রিদি মাত্র ৭ বলে অপরাজিত ২১ রান করলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানের বড় পুঁজি পায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় উইকেটে শেহজাদ-সোহেল ১৬০ রান যোগ করেন। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। সর্বোচ্চ ১৯৪ রানের- ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন সাঈদ আনোয়ার ও ওয়াজহাতুল্লাহ ওয়াস্তি। ১০৫ বলে ৯৩ রান করেন শেহজাদ, শেষ নয় ইনিংসে এটি তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি ইনিংস। ৪৯ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ রানের পথে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্রততম হাফ সেঞ্চুরি (৪১ বলে ৫০) করেন মিসবাহ। আমিরাতের হয়ে পেসার মানজুলা গুরুগে ৪ ও মোহাম্মদ নাভেদ নেন ১টি উইকেট। ৩৩৯/৬- সর্বোপরি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের এটি দলীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৩৪৯- ২০০৭ বিশ্বকাপে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। বিশাল লক্ষ্যের বিপরীতে দলীয় ২৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আমিরাত। মাঝে খুররম খান-সাইমান আনোয়ার চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। অভিজ্ঞ খুররম ৪৩, ফর্মের তুঙ্গে থাকা সাইমান ৬২ ও আট নম্বরে নামা আমজাদ জাভেদ ৩৩ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করে আউট হন। পাকিস্তানের হয়ে সোহেল খান, ওয়াহাব রিয়াজ ও শহীদ আফ্রিদি নেন ২টি করে উইকেট। সনাথ জয়সুরিয়ার পর ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান ও ৩শ’র বেশি উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান ‘বুম বুম’ আফ্রিদি। দারুণ জয়ে সন্তুষ্ট পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক বলেন, ‘ম্যাচের শুরু থেকেই যে যার দায়িত্ব পালন করেছে। সেঞ্চুরি না এলেও আমাদের ব্যাটিং ও বোলিং দুইই ভাল হয়েছে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে আরও বড় ইনিংস খেলতে হবে। শেহজাদ ভাল ব্যাটিং করেছে। বল হাতে আফ্রিদির জ্বলে ওঠা ইতিবাচক। সব মিলিয়ে সন্তুষ্ট আমি।’ ম্যাচের নায়ক শেহজাদ বলেন,‘ দেখে শুনে খেললে এখানে রান করা কঠিন নয়। আগের ম্যাচগুলোতে আমাদের ওপেনিং জুটি বড় হয়নি। তাই ভাল করার চেষ্টা ছিল। সোহেল ও মাকসুদের সঙ্গে অধিনায়ক মিসবাহর ইনিংসগুলো ছিল দারুণ কার্যকর। সেঞ্চুরি না পাওয়ায় কিছুটা খারাপ লাগছে। সামনে আরও ভাল করতে চাই।’ আর হারের পর আমিরাত অধিনায়ক মোহাম্মদ তৌকিরের প্রতিক্রিয়া, ‘টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সুবিধাটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। বিশেষ করে আমাদের বোলিং মোটেই ভাল হয়নি। তবে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতেই হয়। শেহজাদ-মিসবাহ দু-জনেই আমাদের ছিটকে দিয়েছে। ভাল খেলেই জিতেছে তারা।’
×