ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বের আলোচিত ৭ নারীর জীবনী নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী কাল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ মার্চ ২০১৫

বিশ্বের আলোচিত ৭ নারীর জীবনী নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী কাল

সংসদ রিপোর্টার ॥ নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের আলোচিত ৭ নারীর জীবনী নিয়ে রচিত প্রামাণ্যচিত্র আগামীকাল শুক্রবার প্রদর্শিত হবে। ‘সেভেন প্রসঙ্গ নারী’ শীর্ষক এই নাটকের একটি চরিত্রে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ইউএন উইমেন ও এ্যাকশন এইড আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানম-ি ছায়ানট ভবনে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তৃতা করেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হ্যানে ফ্রুগাল ইস্কেজার, ভূটানের রাষ্ট্রদূত পেমা চোডেন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত মিরিতা লুনডিমে, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন ইন্টাপ্রেনার্সের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া রহমান, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়েনজা ক্যাম্পস ডাঃ নোব্রেজা প্রমুখ। প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রামাণ্য নাটকটিতে আলোচিত ৭ নারীর জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। যারা নারী নির্যাতন, নারীর অধিকার, শিশু নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং সারাবিশ্বে আলোচিত হয়েছেন। আলোচিত ৭ নারীর মধ্যে রয়েছেন- নাইজিরিয়ার হাফসাত আবিওলা, ক্যাম্বোডিয়ার মু সোচুয়া, গুয়াতেমালার এ্যানবেলা ডে লীওন, উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইনেজ ম্যাক-করম্যাক, আফগানিস্তানের ফরিদা আজিজ, রিসল্যান্ড মেরিনা পিসক্লাকোভা-পার্কার এবং পাকিস্তানের মুক্তার মাই। আরও জানানো হয়, হাফসাত আবিওলা নাইজিরিয়ায় মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজন সমর্থক ও কর্মী। তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন মানবাধিকারকর্মী। এক সময় হাফসাতের বাবা ও মাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের পর হাফসাত গড়ে তোলেন কুদিরাত ইনিশিয়েটিভ ফর ডেমোক্রেসি। যার মাধ্যমে নাইজিরিয়ার মেয়েদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ দেয়। মু সোচুয়া ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী। যিনি সে দেশের তৎকালীন মন্ত্রীসভার মাত্র দুই নারীর একজন। ক্যাম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যৌন বাণিজ্যজনিত নারী পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ২০০৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সহমনোনীত হয়েছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে ক্যাম্বোডিয়ার ৪৮২ গ্রামে মানুষের ঘরে ঘরে ঘুরে জাতীয় সংসদের সদস্যপদ লাভ করেন। এ্যানবেলা ডে লীওন শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে এবং তার পরিবারকে দারিদ্র্য মুক্তির পথে নিয়ে এসেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে সংসদ পদে অধিষ্ঠিত এ্যানবেলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সুবিধা বঞ্চিতদের বিশেষ নারী ও আদিবাসী গোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তার সোচ্চার লড়াইয়ের জন্য মৃত্যু হুমকিও পেয়েছেন। আইরিশ কংগ্রেস অফ ট্রেড ইউনিয়ন্সের প্রেসিডেন্ট আইনেজ ম্যাক-করম্যাক ছিলেন মানবাধিকার, নারী-অধিকার, শ্রম অধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে নিবেদিত নারী। সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার ও ন্যায্য শ্রমনীতির সমর্থনে কাজ করে তিনি ১৯৯৮ সালের গুডফ্রাইডে শান্তি চুক্তির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখেন। অল্প সময়ের অসুস্থতায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে নিরলস লড়াই করে গেছেন। আফগানিস্তানে তালিবান শাসনামলে নারীদের অধিকারহরণ ও সামাজিক দমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও লড়াই করতে গিয়েই ফরিদা আজিজ একজন সমাজকর্মীতে পরিণত হন। স্বদেশে বার বার জীবননাশের হুমকির কারণে বর্তমানে তিনি তার দুই সন্তানসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। তিনি আফগানিস্তানে নারী অধিকার ও শান্তি রক্ষার স্বপক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মেরিনা পিসক্লাকোভা ১৯৯৩ সালে প্রবল প্রতিকূলতার মুখে নিজগৃহে নির্যাতনের শিকার নারীদের তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করতে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রথম হটলাইন সেবা চালু করেন। যা ক্রমশ বড় হয়ে সেন্টার এনা এ পরিণত হয়েছে। এ সংস্থা থেকে লক্ষাধিক রাশিয়ান নারীকে নানাবিধ সমস্যার প্রয়োজনীয় উপদেশসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। একটি তথাকথিত অনার ক্রাইমের উচিত শান্তি স্বরুপ মুক্তার মাইকে গণধর্ষণ করে চারজন। সারা পৃথিবীতে খবরের শিরোনামে স্থান পায় মুক্তার ও তার হৃদয়বিদারক কাহিনী। এ রকম পরিস্থিতিতে অন্য দশ নারীর মতো আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে সাহসী মুক্তার তার ধর্ষকদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করেন। তিনি মেয়েদের উন্নত জীবনের পথ দেখা বার জন্য স্কুল গড়ে তোলেন। বর্তমানে শিক্ষার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছেন।
×