ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয়পুরহাট সুগার মিল

বিষাক্ত বর্জ্যে ॥ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩ মার্চ ২০১৫

বিষাক্ত বর্জ্যে ॥ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২ মার্চ ॥ উজানে জয়পুরহাট সুগার মিলের বিষাক্ত বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় নওগাঁয় ছোট যমুনা নদীর লাখ লাখ টাকার মাছ নিধনসহ ধ্বংস হয়ে গেছে নদীর সব ধরনের জলজীববৈচিত্র্য। এতে নদীর ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি বিষাক্ত কালো হয়ে গেছে এবং পানি দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। ছোট যমুনা নদীসহ আশপাশের নদীসংযুক্ত বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ের প্রাণিকুল উজাড় হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রাণী সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম পানি সঙ্কটে। জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে প্রতি বছরই এই সময় জয়পুরহাট সুগার মিল কর্তৃপক্ষের ছেড়ে দেয়া বর্জ্যে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর প্রতিকারে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন ও জেলা প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্টরা কর্ণপাত করেননি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় জয়পুরহাট সুগার মিল কর্তৃপক্ষ মিলে ব্যবহৃত রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানি সংরক্ষিত ক্যানেল থেকে নদীতে ছেড়ে দিলে হঠাৎ বৃদ্ধি পায় ছোট যমুনা নদীর পানি। নদীতে ভেসে আসতে থাকে বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য। এতে নদীতে দ্রুত এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়লে কালো হয়ে যায় নদীর পানি। পরদিন শনিবার সকাল থেকেই পানিতে ভেসে উঠতে থাকে মরা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। নদীপাড়ের বসবাসরত হাজার হাজার মানুষের পানির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। নদীপাড়ের রজনী পরিবারের মানুষরাও তাদের কাপড়-চোপড় কাচতে পারছেন না রঙিন পানিতে। গোসল করাসহ বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের কাজকর্ম। এমনকি ফসলেও তারা দিতে পারছেন না নদীর পানি। জেলে সম্প্রদায়ের নেতা বয়েন উদ্দীন জানান, সুগার মিল কর্তৃপক্ষ নদীতে বর্জ্য ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে নদীর ছোট-বড় সব ধরনের মাছ। ফলে এবার আর মাছ ধরে জীবিকা চালানো সম্ভব হবে না তাদের। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে আর এ অবস্থার অবসান ঘটবে না। এদিকে এভাবে বর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষণ করায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে নওগাঁর সচেতন মহলে। ইতোপূর্বে তারা নদী দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশসহ লিগ্যাল নোটিস জারি করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। জয়পুরহাট সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, মিলের বর্জ্যগুলো নিজস্ব খালে দীর্ঘদিন রেখে শুধু পানিগুলো নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ফেলে দেয়া পানিগুলো বিষাক্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি। নওগাঁ জেলা প্রশাসক এনামুল হক জানান, গত বছর এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর সব প্রকার জীব ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় সত্যতা পাওয়া ও অভিযোগের ভিত্তিতে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সুগার মিলের কর্তৃপক্ষ পরিশোধন না করে বর্জ্য ফেলবে না বলে জানালেও এ বছর আবার তাদের মিলের বর্জ্য নদীতে ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা মৎস্য বিভাগ দিয়ে তিনটি স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি প্রমাণিত হয় সুগার মিলের বর্জ্য তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাঙ্গাইলের বন রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাল-গজারী ও সামাজিক বনাঞ্চল রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় সখীপুর উপজেলার বনাঞ্চলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা করাতকলে সোমবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ও পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা করাতকলে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে ১১টি করাতকলের যন্ত্রাংশ, বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ ও কাঠ জব্দ করা হয়। এ সময় বন বিভাগ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন জানান, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাল-গজারীর বন রক্ষায় পর্যায়ক্রমে মধুপুর, ঘাটাইল ও মির্জাপুরের বনাঞ্চলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
×