ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার জঙ্গী নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার জঙ্গী নেটওয়ার্ক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নামে চট্টগ্রাম মহানগরীতে একটি জঙ্গী সংগঠন সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। নাম সর্বস্ব এ সংগঠনটির কোন সাইনবোর্ড বা অফিস কার্যালয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি র‌্যাব। তবে সংগঠনটির কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ সংগঠনের কর্মী ও সংগঠকরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে বলে জঙ্গীদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ধরা পড়া জঙ্গীদের মাঝে নারী সদস্যও ছিল। এ বিষয়ে র‌্যাব-৭ ওই সংগঠনের লিফলেট উদ্ধার করেছে। লিফলেটে সংগঠনটির কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকানা নেই। তবে সভানেত্রী সুমাইয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নারীদের উদ্দেশে লেখা হয়েছে। র‌্যাব-৭ এর অভিযানে উদ্ধারকৃত এ লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে ইসলামের সঠিক ধারা প্রচারণার নামে এ সংগঠনটি কাজ করছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীকে এ সংগঠনটি তাদের কর্মসূচীর আওতায় আনতে ও বেগবান করতে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ দুটি ভাগে ভাগ করেছে। সংগঠনটির কাছে চট্টগ্রাম মহানগরী নতুন। ফলে এখানে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অফিস কক্ষ, ল্যাপটপসহ বায়তুল মালের (নগদ অর্থ) প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ১৬টি থানার আওতায় সাপ্তাহিক ও ইসলামী মাহফিলের নামে বিভিন্নস্থানে গোপন বৈঠক চলছে। এ ধরনের বৈঠকে সংগঠনের ৮ থেকে ১০ সদস্য উপস্থিত থাকেন। এই সদস্যদের আবাসস্থলে পৃথকভাবে নির্দিষ্ট দিনে জমায়েত হয়। প্রত্যেক সদস্য প্রত্যেক সপ্তাহে পৃথকভাবে নিজ নিজ আবাসস্থলে এ সব সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে। বিশেষ করে ঘিঞ্জি এলাকাগুলোতে এ ধরনের বৈঠক সবচেয়ে বেশি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সদস্যরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ সংগঠনের কর্মী ও সদস্যরা সমর্থক কালেকশনের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রচার ও কর্মসূচী পালন করছে। সংগঠনটির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নারী এ সংগঠনটির বর্তমান সদস্য ১৯ জন। কর্মী রয়েছে ১ হাজার ৭৭ জন। সমর্থক রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। সদস্য প্রার্থী ৫ জন। অগ্রসর কর্মী হিসেবে কাজ করছে ৬৮ জন নারী, তরুণী ও কিশোরী। ২০১৫ সালে এ সংগঠনে সদস্য ৫ জন বেড়েছে। অগ্রসর কর্মী হিসেবে আরও ১০ জন কাজ করছে। কর্মী হিসেবে নতুনভাবে ৯৮ জন ও সদস্য প্রার্থীর জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে ৬ জন। সংগঠনটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণ অংশে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত নারী হিসেবে রয়েছে ১ লাখ। এর মধ্যে সভানেত্রী সুমাইয়া আফরোজের হিসেব অনুযায়ী শতকরা ৮ ভাগ নারী অর্থাৎ প্রায় ৮ হাজার জন তাদের সঙ্গে কাজ করছে। মহানগরীর দক্ষিণ অংশের নারী সদস্যরা পার্বত্য অঞ্চলসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছে। চলছে দাওয়াতী কাজ ও জনশক্তির প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। এলাকাভিত্তিক ধর্মীয় প্রচারণার নামে বিভিন্ন ঘরে ঘরে ৮ থেকে ১০ জনের সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় ১১২টি ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে সংগঠনটির সদস্যদের। প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীর মধ্যে ৪টি শিক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও ৭টি শিক্ষামূলক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। অগ্রসর কর্মীদের মানোন্নয়নে ৮টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদস্য প্রার্থীদের বিশ্লেষণমূলক ও মানোন্নয়নমূলক তিনটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও তিনটি প্রভাতী আসর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এ সংগঠনের কর্মী, সদস্য ও সমর্থকদের জন্য। এ সংগঠনের আওতায় থাকা সদস্য ও তাদের অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ২০১৫ সালের কার্যক্রম হিসেবে ৪টি শিক্ষা শিবির, ১০টি শিক্ষা বৈঠক, ১১টি মান্নোয়ন কর্মশালা, ২টি ম্যাগজিন প্রকাশ, ৫ ধরনের লিফলেট প্রকাশ ও ছাত্রী কল্যাণ ফান্ডের জন্য ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহের একটি টার্গেটও রয়েছে তাদের। পরিকল্পনায় থাকা এ সব কার্যক্রমের জন্য তাদের প্রয়োজন কমপক্ষে ২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বাংলাদেশী ইসলামী ছাত্রী সংস্থা চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভানেত্রী সুমাইয়া আফরোজের পক্ষ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত লিফলেটটি নারীদের উদ্দেশে বিতরণ করা হয়েছে। সংগঠনটির ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া গেছে, ইসলামী শিক্ষা দিবস, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ক্রোড়পত্র, নারী দিবস, শবে বরাত ও আশুরা উপলক্ষে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হ্যান্ড ম্যাগজিন, বার্ষিক প্রকাশনা, ক্যালেন্ডার, ডায়রি, সিয়াম, প্রত্যয়, ছাত্রী বার্তা ও সাময়িকী কাজও করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবীন বরণ, ভাষা দিবসে সাহিত্যের আসর, স্বাধীনতা দিবসে পুস্তক ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, পিঠা ও আচার উৎসব, শবে-মেরাজ, আশুরা উপলক্ষে আলোচনা সভা, ঈদ পুনর্মিলনী, দোয়া ও ইফতার মাহফিল, দেয়ালিকা ও পোস্টারিং ইত্যাদি কার্যক্রমেও তারা অংশ নিয়েছে। র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী প্রশিক্ষণে বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে নেমেছে ৮ হাজার সদস্যের একটি মহিলা জঙ্গী সংগঠন। হালিশহরের বসুন্ধরার বি এ ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে গ্রেফতারকৃত ৪ জঙ্গীর মধ্যে একজন ছিল নারী। এছাড়াও ওই ভবন থেকে বাংলাদেশী ইসলামী ছাত্রী সংস্থার প্রায় অর্ধশত লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই লিফলেটে ছাত্রী সংস্থাটির দাওয়াতী কর্মকা-, ব্যয়বহুল কার্যক্রম ও প্রকাশনা, দাওয়াতী কর্মসূচী, প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছেন। এ সংগঠনটিকে উদ্ঘাটন করতে র‌্যাব সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে বলে জানালেন এক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে র‌্যাবের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সংগঠনটির বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী থেকে গ্রেফতার হওয়া ১২ জঙ্গীর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কক্সবাজারের মগনামা এলাকায় মাওলানা আবুল কালামের ছেলে ফয়জুল হক ও মেয়ে রহিমা আক্তারসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রহিমাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে নারী সংগঠনের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হয়েছে র‌্যাব।
×