স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ এক সময়ের প্রমত্তা বলেশ্বর এখন কালের সাক্ষী মাত্র। নদীটি এখন নাব্যতা হারিয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে নৌযোগাযোগ ও কৃষিকাজে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দখলদার আর লাঠিয়াল বাহিনী গ্রাস করে নিয়েছে নদীর দু’পাড়ের শত শত বিঘা খাস জমি। এতে দখলদারদের কবলে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে।
চিতলমারী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদী। নদীর ওপারে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ি ঘেঁষে বয়ে গেছে নদীটি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বলেশ্বর এখন নাব্যতা সংকটের কারণে নদীর অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। নদীর দু’পাড়ের হাজার-হাজার মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। সেচ কাজে ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না চাষীরা। চিতলমারী উপজেলার বাবুগঞ্জ, খলিশাখালী, ডাকাতিয়া, গরীবপুর, কৃষ্ণনগর, শৈলদাহসহ প্রায় ৮-১০টি গ্রামের কয়েক হাজার চাষীদের জন্য এ নদী একমাত্র ভরসা। শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় সেচ কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ নদী থেকে উঠে আসা ১০-১২টি শাখা খালেও এখন পানি শুকিয়ে যাওয়ায় চরবানিয়ারী ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে সেচ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে বোরো মৌসুমে এখানকার চাষীরা দুর্বিপাকে পড়ছে। ক্রমশ এ ভোগান্তি বাড়ছে বলে চাষীরা উল্লেখ করেন। ধান, গম, সূর্যমুখি, বাদাম, কলাই, পান, কুলসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে নদীর আশপাশের এ সব জমিতে। কিন্তু সেচ মৌসুমের শুরুতেই পানি সংকটে হতাশ চাষীরা। এখানকার ৯০ ভাগ পরিবারই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। এই নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বলেশ্বর নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে তাদের। এখানকার চাষীদের জন্য পানির অভাবে কৃষিকাজ এখন চরম হুমকির মুখে এমনটি জানালেন চাষীরা। ডাকাতিয়া গ্রামের চাষী অমূল্য বিশ্বাস, সুধীর হীরাসহ অনেকে জানান, এক সময় এ নদী থেকে লঞ্চ-ইস্টিমার চলত। নদীতে মৎস্য শিকারসহ নৌকা ও ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে এ নদী পথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। মাত্র দু’ এক যুগের ভেতর নদীর এমন করুণ দশা হবে ভাবা যায় না। এখন অনায়াসে পায়ে হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া যায়। নদীর অস্তিত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যেতে বসেছে। জোয়ারের সময় নদীতে কিছুটা পানি আসলেও ভাটায় পুরোটা শুকিয়ে যায় ফলে সেচ কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চরবানিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান মুকুল কৃষ্ণম-ল জানান, সেচ কাজ ও নৌযোগাযোগের জন্য জরুরীভাবে বলেশ্বর খনন করা প্রয়োজন। এ জন্য তিনি সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল হাসান জানান, যেহেতু এটা শুকনো মৌসুম এ সময়টায় কেবলমাত্র সেচ পানির ওপর চাষীদের নির্ভর করতে হয় সেহেতু বলেশ্বর নদীতে পানির সমস্যা হলে সেচ কাজ ব্যাহত হবে। এর জন্য চাষীদের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: