ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ কোথায় চলেছি আমরা?

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৪ মার্চ ২০১৫

সিডনির মেলব্যাগ ॥ কোথায় চলেছি আমরা?

একের পর এক ঘটনা দুর্ঘটনা আর বেসামাল পরিস্থিতিতে বিচলিত বাঙালী সত্যি দিশেহারা। এককালের সমাজতান্ত্রিক নামে পরিচিত বাম নেতা মান্নার অডিও টেপ এখন প্রবাসেও বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র বা অপকৌশল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। মুুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রগতিবিরোধী জামায়াত বিএনপি বহুকাল ধরে তা করে আসছে। তাদের পূর্বসূরিরাও কোনকালে পিছিয়ে ছিল না। ইনকিলাব, সংগ্রাম বা বাঁশের কেল্লার আগে আমরা হক কথা মিল্লাতে দিনকালের আস্ফালন দেখেছি। গণকণ্ঠ নামের পত্রিকাটিও একদা বঙ্গবন্ধুবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, এগুলোর একটিও টেকেনি। টেকা না টেকা বড় কথা না বিষয় হলো কারা এ জাতীয় কাজ করত বা কাদের মদদ থাকত তা বুঝতে কোন অসুবিধে ছিল না। আমাদের সমাজে আওয়ামী বিরোধিতার নামে স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে লাশ ফেলার নীরব ও প্রকাশ্য হুমকি চলে আসছে। যে সব মিডিয়ার কথা বললাম, সেগুলো তখন নিজেদের পরিচয় বা চেহারা তুলে ধরলেও এখন কৌশলী হয়ে অন্য নামে ভিন্ন চেহারায় অপকর্ম ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। আগের মতো রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী নামে এদের শনাক্ত করা যায় না। এরা এখন জোব্বা ছেড়ে আলখেল্লা ছেড়ে বাঙালীর পোশাক ধারণ করেছে। বদলে যাওয়া এই সব মিডিয়াকে কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমরা সুশীল নামে সম্বোধন করি, সুশীল বা জাতীয় ছদ্মবেসে বড় হয়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অথচ পাকিস্তান চায় না জাতীয় একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছি আমরা। মান্না আসলে এদের শিকার। সমাজতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে বড় হয়ে ওঠা এই লোকটি আওয়ামী লীগার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে কেন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এমন ওজর আপত্তি বা খেদ জানানো বান্ধবরা এখন কি বলবেন? শেখ হাসিনা ধীরে ধীরে যে প্রাজ্ঞ ও ঝানু হয়ে উঠেছেন মান্না বাহিনীই তার বড় প্রমাণ। তিনি হয়ত বুঝে গিয়েছিলেন পদ পদবী পেলেও মান্নার রক্তে বইছে জাতীয়তাবাদী খায়েশ। একদিন না একদিন ঠিক ছোবল মারবে। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি মান্না নাটকের বড় সুফল শত্রু মিত্রের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়া। ঐ যে বলছিলাম আমরা এখনও পুরনো বৃত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি, জামায়াত রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী মানে দাড়িওয়ালা টুপিওয়ালা কিংবা ধর্মপ্রাণ মানুষদের চিহ্নিত করি। সেটা এখন ইতিহাস। মান্না এদের সুশীল প্রতিনিধি, যে কারণেই আজ অভিজিতের লাশ দেখতে হচ্ছে আমাদের। কারণ এরা খুন ও খুনীকে জায়েজ করার সংগ্রামে নেমেছেন, প্রতিদিন কোন না কোনভাবে খুনীদের পক্ষে সাফাই গাইলে শান্তি আসবে কিভাবে? দেশের ঘরে ঘরে অকল্যাণ আর জঙ্গীবাদের উস্কানিদাতা- এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে না তুললে অভিজিৎরা কখনও মুখ খুলতে পারবে না। মুক্তচিন্তা ও মতামত প্রকাশের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণা বা হঠকারিতা আগে দেখা যায়নি। ভাবতে বিস্ময় জাগে এই দেশে লালন ফকির ও বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন। এদেশে পঁচাত্তর থেকে আজ অবধি যতগুলো রাজনৈতিক ও আদর্শিক খুন হয়েছে জাতীয়তাবাদীরা হয় নেপথ্যে থেকেছে নয় তো নীরব থেকে মদদ দিয়েছে। শহীদ মিনার বইমেলা সংস্কৃতি যখন আগ্রাসন ও রক্তের শিকার তখনও বিএনপি নীরব। এদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এ দেশের পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত করে যে কালো অধ্যায়ের সূচনা করেন আজ তার পূর্ণ প্রকাশ দেখছি আমরা। হুমায়ুন আজাদের পর অভিজিৎ, অভিজিতের পর নতুন কেউ, আমেরিকা লন্ডন সিডনি কোথাও কেউ নিরাপদ না। বিপদ আরও প্রকট এইভাবে এরপরও মধ্যবিত্ত ধর্মান্ধদের দিকে আগুল তুলবে না। ভয়ে অথবা বিশ্বাসে বুঁদ হয়ে চলবে, ‘দু’চারজন বাজে লোক এগুলো করছে’ যতদিন আমরা সমস্যার গভীরে না যাব, জামায়াত বিএনপির সুশীলদের চিহ্নিত করতে না পারব, মাতম হবে মানুষ মরবে কিন্তু কান্না থামবে না। মান্নারা যে কান্না চেয়েছিল আজ তার ভয়াবহ রূপ দেখলাম রাজপথে নিহত ব্লগার ও আহত স্ত্রীর চেহারায়। এই মৃত লেখক বা প্রবাসী প্রমাণ করেছেন শান্তি বা কল্যাণের জন্য জঙ্গীবাদ নির্মূলের কোন বিকল্প নেই। মুক্তচিন্তাহীন অন্ধ দেশ না চাইলে এর বিহিত প্রয়োজন, সকালের সিডনি মর্নিং হেরাল্ডও জানান দিয়েছে বাংলাদেশে উদারতার জায়গা নেই আর। কোথায় চলেছি আমরা? [email protected]
×