ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

জামায়াত শিবিরের ছয় জনের বিষয়ে শুনানি ২১ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ মার্চ ২০১৫

জামায়াত শিবিরের ছয় জনের বিষয়ে শুনানি ২১ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতে ইসলামী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিষয়ে ২১ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। শোকজ নোটিসের জবাব দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল এই দিন নির্ধারণ করেছেন। নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানকে দেয়া সাজার বিরুদ্ধে বিবৃতি দানকারী দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে আরও ১০ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারকৃত জামালপুরের এ্যাডভোকেট শামসুল আলম ও এসএম ইউসুফ আলীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি সিরাজ মাস্টার আটককৃত ২০-২৫ জনকে নিজ হাতে কোপাতে থাকে। অন্য রাজাকারদেরও কোপাতে বলে। জবানবন্দী শেষে আজ সাক্ষীকে জেরা করার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য মামলায় পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে ৮ম সাক্ষী মোঃ সুন্দর গাজী জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি ফোরকান মল্লিক নিজ হাতে গুলি করে সনদ কুমারকে হত্যা করে। আজ পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াত ইসলামী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিষয়ে ২১ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এর আগে তারা ট্রাইব্যুনালে শোকজের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতারা হচ্ছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিসের জবাব দাখিল করেন জামায়াত-শিবির নেতাদের পক্ষে তাদের আইনজীবী এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের একই রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগের জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন জামায়াত নেতাদের এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি প্রসিকিউশন পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতে ইসলামী এবং দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা করে। বার্গম্যান ॥ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত অবমাননার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানকে দেয়া সাজার বিরুদ্ধে বিবৃতি দানকারী দেশের ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে আরও ১০ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ক্ষমা পাওয়া ১০ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন তামিমা আনাম, সেউতি সবুর, ড. ফোস্টিনা পারেরা, মহিউদ্দিন আহমেদ, মোঃ নূর খান লিটন, ড. ফিরদৌস আজিম, ড. আলী রিয়াজ, ড. পারভিন হাসান, ড. সামিয়া হক ও তসলিম সারাহ শাহাবুদ্দিন। তিন রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাদশা জবানবন্দী প্রদান করেছেন। আজ তাকে আসামি পক্ষে আইনজীবী জেরা করবেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম শেখ মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাদশা। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৩ বছর। আমার ঠিকানাÑগ্রাম বেশরগাতি, থানা ও জেলা-বাগেরহাট। আমি বর্তমানে মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৯ বছর। তখন আমি বাগেরহাট পিসি কলেজে বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। তিনি আরও বলেন, ১৮ জুন ১৯৭১ শুক্রবার সকাল আনুমানিক দশটা সাড়ে দশটার দিকে আমরা ক্যাম্প থেকে সিকি মাইল দূরে কান্দাপাড়া বাজারে বাজার করতে আসি। আমরা বাজারে থাকাকালীন বেলা এগোরোটার দিকে পশ্চিম দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই এবং কিছুক্ষণ পর ২০-২৫ জন পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের সহযোগী ৩০-৩৫ জন রাজাকার বাজারের দিকে আসছে। রাজাকারদের মধ্যে আমি সিরাজ মাস্টারকে চিনতে পারি। আনুমানিক দেড় ঘণ্টা পরে দেখতে পাই আসামি সিরাজ মাস্টার পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা ২০-২৫ জনকে মারধর করতে করতে বাজারের দিকে নিয়ে আসে। আটককৃততে আসামি সিরাজ মাস্টার নিজ হাতে কোপাতে থাকে। অন্য রাজাকারদেরও কোপাতে বলে। তারা চলে গেলে ১৯ জনের লাশ দেখতে পাই। ফোরকান মল্লিক ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ৮ম সাক্ষী মোঃ সুন্দর গাজী জবানবন্দীতে বলেছেন আসামি ফোরকান মল্লিক নিজ হাতে গুলি করে সনদ কুমারকে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আজ পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
×