ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক

বগুড়ার দুই শ’ গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ মার্চ ২০১৫

বগুড়ার দুই শ’ গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে

সমুদ্র হক ॥ পানিবাহিত নীরব ঘাতক আর্সেনিকের থাবা থেকে এখনও মুক্ত হওয়া যায়নি। বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলার অন্তত ২শ’ গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। তবে এসব গ্রামের কত মানুষ আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে সেই হিসাব নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। হাত ও শরীরের কোথাও ফুঁসকরি উঠলে, সারাক্ষণ গা চুলকালে, হাত-পায়ের তালুতে অস্বাভাবিক দাগ দেখা গেলে ও খসখসে অবস্থা বিরাজ করলে লোকজন নিজ উদ্যোগে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক গবেষণায় বলা হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তি তীব্র আর্সেনিকিসোস রোগে আক্রান্ত হলে তা ক্যান্সারে পরিণত হয়। দেহের কোন অঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে। এক সূত্রে বলা হয়েছে বগুড়া সদর শেরপুর ধুনট গাবতলী সারিয়াকান্দি শাজাহানপুর শিবগঞ্জ সোনাতলা উপজেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের ২শ’রও বেশি হস্তচালিত টিউবওয়েলে আর্সেনিকের অস্তিত্ব মিলেছে। এসব টিউবওয়েল সিলড করার পরও অনেক সময় এলাকার লোকের সচেতনতার অভাবে সিল ভেঙ্গে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করা হয়। আর্সেনিকের বিষয়টি এখন এমন হয়েছে যে মানুষ সহজে আর বিশ্বাস করতে চায় না। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামে বছর কয়েক আগে আর্সেনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক ব্যক্তি মারা যায়। শাজাহানপুর উপজেলায় এক ব্যক্তির আঙুল কেটে ফেলতে হয়। এরপর ওই দুই গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামে আর্সেনিক প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলা হয়। লাল রং দেয়া টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। গ্রামের লোকজন বলাবলি করে সেই কবে কে পানি ব্যবহার করে মারা গেছে তা মনে নেই। সূত্র জানায়, বগুড়ায় এমন গ্রামও আছে যেখানে টিউবওয়েলের পানিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ থেকে দশ গুণ মাত্রার একশ’ থেকে ৫শ’ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি) আর্সেনিক পাওয়া গেছে। যেখানে প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ৫০ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি) মাত্রার আর্সেনিক গ্রহণযোগ্য। এসব গ্রাম চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। একজন চিকিৎসক জানান, মানব শরীরে মাত্র ৪২ মিলিগ্রাম আর্সেনিক যে কোনভাবে প্রবেশ করানো হলে সে মারা যাবে। আর্সেনিকোসিস রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা না হলে মেনাসিন রোটেসিস লিউকোমেনানোসিস বোয়েন্স নামে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবে। এই অবস্থায় রোগীর শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে একপর্যায়ে কর্মক্ষমতা তো হারিয়ে যাবেই যে কোন সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এই রোগে কেউ আক্রান্ত হলে শরীরে কোন চিহ্ন ধরা দেবে না। একবারে শেষ পর্যায়ে ত্বক অস্বাভাবিক খসখসে হয়ে গোটা দেহে ছোট বড় নানা ধরনের তিল উঠে ভরে যাবে। তখন কারও কিছু করার থাকে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একটাই পথ আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা এবং যাবতীয় কাজে ব্যবহার করা। এ বিষয়ে একজন অধ্যাপক বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্সেনিক ভীতি আর নেই। সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ যেভাবে শুরু হয়েছিল এখন আর তাও নেই। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জানান আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকাগুলোতে নলকূপের প্রায় ১৫০ ফুট মাটির গভীরে আর্সেনিক ঝুঁকি রয়েছে। এই স্তরের নিচে শিলা ও পাথরের স্তর বিশেষ ধরনের যন্ত্রে কেটে অন্তত ২৫০ ফুট নিচে গিয়ে আর্সেনিকমুক্ত পানি মেলে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর এক সূত্র জানায়, টিউবওয়েল ড্রিলিংয়ের অভিজ্ঞ মেকানিকস এনে পাইপ বসিয়ে বিশেষ গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে।
×