ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বদেশ রায়

পশ্চিমা কূটনীতিকরা কি সঠিক পথে?

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৫ মার্চ ২০১৫

পশ্চিমা কূটনীতিকরা কি সঠিক পথে?

কিছু কিছু অপরাধ আছে, যেখানে বিচারের আগে অপরাধী চিহ্নিত হয়ে যায়। বিচার সেখানে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের যুদ্ধাপরাধীরা। ওই যুদ্ধাপরাধীরা যে অপরাধী এ নিয়ে সচেতন মানুষের কোন দ্বিধা ছিল না। বিচারের আগেই সবাই জানত ওরা অপরাধী। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের পর জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নাজি বাহিনী আলবদর, আলশামস সদস্যরা। এরা অপরাধী এ নিয়ে এ দেশের সচেতন মানুষের কোন দ্বিধা নেই। ঠিক তেমনি গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে পেট্রোলবোমা ও হাতবোমায় বাংলাদেশে যে প্রায় ৮০ জনের মতো মানুষ হত্যা করা হয়েছে, কয়েক শতাধিক আহত এই হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে বেগম জিয়া অপরাধী। যেমন গণহত্যার দায়ে হিটলার অপরাধী ছিল, গণহত্যার দায়ে গোলাম আযম অপরাধী ছিল, ২০১৩ ও ২০১৫-এর গণহত্যার দায়ে খালেদা জিয়াও অপরাধী। এ নিয়ে সৎ ও সচেতন মানুষের কোন দ্বিধা নেই। বরং এখন স্পষ্ট করে বলা যায়, খালেদা জিয়া হত্যার অপরাধে অপরাধী নয় এ কথা যারা বলার চেষ্টা করবে বা করছে তারাও গণহত্যার সহযোগী। রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, আর্জেন্টিনাসহ গোটা পৃথিবীতে এখনও গণহত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে। গণহত্যাকারীদের নেতা অপরাধী, তাকে সবাই অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত করে। কেউ তাকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকার করে না। তবে হ্যাঁ, এই সব গণহত্যাকারী নেতাদেরও ফলোয়ার থাকে। সারা পৃথিবীতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতর লাদেনের যত ফলোয়ার সে তুলনায় বেগম জিয়ার অনুসারীর সংখ্যা নগণ্য। এমনকি এই মুহূর্তে পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভেতর তথাকথিত আইএস খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর যত অনুসারী বেগম জিয়ার অনুসারীর সংখ্যা তত নয়। কারোর অনুসারীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না তিনি রাজনৈতিক নেতা না সন্ত্রাসী নেতা। লাদেনের প্রতিনিধিত্ব করছে এখন জাওয়াহিরি, এদের যত অনুসারী থাকুক না কেন, এই জাওয়াহিরি ও আবু বকর আল বাগদাদীর সঙ্গে পশ্চিমা কূটনীতিকরা কি কোন আলোচনায় বসে? তারা কি আলোচনায় বসে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম প্রধানের সঙ্গে? বসে না। একই ধরনের গণহত্যা ও একই আদর্শে কাজ করছে বাংলাদেশে খালেদা জিয়া, তাহলে তার সঙ্গে কেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা আলোচনায় বসছে? এমনকি পশ্চিমা কূটনীতিকরা কিছুদিন আগেও নিয়মিত আলোচনায় বসেছে একাত্তরের গণহত্যাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনার বেশিরভাগ বিশেষ অনুষ্ঠানে যেভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রেজ্জাক দাওয়াত পেতেন ওইভাবে কিন্তু প্রগতিশীল ও রেজ্জাকের থেকে বড়মাপের আইনজীবীরা পেতেন না। এমনকি রেজ্জাক যার কাছে কাজ শিখেছেন তিনিও পেতেন না। এক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সহজ উত্তর আইএস, আল কায়েদা, বোকো হারাম এসব সংগঠন ওই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। বাংলাদেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তাই স্বাভাবিকভাবে তাদের সঙ্গে বা তাদের প্রধানের সঙ্গে তারা কথা বলতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে পশ্চিমাদের কাছে ছোট্ট একটি প্রশ্ন রাখতে হয়, ইরাকে বাথ পার্টি সে দেশের স্বীকৃত প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল। সেই দলের প্রধান সাদ্দাম ক্ষমতায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অভিযোগে পশ্চিমারাই যুদ্ধ করছে, না অন্য কেউ যুদ্ধ করেছে? তাই নিবন্ধিত ও স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হলেই যে ওই দল সন্ত্রাসী দলে রূপান্তরিত হবে না এটা যে কোন যুক্তি হতে পারে না তা পশ্চিমাদের কাজ দিয়েই প্রমাণ করে। ইরাকের বাথ পার্টির যতটা প্রগতিশীল ইতিহাস আছে বাংলাদেশে বিএনপির সেটা নেই। আর জামায়াতের তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের আচরণ ভিন্ন। ব্রিটিশ আমেরিকার পুডল। তাই ব্রিটিশ হাইকমিশনার যেদিন দেখা করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেদিনই এ কলামে প্রশ্ন রেখেছিলাম। আর ওই দিনই বোঝা গিয়েছিল যে, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এলে তিনিও যাবেন। মিজ বার্নিকাট নিঃসন্দেহে মজিনার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তাই তিনি একা না গিয়ে একটু দলবল নিয়ে খালেদার সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু মিজ বার্নিকাটকে যদি কেউ একটি প্রশ্ন করে, আপনি কোন্ খালেদার সঙ্গে দেখা করলেন? যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার সঙ্গে না আবু বকর আল বাগদাদী খালেদা? মিজ বার্নিকাট, গত ৫ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে ছবি দেখুন আর অন্তত একবার ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে যান। তারপরে বলুন ইনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া না আবু বকর আল বাগদাদী খালেদা? আবু বকর আল বাগদাদীর নির্দেশে গত ৫ জানুয়ারি থেকে যত মানুষ পুড়িয়ে ও অন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে তার থেকে কতগুণ বেশি মানুষ বাংলাদেশে গত ৫ জানুয়ারি থেকে খালেদার নেতৃত্বে পুড়িয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে সে হিসাবটি দেখুন। এছাড়া পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে তথ্য বেশি থাকার কথা। তাছাড়া সাদা চামড়া বা পশ্চিমা নাগরিক দেখলে আমরা তাদের একটু বেশি শিক্ষিতও মনে করি। সে হিসাবে আমাদের থেকে তাদের বেশি জানা উচিত, বাংলাদেশের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকা-গুলোর যোগসূত্র কোথায়? বর্তমান পৃথিবীতে যে সন্ত্রাস চলছে তার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সন্ত্রাস একই সুতায় গাঁথা, এ সত্যটি তাদের জানা উচিত। বোকো হারাম ঘোষণা দিয়ে আইএসের তথাকথিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীকে তাদের খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছে। তারাও আইএস কায়েম করতে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে খালেদার ছেলে তারেক রহমানের অতিথি হিসেবে একবার ও জামায়াতে ইসলামীর অতিথি হিসেবে আরেকবার জাওয়াহিরি বাংলাদেশে এসে গেছে। যেগুলো পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। সেই জাওয়াহিরি বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারসহ এই এলাকায় আইএস প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ডাক দিয়েছে। জাওয়াহিরির এই ঘোষণার কয়েক মাস পর থেকে বেগম জিয়া, তারেক রহমান ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে আইএস অনুকরণে সন্ত্রাস চলছে। অর্থাৎ জাওয়াহিরির নির্দেশ পালন করে চলেছেন বাংলাদেশের আবু বকর আল বাগদাদী খালেদা। এখন পশ্চিমা কূটনীতিকরা বলতে পারেন, বাংলাদেশের সমস্যাটি তো এখানে নয়, বাংলাদেশের সমস্যা ২০১৩-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ওই নির্বাচন সঠিক ইনক্লুসিভ নির্বাচন হলে এ সমস্যা হতো না। বাংলাদেশের জামায়াত-বিএনপির বুদ্ধিজীবীরাও একই কথা বলেন। বাংলাদেশের জামায়াত-বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা এ কথা বলবেনই, কারণ এটা তাদের সন্ত্রাসের সপক্ষে অবস্থান নেয়ার একটি কৌশল। কিন্তু পশ্চিমা কূটনীতিকরা কি বিষয়টির একটু গভীরে যেতে পারেন না, না যেতে চান না? ২০১৩-তে ইনক্লুসিভ ইলেকশন করার জন্য শেখ হাসিনার দিক থেকে কোন ঘাটতি ছিল কি? তিনি সর্বদলীয় সরকার ও সেই সরকারে বিএনপিকে সংযুক্ত করার জন্য কি খালেদাকে ফোন করেননি? তার ফল কী সেটা কি পশ্চিমা কূটনীতিকরা জানেন না? আর বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের রায়ের পরে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার কোন উপায় যে আর নেই, এই জ্ঞানটুকু তো নিশ্চয়ই পশ্চিমা কূটনীতিকরা রাখেন। তাছাড়া ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে তো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তাহলে কেন বিএনপি ওই নির্বাচনে গেল না? পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের তথাকথিত নিরপেক্ষ সুশীলদের মত না শুনে নিজেরা একটু আন্তরিক হলে, এ দেশের ঘটনাগুলো স্টাডি করলে বুঝতে পারবেন কেন বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। বিএনপির নেতৃত্ব বিশেষ করে খালেদা ও তারেক সম্পূর্ণভাবে জামায়াত ও পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই নিয়ন্ত্রিত। জামায়াত ও আইএসআই জানে বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলেও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নেতাদের ছেড়ে দিতে পারবে না। এমনকি প্রহসনের বিচার করেও তাদের মুক্তি দিতে পারবে না। তখন বাংলাদেশে হাজার হাজার শাহবাগ হবে। তাই জামায়াতে ইসলামী কখনই চায় না বিএনপি নির্বাচনে যাক। পাশাপাশি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইও চায় না। জামায়াত ও তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে এমন একটি সন্ত্রাসী অবস্থা কায়েম করা যাতে ইরাক বা সিরিয়ার মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ধ্বংস হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ওই নৈরাজ্যকর অবস্থায় জামায়াত জেলখানা থেকে তাদের নেতাদের বের করে আনতে পারবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ যদি এ ধরনের একটি জঙ্গী নিয়ন্ত্রিত নৈরাজ্যকর অবস্থার ভেতর চলে যায় তাহলে তা হবে ভারতের জন্য খুবই সমস্যাসঙ্কুল একটি অবস্থা। ভারতকে এ ধরনের বেকায়দায় ফেলাও পাকিস্তানের জন্য খুব বড় ধরনের বিজয়। খালেদা এ কারণেই ২০১৩-তে নির্বাচনে যাননি। এখনও তিনি তথাকথিত আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারও কিন্তু মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনের জন্য কোন আন্দোলন নয়। তিনি ৫ জানুয়ারির পর থেকে ধারাবাহিক সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচী কিন্তু দেননি। অবশ্য এটাও হতে পারে পশ্চিমারা এ সত্যটি বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। অন্য একটি হিসাবে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের নিজেদের জন্য একটা লাভ খুঁজছে। তবে আখেরে তাদের সে অঙ্ক মিলবে না। যাহোক, এ লেখায় পশ্চিমাদের ওই হিসাবটি নিয়ে আলোচনায় যাব না। তাতে লেখার পরিসর বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের আরেকটি হিসাব আছে। এ হিসাবটির কারণে তারা বিএনপি ও খালেদার এই সন্ত্রাসী কর্মকা-কে অনুমোদন করে। এই হিসাবের ফলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তারা বাংলাদেশকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বদলে আদর করে ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ বলে। তাদের এই হিসাবটি বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে যে এক শ’ বাইশটির মতো ইসলামিক জঙ্গী সংগঠন আছে এদের নিয়ে। তাদের হিসাব হলো, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে থাকলে এই জঙ্গী সংগঠনগুলোও বিএনপির সঙ্গে থাকবে। এর ফলে তারা একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকবে। ফলে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের উত্থান কম হবে। এই মত বা হিসাবটি পশ্চিমাদের নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত না বাংলাদেশের তথাকথিত নিরপেক্ষ সুশীলরা তাদের মাথায় এটা ঢুকিয়েছে এ বিষয়টি জানা নেই। তবে পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশে যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে, যারা বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতি বিশেষ করে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করে তাদের তারা নিরপেক্ষ মনে করে না। তারা তাদের আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক মনে করে। আর যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে না, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করে না তাদের নিরপেক্ষ মনে করে। এমনকি কোন কোন সুশীল আছেন, যারা মুখে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ বললেও তাদের ভিন্ন একটি চরিত্র আছে। কারণ, তাদের পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। পশ্চিমা কূটনীতিকরা এদের নিরপেক্ষ মনে করে। অবশ্য তারা ভেবে দেখে না আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ওয়াশিংটন, জেফারসনকে যারা স্বীকার করে না তারা আসলে কারা? বাংলাদেশের এই তথাকথিত সুশীলরা জামায়াতে ইসলামীর কৌশলটি পশ্চিমাদের কাছে একটি আধুনিক এবং সঠিক ধারণা হিসেবে তুলে ধরে। তারা বলে, জামায়াতকে এভাবে বিএনপির সঙ্গে রাখলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ঝুঁকি কমে যাবে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা অনেকেই এ দেশটিকে স্টাডি না করে তোতাপাখির মতো শেখানো বুলিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে। কিন্তু তারা সহজ হিসাবটুকু করলে বুঝতে পারবে, ১৯৯১ থেকে জামায়াত ও বিএনপি প্রকাশ্যে এক হওয়ার পর থেকে এ দেশে ইসলামী জঙ্গীবাদ কীভাবে দ্রুত বেড়েছে। ২০০১-এ জামায়াত ও বিএনপি একসঙ্গে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পরে কিভাবে সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে জঙ্গীরা সারাদেশে বোমা ফাটিয়েছে, বিচারক হত্যা করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ বাংলাদেশ জঙ্গীর কতটা অভয়ারণ্য হয়েছিল। বর্তমানেও জঙ্গীরা বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস করতে পারছে তা খালেদার বিএনপির কারণে। পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের সমাজের ইতিহাস একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম, এমনকি পাকিস্তান ও উত্তর ভারতের মুসলিম আর বাংলাদেশের মুসলিমের চরিত্র এক নয়। বাংলাদেশের মুসলিম সহজিয়া। এরা শুধু ধর্মের প্রতি অনুগত নয়, হাজার বছরের সংস্কৃতির প্রতি, ভাষার প্রতিও অনুগত। ধর্ম এদের বিশ্বাস কিন্তু সংস্কৃতি এদের জীবনাচরণ। তাই এখানে যে জঙ্গী গড়ে উঠছে তা মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের টাকায়। পশ্চিমা কিছু টাকাও যে তারা নানানভাবে পাচ্ছে না তাও কিন্তু নয়। আর খালেদা ও তারেকের নেতৃত্ব এদের আশ্রয় দিচ্ছে বলেই এরা বাড়তে পারছে। এ মুহূর্তে খালেদা, তারেক ও জামায়াত মাইনাস যে কোন দক্ষিণপন্থী শক্তি গড়ে উঠলেই বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ বর্তমানের তুলনায় দশ শতাংশে নেমে আসবে। তাই পশ্চিমারা যদি বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার সহযোগী ও অর্থনৈতিক সহযোগী হিসেবে চায়, তাহলে বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের কূটনীতিকদের নিয়ে একটু চিন্তা করতে হবে। অন্তত এটুকু তাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন যে, তাদের কূটনীতিকরা যেন দেশটির সমাজ, রাজনীতি ও সমস্যা সম্পর্কে স্টাডি করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে মতোই নিজ নিজ দেশকে জানায়। বাংলাদেশে দীর্ঘ সামরিক শাসন ও মৌলবাদী অর্থের আনুকূল্যে যে তথাকথিত সুশীল সমাজ গড়ে উঠেছে তাদের পরামর্শমতো সিদ্ধান্ত নিলে মূলত পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধেই কাজ করবেন। [email protected]
×