ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপকূলীয় বন দখল

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৪ মার্চ ২০১৫

উপকূলীয় বন দখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৩ মার্চ ॥ কলাপাড়া উপকূলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে করা হচ্ছে বাড়িঘর। ফলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল পরিণত হচ্ছে বিরান ভূমিতে। ঝড় জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা থেকে মানুষের নিরাপত্তায় রক্ষাকবচ এই বনাঞ্চল দ্রুত নিশ্চিহ্ন হওয়ায় উপকূলের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। দূুর্যোগকালীন জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা ঠেকানো বন উজাড়ে মানুষকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। গাছ কেটে উজাড়ের পরে বনাঞ্চল দখল করে বাড়িঘর, পুকুর তৈরির ফলে খাস জমিসহ বনাঞ্চলের মালিকানা পর্যন্ত হারাচ্ছে সরকার। বনসহ খাসজমি পর্যন্ত বেহাত হয়ে যাচ্ছে। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে ওই দলের একটি চক্র বন উজাড়ের সঙ্গে জড়িত থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে ভূমি অফিসের একটি চক্র সক্রিয়ভাবে জড়িত। এ চক্র বনাঞ্চলকে চাষযোগ্য কৃষি জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দিচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে মাছের ঘের, পুকুর ও বাড়িঘর করা শুরু হয় কয়েক বছর আগে। এ ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডও দায়ী। কারণ তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বাইরের বাগানসহ ডোবা মাছ চাষের নামে লিজ দেয়। এই সুযোগে লিজ গ্রহিতা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের নামে করছে বাড়িঘর ও পুকুর। ফলে জোয়ারভাটার পানি চলাচল বন্ধ হয়ে বাগানের ছইলা, কেওড়া গাছগুলো মরে যায়। হয়ে যায় বিরানভূমি। ’৬০-এর দশকে এই এলাকায় চার শ’ কিেিলামিটার এলাকাজুড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ করা হয়। লোনা পানির করালগ্রাস থেকে ফসলী জমি ও বন্যার কবল থেকে মানুষের জীবন সম্পদ রক্ষার জন্য এই বেড়িবাঁধ করা হয়। এজন্য ৩৫০ মিটার থেকে সর্বনিম্ন ৯০ মিটার চওড়া জমি পাউবো বাঁধ করার জন্য অধিগ্রহণ করে। বাঁধ ও ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য পানির ঝাপটা ঠেকাতে বাঁধের দুইদিকে করা হয় বনায়ন। কিন্তু এই বাঁধের বাইরের অন্তত দুই শ’ কিমি বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। উজাড় প্রক্রিয়া এখন চলছে প্রকাশ্যে। সাগর পারের ইউনিয়ন লতাচাপলী, যেখানে কুয়াকাটার অবস্থান। ইউনিয়নের চারদিক ঘেরা বেড়িবাঁধের বাইরে সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এক- পঞ্চমাংশ নেই। আলীপুর বন্দর থেকে চাপলী যেতে বনাঞ্চলের কারণে দিনের বেলা মানুষ চলাচলে ভয় পেত। শোনা যেত শিয়ালসহ বন্য প্রাণীর ডাক। সবুজের সমারোহ ছিল। এখন এসব উজাড় করে বরফকল, বাড়িঘর, দোকানপাট, মাছের ঘের, এমনকি করা হয়েছে স মিলসহ ইটভাঁটি। কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে এখনও সাক্ষ্য দিচ্ছে অসংখ্য মরা গাছ। প্রভাবশালী দখলদাররা প্রথম দুইদিক থেকে বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে গাছগুলো (ছইলা ও কেওড়া) মরে যায়। তারপরে সুযোগ বুঝে কেটে নেয়। কাটা গাছ যাচ্ছে কয়েকটি ইট ভাঁটিতে। এভাবে গোটা পোল্ডারের দৃশ্য বিদ্যমান। পূর্ব ও পশ্চিম মধুখালী লেকের দু’দিকে রয়েছে মনোরম বিশাল বনাঞ্চল। এ বাগানটির কারণে গত সিডরে বেড়িবাঁধ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু তিন/চার কিমি বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। এখন গাছকাটার পাশাপাশি সেখানে বাড়িঘর তোলার হিড়িক চলছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৫০টি ঘর তোলা হয়েছে বনের মধ্যে। কলাপাড়া পৌরশহরের বন বিভাগের অফিসের পাশে বাগান রয়েছে। যার মধ্যে করা হয়েছে বাড়িঘর। বনবিভাগের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে। কেউ অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে না। ধুলাসার. চরধুলাসার. গঙ্গামতি, বড়হরপাড়াÑ এসব গ্রাম সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে ছিল বনাঞ্চলে ঘেরা। ছইলা কেওড়া, পাহাড়ী নিম, ফল, রেইনট্রি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার গাছ ছিল। এ বনাঞ্চলের অধিকাংশ উজাড় হয় চারদলীয় জোটের সময়। এখন শুধু বেড়িবাঁধটি পড়ে আছে, হয়েছে বিরানভূমি। মহীপুর রেঞ্জের দু’দিকে ছিল বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এই বন কেটে করা হয়েছে বরফকল, ডক আর বাড়িঘর। বনবিভাগের নাকের ডগায় এসব হয়েছে। বনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ভূমি অফিস বাগান, ডোবা এসবকে চাষযোগ্য ভূমি দেখিয়ে প্রভাবশালী লোকজনকে ভূমিহীন সাজিয়ে তাদের বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। কোটি টাকার বিনিময়ে এসব করা হয়েছে বলে এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এখনও বন্দোবস্ত কেসের নথি বের করে যাচাই করলে ধরা পড়বে এরা আসলে কারা। এ ব্যাপারে কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কৃষি জমিছাড়া কাউকে বন্দোবস্ত দেয়ার সুযোগ নেই। কাউকে এমন জমি বন্দোবস্ত দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বনবিভাগের মহীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন জানান, এসব খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
×