ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের প্রথম মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে বিদেশী ক্লাবে খেলার ইতিহাস

মালদ্বীপ লীগে ফুটবলার সাবিনা খাতুন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩ মার্চ ২০১৫

মালদ্বীপ লীগে ফুটবলার সাবিনা খাতুন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক সাবিনা মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তাব পেয়েছেন। তিনি মালদ্বীপের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন ৪ মার্চ। মালদ্বীপের এ ক্লাবভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগিতাটি ১৪ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় বাফুফে কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সন্দেহতীতভাবে সাবিনার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশী কোন ক্লাবের হয়ে খেলা হবে প্রথম ঘটনা। সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তা হচ্ছে এক অনন্য অর্জন বা কৃতিত্ব। বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলাদের মধ্যে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। ১৯৭৫ সালে আবাহনীর হয়ে খেলার সময় হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনের হয়ে হংকংয়ে খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে শেখ জামাল ধানম-িতে খেলার সময় মামুনুল ইসলাম ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইঝিভিত্তিক ফুটবল লীগ ‘ইন্ডিয়ান সুপার লীগ’-এর দল এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার হয়ে সেখানে খেলতে যান। সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা খাতুন। সঙ্গীতে যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন, তেমনি বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সাবিনা খাতুন। সর্বশেষ খেলেছেন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে। সাবেক ব্যবসায়ী বাবা ও গৃহিণী মায়ের পাঁচ মেয়ের একজন সাবিনা। বিজেএমসিতে চাকরি করেন ২০১১ সাল থেকে। যদিও ওখানে তিনি চাকরি করেন এ্যাথলেট হিসেবে। তারপরও তাঁর ফুটবলই বেশি ভাল লাগে খেলতে। ২০০৯ সালে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন তখন শুরু করেন ফুটবল খেলা। সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল কোচ আকবর স্যারের মাধ্যমেই সাবিনার ফুটবলের হাতেখড়ি। স্কুল পর্যায়ে আন্তঃস্কুল ও আন্তঃজেলা পর্যায়ে খেলেন। ওই বছরই ভাল খেলার সুবাদে ডাক পান জাতীয় দলে। সাতক্ষীরা থেকে তিনিসহ ডাক পান ছয়জন। চূড়ান্ত বাছাইয়ে কেবল টিকে যান সাবিনাই। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে টানা খেলছেন। সাবিনার পরিচিতি মূলত স্ট্রাইকার হিসেবেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে- শুরুতে তিনি ছিলেন মিডফিল্ডার! কোচদের পরামর্শে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলতে শুরু করেন। এ পজিশনে খেলে তিনি যে কোন ভুল করেননি, তার প্রমাণ ২০১০ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে পুরস্কার পাওয়া। ওই আসরে গ্রুপ পর্যায়ে শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সাবিনা করেন এক গোল। ওই গোলটিই এখন পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ারসেরা গোল বলে মনে করেন তিনি। ব্রাজিলের মার্তাকে আদর্শ মানা সাবিনা অবশ্য নিজের অভিষেক আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১০ এসএ গেমসে খেলেন মিডফিল্ডার-স্ট্রাইকার উভয় পজিশনেই। ইন্টারমিডিয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে পড়া সাবিনা সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পড়তে চান। সেই সঙ্গে খেলার পাশাপাশি করে যেতে চান চাকরিটাও। ভবিষ্যত লক্ষ্য? সবাই যেমন মেসিকে এক নামে চেনে, তেমনি সাবিনার স্বপ্ন আজ থেকে পাঁচ বছর পর তাকেও দেশের সবাই চিনবে এক নামে। ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী এবং বাইকে চড়া ও গান গাওয়ার গুণের অধিকারী সাবিনা কি পারবেন মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবের হয়ে ভাল খেলে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের মুখ উজ্জ্বল করতে? যদি পারেন, তাহলে আগামীতে যে সাবিনার মতো অম্রাচিং মারমা, সানজিদা খাতুন, লিপি আক্তারদের বেলাতেও বিদেশী ক্লাবগুলোতে খেলার জন্য প্রস্তাব আসবে, বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য এক অপার-উজ্জ্বল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে, সেটা না বোঝার কারণ নিশ্চয়ই নেই!
×