ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও একটি ওয়ান ইলেভেন আনার ছক কষছিলেন মান্না

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ মার্চ ২০১৫

আরও একটি ওয়ান ইলেভেন আনার ছক কষছিলেন মান্না

শংকর কুমার দে ॥ আবারও আরও একটি ওয়ান ইলেভেন করার ছক কষছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে এবার মাইনাস-টু এর এক নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে ‘মাইনাস-ওয়ান’ করার পরিকল্পনা হয়। নাগরিক ঐক্য নামের সংগঠন দিয়ে সুশীল সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার একটি প্লাটফরম তৈরি করা হয়। এটাই পরবর্তীতে হতো ‘কিংস পার্টি’। ‘সেনা হস্তক্ষেপ’ ও ‘লাশ ফেলার’ সেই মান্না-খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, ক্ষমতায় যেতে পালাবদল ঘটাতে, আবারও আর একটি ওয়ান ইলেভেনের পথ তৈরি করতে ছক কষছিলেন মান্না। আগেকার ওয়ান ইলেভেনের সময় নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে গিয়ে আর দলে না ফিরতে পারার ক্ষোভই আরেকটি ওয়ান ইলেভেন তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে। তখনকার কিংস পার্টি গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস, ড. কামাল হোসেন, মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলছুট নেতাসহ অন্যদের ভূমিকা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন তিনি। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতারোহণের পর গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে তখনকার সুশীল সমাজের মধ্যে যারা ভূমিকা পালনকারী বিভিন্ন পেশার সুশীল সমাজের কুশীলবদের ভূমিকাকে অনুসরণ, অনুকরণ করেই তিনি গঠন করেন নাগরিক ঐক্য। আওয়ামী লীগের দিকে ভিড়তে না পেরে নাগরিক ঐক্য গঠন করে সুশীল সমাজের বিপুল সাড়া পেয়ে বিএনপির একাংশের নেতাকে লক্ষ্যবস্তু করেন তিনি। বিএনপির একাংশের নেতা হিসেবে ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয় তার। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে যোগাযোগ করে নাশকতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানো, আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থন আদায়, আগামীতে জাতীয় সংসদের এমপি হিসেবে বিএনপি থেকে মনোনয়ন ও সর্বোপরি আরেকটি ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির ছক কষার টার্গেট করে এগুচ্ছিলেন। কিন্তু খোকার সঙ্গে একটি ফোনালাপ কেলেঙ্কারিতে তার নীলনকশার সবকিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তার রাজনৈতিক জীবনের চরম ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন মান্না। তদন্তকারী সূত্র জানান, আরেকটি ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত করার জন্য বিদেশের অনেকের সঙ্গেই ফোনালাপ করেছেন মান্না। এর মধ্যে অস্ট্র্রেলিয়া প্রবাসী ছাত্রলীগের এক নেতা শহীদুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ী মশিউর রহমান মামুন, যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত খোকা তাদের অন্যতম বলে জানান তিনি। এ ছাড়াও বিদেশের আরও অনেকের সঙ্গেই ফোনালাপ হয়েছে তার। আগের ওয়ান ইলেভেনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা বিদেশে আছেন তাদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মান্না জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, আগেকার ওয়ান ইলেভেনের সময় জেনারেল মইন ও সেনা সমর্থিত ফকরুদ্দিন সরকারের সমর্থনে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে, সভা-সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে, টিভির ‘টক শো’গুলো দেখে তিনিও টিভির টক শো প্রোগ্রাম শুরু করেন এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত হন। এভাবেই রাজনীতিকের সঙ্গে সুশীল সমাজের তকমা লাগিয়ে নাগরিক ঐক্যের নামে সংগঠন করে এগুচ্ছিলেন। মান্না জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তিনি লাশ ফেলার রাজনীতি করেননি, এখনও করেন না, পছন্দও নয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই বিএনপির ডাকার অবরোধ-হরতালের সমর্থনে পেট্রোলবোমার আগুনের নাশকতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সেনা অভ্যুত্থানের জন্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা অস্বীকার করেছেন মান্না। তবে বিএনপির নাশকতা অব্যাহত থাকলে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির পরিস্থিতির জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ জন্যই খোকার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতার মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আপনি ও গণফোরাম সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। আপনাদের সঙ্গে কি কথাবার্তা হয়েছিল? এই প্রশ্নও করা হলে তিনি সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বলেছেন, তাকে (বেগম জিয়াকে) সান্ত¡না দেয়ার জন্য গিয়েছিলেন। খোকার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়বস্তুর বিষয়ে কিংবা রাজনৈতিক বিষয়ে কোন আলোচনা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা সেই বিষয়গুলো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মঙ্গলবার ছিল রিমান্ডের ষষ্ঠতম দিন। এরই মধ্যে মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে তার। তিনি জানতে চেয়েছেন, মুক্তি পেলে যারা তার সঙ্গে ছিলেন আবারও তার সঙ্গে থাকবেন কিনা? তার রাজনীতি কি শেষ হয়ে যাবে কিনা? রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চলমান রাজনীতির বিষয়ে নানা তথ্য জানতে পেয়ে তা খতিয়ে দেখছে ডিবি।
×