ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি নেত্রী জনবিচ্ছিন্ন ॥ সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জনরোষ এড়াতে খালেদা নিজেই কারাগারে যেতে চাইছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ মার্চ ২০১৫

জনরোষ এড়াতে খালেদা নিজেই কারাগারে যেতে চাইছেন

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘জঙ্গী ও সন্ত্রাসী’ নেত্রী আখ্যায়িত করে বলেছেন, জনরোষ থেকে বাঁচতে এবং আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও প্রচার পেতেই জঙ্গী নেত্রী খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় নাজিমউদ্দিন রোডকেই (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার) বেছে নিতে চাইছেন। আন্দোলনের নামে বিএনপি নেত্রী এতই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন, তাতে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে নিজের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে দেশের মানুষের সামনে আসতে উনি ভয় পাচ্ছেন। তাই জনরোষ এড়াতে কারাগারকেই উনি এখন নিরাপদ মনে করছেন। উনি চাচ্ছেন যাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়! কিন্তু আইন তাঁর নিজস্ব গতিতেই চলবে। কেউ যদি আদালত অবমাননা করে তাতে আদালত যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ দেবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি হত্যাকা-ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সম্পূরক প্রশ্নের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সীমা লঙ্ঘনকারীদের আল্লাহও পছন্দ করেন না। জঙ্গী নেত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে নারী-শিশু এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মা রেহাই পাচ্ছেন না। আদালতের প্রতিও উনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন, মর্যাদা লঙ্ঘন করছেন। আদালতে যাবেন না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তো ভবিষ্যতে কেউই আর আদালতের বিচার মানতে চাইবে না। তিনি বলেন, নিরাপত্তার অভাবে নাকি বিএনপি নেত্রী আদালতে যাননি! জাতির কী দুর্ভাগ্য যিনি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন, তাঁকেই নিরাপত্তা দিতে হবে! আমরা নিরাপত্তা দিলেও উনি আদালতে যাননি। কারাগারকেই নিজের জন্য এখন উনি নিরাপদ ভাবছেন। ভাবছেন কারাগারেই হয়ত বা ভাল থাকবেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে গণহত্যা ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালিয়ে খালেদা জিয়া এখন সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। উনি চাইছেন নিজেই গ্রেফতার হতে, যাতে বিদেশী প্রচার-প্রচারণায় আসতে পারেন, শিরোনাম হতে পারেন। আন্তর্জাতিক অনুকম্পা পেতে পারেন। দেশের মানুষের সমর্থন না পেয়ে উনি এখন বিদেশীদের সহানুভূতি পেতে ও জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজেই গ্রেফতার হতে চাইছেন। তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীর কথা কেউ না শুনলে আমাদের দোষটা কোথায়? দেশের জনগণ কেন, তাঁর নিজের দলের নেতাকর্মীরাই এমন জঙ্গীপনা ও মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা পছন্দ করেন না। কারণ দেশের মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গী নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা-, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং মানুষের প্রতি চরম দুর্ব্যবহারের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছেন। দেশের মানুষ এসব স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। এ কারেেণ বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষের সামনে আসতেও ভয় পাচ্ছেন। এখন জনরোষ এড়াতে কারাগারকেই তাঁর জন্য নিরাপদ বলে মনে করছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বিষয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আদালত যে নির্দেশ দেবেন, সেটি মেনেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাসী। হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার দায়ে আইন অনুযায়ী বিএনপি নেত্রীর বিচার করা হবে। সংসদ নেতা বলেন, একটি বছরে আমরা দেশকে যখন সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশের মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে ছিল- ঠিক তখন হঠাৎ করেই বিএনপি নেত্রী হরতাল-অবরোধের নামে ৬ জানুয়ারি থেকে সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- শুরু করেছেন, মানুষকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করছেন। তাঁর এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে দেশের জনগণের ন্যূনতম সমর্থন নেই। মানুষকে পুড়িয়ে মারাই যেন তাঁর আন্দোলন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের এসব জঙ্গী কর্মকা- মোকাবেলা করতে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দু’মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের জনগণও এখন সর্বত্র রুখে দাঁড়াচ্ছে, বোমাবাজদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। সরকারী দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন এক জঙ্গী নেত্রীর উত্থান ঘটেছে, সেই জঙ্গী নেত্রী হচ্ছেন খালেদা জিয়া। উনি আইন, কানুন, সংবিধান কিছুই মানেন না। জঙ্গী শক্তি দেখিয়ে নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা উনি করেই যাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের নামে উনি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে মানুষকে বিপদে ফেলতে চাইছেন। কার দেশের মানুষ সুখে থাকলে, শান্তিতে থাকলে উনি অশান্তিতে ভোগেন। বিএনপি নেত্রী এমনই ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছেন যে কাদের ক্ষতি হচ্ছে তার কিছুই দেখছেন না। উনি ধ্বংস করছেন, আমরা গড়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ দেশবাসীর সহযোগিতায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে আমরা অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাবই। ফরিদপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ পৃথক বিভাগ হবে ॥ জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, উন্নয়নের গতিধারাকে আরও ত্বরান্বিত করতে বৃহত্তর ফরিদপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে পৃথক তিনটি বিভাগ করা হবে। নতুন এই তিন বিভাগ চালু হলে দেশের মানুষ আর রাজধানীমুখী হবে না। ফেনীকে চট্টগ্রাম নাকি কুমিল্লা বিভাগে নেয়া হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে এমন একজন জঙ্গী নেত্রীর উত্থান ঘটেছে তাতে ফেনীকে কেউ-ই নিতে চান না। তবে ফেনীবাসীর তো কোন দোষ নেই। তবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে মনে হয় ফেনীকে কুমিল্লা বিভাগেই রাখা উচিত। তবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে জনগণই দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। দেশের জনগণকে যদি জনসম্পদে পরিণত করা যায় তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ততটা মুখ্য হয়ে উঠে না। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে এবং দেশকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকার দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে এ দেশের জনগণকে জনসম্পদে রূপান্তর এবং পাশাপাশি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নানাবিধ বাস্তবমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সংসদ সদস্য আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণার বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে গবেষকদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্নমুখী সহায়তা ও অনুপ্রেরণা প্রদানে সরকার কাজ করছে। তিনি জানান, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা পূরণে সরকার ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে অধিকতর পরিবেশবান্ধব পরমাণু প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। রূপপুরে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট (২ হাজার মেগাওয়াট) সংবলিত পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চূক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ সম্পাদনের জন্য রাশিয়ান ফেডারেশন ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণ প্রদাণেও রাশিয়ান ফেডারেশন সম্মত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের নির্ধারিত ঠিকাদার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে ৩টি চূক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ৪র্থ চুক্তিটি দ্রুতই স্বাক্ষরিত হবে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হবে মর্মে আশা করা যায়। এর মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হতে উৎপাদিত হবে। সরকারী দলের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের অপর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই কৃষিবান্ধব সরকার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ১২ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে মর্মে আশা করা যায়। তিনি জানান, এখন আমাদের আর চাল আমদানি করতে হয় না। কৃষকদের ফসল উৎপাদনে বর্তমান সরকার বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে। সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে কৃষকদের স্বার্থে ব্যাপক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।
×